রাজনৈতিক সভা করার স্থান। সব পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীর পছন্দের ভেন্যু কোথায় হতে পারে? রাজনৈতিক ঐতিহাসিকতার দিক বিবেচনা করা যাক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সব সময়ের জন্যই শ্রেষ্ঠ একটি জায়গা। একজন রাজনীতিক হিসেবে যে কেউই এই স্থানে আসতে পেরে গর্বিত মনে করে। সেখানে কেন দেশের নামধারী বড় দল বিএনপি সমাবেশ করতে চায় না? আমি বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছি, দলটির কোনো না কোনো কু-মতলব আছে।
Advertisement
নাশকতা করার প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে তাদের সাম্প্রতিক সময়ের সমাবেশগুলো দেখার সুযোগ আছে। তারা বলতে চাইছে, তারা বেশ জনপ্রিয় দল হয়ে উঠছে। এভাবে খানিকটা জনআস্থা অর্জনের পরই তারা নতুন বছর থেকে পুনরায় মানুষ মারা, অগ্নিসংযোগের রাজনীতিতে চলে যাবে, তা ধরেই নেওয়া যায়। কৌশল নিয়েছে তারা।
সমাবেশে অভিনব কায়দায় শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগের মাধ্যমে লোক ভেড়াচ্ছে তারা। এটা তো সত্যি, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধশক্তির একটা অংশ তো রয়েছে দেশে। তাদের মিছিলে জামায়াত-শিবিরের অংশগ্রহণ রয়েছে, রয়েছে কালো টাকায় ভর করে কথিত কর্মীদের অংশগ্রহণও। এই উদ্যোগের আসল উদ্যোক্তা বিএনপি, তাও বলা যাবে না। এর পেছনে দেশের সুশীলধারী ব্যক্তিদের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে। পিকনিক আদলে তাদের এই সমাবেশের উপজীব্য খুঁজতে চাইলে, ধরতে হবে যে, বিএনপি দেশের মানুষকে বোঝাতে চাইছে, ক্রমশ তারা শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
এদিকে বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশটি কেন নয়াপল্টনে করতে চায়? এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষেরও। কেউ বলছে, দণ্ডিত আসামি খালেদা জিয়া ওই সভায় যোগ দিতে চান। কেউ বলছে, ছোট্ট জায়গার মধ্যে বড় ধরনের জনসমাগম করে তারা সভা শেষে বিশৃঙ্খলা করতে চায়। খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ প্রশ্নে বলা যায়, দেশের বিচার বিভাগ রয়েছে। আইন অনুযায়ী তিনি ওই সভায় যেতে পারবেন না। খালেদা জিয়া নিজেও এমন কোনো নেতা নন যে তার অংশগ্রহণে বাংলাদেশে তা উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের প্রভাব রাখতে পারবে।
Advertisement
অন্যদিকে কোন ধরনের নাশকতায় তারা জড়ালে বাংলাদেশের মানুষ বসে থাকবে না। এমনিতেই করোনা প্রভাবের পর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে সারাবিশ্ব মোটেই ভালো নেই। বিএনপি যদি সত্যিই রাজনৈতিক দল হতো, তারা সরকার দলকে অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদান করে নিজেদের প্রমাণ করতে পারত। তারা আসলে ফলত রাজনৈতিক অপশক্তি।
ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ডাকার মধ্য দিয়ে বিএনপি কী নিজেদের রাজনীতির ইতিবাচক তাঁবুতে জায়গা করে নিতে পেরেছে? সাংস্কৃতিক দিক বিবেচনা করলে, তাদের বোধদয়ের ঘাটতি আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো আসর চলছে। সেদিকটা নিয়ে চিন্তা করলেও বোঝা যায়, এরা মানুষের সাংস্কৃতিক মন সম্পর্কে অবগত নন। তারা বন্দুকের নলের ওপর ভর করে পেছনের রাস্তা দিয়েই ক্ষমতা দখল করে কথিত জাতীয়তাবাদী দল একদিন গঠন করেছিল। তাদের মনে আবেগ, দেশপ্রেম স্থান নেয় না, কৃষ্টি জায়গা পায় না। এই ১০ ডিসেম্বর থেকেই ১৯৭১ সালে একটি শ্রেণি দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার মিশনে নেমেছিল।
১৪ ডিসেম্বর আমাদের বুদ্ধিজীবী দিবস। আমি মনে করি, দেশের বিদগ্ধশ্রেণিকে পুনরায় সতর্ক থাকতে হবে। ওরা আঘাত আনতে পারে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বলতে পারি, আমরা পুনরায় এই রাজনৈতিক অপশক্তিকে দমন করে আরও একবার বিজয়ের উৎসব করব। ১৬ ডিসেম্বর, সকাল-বিকেল করে লাল-সবুজের পথে প্রান্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষগুলো বিজয়ের সুরে ধ্বনিত হয়েই শাশ্বত পথচলায় থাকবে। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ডিসেম্বর- এর মধ্যে একাত্তরের পরাজিতশক্তি তথা এদের উগ্রবাদ দমনে দেশের মানুষগুলো একট্টাও থাকবে বলে বিশ্বাস করি।
লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
Advertisement
এইচআর/ফারুক/এএসএম