অনলাইন দুনিয়ায় মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের সময়টা এখন যারা পার করছেন; তাদের সবার কাছে প্রিয় শিক্ষক তিনি। পড়াতেন শ্রেণিকক্ষে, তবে করোনার সময়টাতে সেই পড়াশোনাকেই ফেসবুক মাধ্যমে এনে সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এই শিক্ষক। তিনি ফাহাদ হোসাইন। তার এই পথচলা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সফলতার গল্প তুলে ধরেছেন আবিদ আহনাফ-
Advertisement
সেদিন খুব দূরের কথা নয়, যখন ইন্টারনেটকে সময় অপচয় করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবেই বিবেচনা করতেন আমাদের বাবা-মায়েরা। তবে ২০২০ সালে যখন করোনা মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়; তখনই প্রয়োজনের তাগিদে জনপ্রিয় হতে শুরু করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।
ভালো কনটেন্ট ও সহজ-সরল ব্যাখ্যা না পাওয়ায় ক্রমেই কমতে থাকে অনলাইনের জনপ্রিয়তা। ঠিক তখনই ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ফাহাদ টিউটোরিয়াল নিয়ে দৃশ্যপটে আসেন বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ফাহাদ হোসাইন।
ফাহাদ বললেন, ‘করোনার সময় ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবে এসএসসি শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের চমকপ্রদ সমাধান ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কঠিন সমস্যার সহজ ও সাবলীল ব্যাখ্যা দিতেই আমাদের কাজ শুরু। তারপর থেকে আরও অনেক কনটেন্ট যুক্ত হয়েছে একের পর এক।’
Advertisement
ফাহাদ হোসাইনের স্কুল এবং কলেজ শেষ করেছেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আদমজী নগর এলাকায়। এরপর দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক হেলথ বিভাগে মাস্টার্স করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেন।
এখন দেশের জনপ্রিয় শিক্ষক হলেও ফাহাদ হোসাইন পেশা হিসেবে শিক্ষকতা করার চিন্তা করেননি কখনো। আগ্রহ ছিল এনজিও সেক্টরে। তবে এইচএসসির পর থেকেই টিউশনি করানোর কারণে এক ধরনের ভালো লাগা সৃষ্টি হয় শিক্ষাদানের প্রতি।
বর্তমানে ফাহাদ হোসাইনের শিক্ষার্থী সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি। প্রতিদিন এর উপকারভোগী লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। ফাহাদের প্রতিষ্ঠান ‘আমাদের স্কুল’ এবং ‘ফাহাদ টিউটোরিয়াল’ থেকে লাইভ এবং রেকর্ডেড ভিডিওর মাধ্যমে ক্লাসগুলো করা যায়।
এখানে এএসসি ও এইচএসসিসহ বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া হয় নানা পরামর্শ, বিভিন্ন বিষয়ের সহজ সমাধান। আমাদের স্কুল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা অনলাইনে শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও সহযোগিতা বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের দিয়ে থাকে।
Advertisement
২০১৭ সালে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথমে এডুটিউব নামের একটি চ্যানেলের সঙ্গে কাজ করেছেন। এক সময় চিন্তা করলেন নিজের মতো করে কিছু করার সময় ও সুযোগ হয়েছে। তারপর আমাদের স্কুলের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল চালু করা হয়। শুরুতে ভ্রমণকালে আশপাশের মনোরম দৃশ্য ভিডিও করে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওটি বেশ সাড়া পায়।
তিনি অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার কথা ভাবছিলেন। ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর এসএসসির কেমিস্ট্রির লিমিটিং বিক্রিয়কের একটি ভিডিও আপলোড করেন। প্রথম আপলোড করা ভিডিওটি আশা জাগায়। তারপর থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিডিও আপলোড করা শুরু করেন। চারুলতা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে একটি কোচিং সেন্টার ছিল। সেখানে ভিডিওগুলো তৈরি করে আপলোড করতেন।
ফাহাদ হোসাইন বলেন, ‘বর্তমান প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীতে সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করে পড়ালেখার পাশাপাশি যে কোনো দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে জীবনযুদ্ধে। আমার শিক্ষার্থীদের একটি সিংহভাগ অংশ যেহেতু ফেসবুক ব্যবহার করছেন। তাই আমি চেষ্টা করছি শহর থেকে একদম প্রান্তিক অঞ্চলেও এই ফেসবুক ব্যবহার করে আমার কনটেন্ট সবার কাছে পৌঁছে দিতে।’
কেএসকে/এসইউ/এমএস