আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের মধ্যে শীর্ষ ধনী শহীদ খান

যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়নিয়ার বা শত কোটি ডলারের মালিক এমন লোকের অভাব নেই। কিন্তু মুসলিম বিলিয়নিয়ারের অভাব রয়েছে। দেশটিতে মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন মুসলিম বিলিয়নিয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে শীর্ষ ধনী যিনি, সেই শহীদ খানের জন্ম পাকিস্তানে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে পকেটে ৫০০ ডলার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু আজ নিজ যোগ্যতায় হয়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের মধ্যে শীর্ষ ধনী।

Advertisement

শহীদ খানের এই অর্থনৈতিক সাফল্যের মূলে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ক্লাব জ্যাকসনভাইল জাগুয়ার্স এবং ইংলিশ ক্লাব ফুলহামেরও মালিক তিনি।

ফোর্বসের হিসাবে, এই মুহূর্তে ৭২ বছর বয়সী শহীদ খানের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার।

1) Shahid Kahn, born to a middle-class family in Pakistan, always dreamed of immigrating to the United States.At the age of 16, he turned that dream into reality.Khan, after being accepted to the University of Illinois, boarded a plane to America with $500 to his name. pic.twitter.com/SvGFKpTGF4

Advertisement

— Joe Pompliano (@JoePompliano) October 21, 2020

প্রাথমিক জীবনপুরো নাম শহীদ রফিক খান। ১৯৫০ সালের ১৮ জুলাই লাহোরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তার। মা ছিলেন গণিতের শিক্ষক, বাবা ছোটখাটো একটা দোকান চালাতেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে পকেটে ৫০০ মার্কিন ডলার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান শহীদ। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস আরবানা-চ্যাম্পেইনে। ওই সময় খরচ জোগাড়ের জন্য ঘণ্টায় ১ দশমিক ২০ ডলার বেতনে থালাবাটি ধোয়ার কাজ করতে হয়েছে কিশোর শহীদকে। ১৯৭১ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি পাস করেন তিনি।

আরও পড়ুন>> স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াই বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী আদানিআরও পড়ুন>> ভারতের দুই শীর্ষ ধনীর স্ত্রীদের খুঁটিনাটি

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফ্লেক্স-এন-গেটে চাকরি নেন শহীদ। গ্রাজুয়েশন শেষে একই কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পান।

Advertisement

4) In 1978, Khan left Flex-N-Gate with a $50k SBA loan and $16k in savings to start Bumper Works, a manufacturer of car bumpers.The craziest part?The business took off, handing Khan enough cash to return to his former company within two years — this time as the owner. pic.twitter.com/Hohf3SYnYw

— Joe Pompliano (@JoePompliano) October 21, 2020

১৯৮০ সালে নিয়োগদাতার কাছ থেকে গোটা কোম্পানিই কিনে নেন শহীদ খান। এরপর গাড়ির বাম্পার ব্যবসা বাড়াতে মনযোগী হন।

সাফল্যের পথে যাত্রাশহীদ খানের সাফল্য এসেছে মূলক ট্রাকের ওয়ান-পিস বাম্পার বিক্রি করে। ১৯৮৪ সালে তিনি টয়োটা পিকআপের জন্য অল্প কিছু বাম্পার সরবরাহ শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টয়োটার সব পিকআপ এবং পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সব ধরনের গাড়ির একমাত্র বাম্পার সরবরাহকারী হয়ে ওঠে ফ্লেক্স-এন-গেট।

আরও পড়ুন>> টিকটক দিয়ে বিশ্ব মাত, ৩৮ বছরেই শীর্ষ ধনীর কাতারেআরও পড়ুন>> শ্রমিক থেকে পানি ব্যবসায়ী, আজ চীনের শীর্ষ ধনী

২০১০ সালে কোম্পানিটির বিক্রি ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। এর পরের ১০ বছরে বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮৯ কোটি ডলারে।

আজ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও চীন, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, মেক্সিকো ও কানাডায় ফ্লেক্স-এন-গেটের মোট ৬৯টি কারখানা রয়েছে। এগুলোতে কাজ করছেন প্রায় ২৬ হাজার কর্মী।

২০২০ সালে ফোর্বসের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বেসরকারি কোম্পানির তালিকায় ৪৬তম হয়েছিল ফ্লেক্স-এন-গেট।

ক্রীড়া জগতে পদার্পণ

২০১২ সালে মার্কিন ফুটবল ক্লাব জ্যাকসনভাইল জাগুয়ার্স কিনে কেন শহীদ খান। ২০১৩ সালে কেনেন জনপ্রিয় ইংলিশ ক্লাব ফুলহামও।

আরও পড়ুন>> বাবার ক্যানসারে ভার্সিটি ছেড়েছিলেন, আজ সুইজারল্যান্ডের শীর্ষ ধনীআরও পড়ুন>> অনলাইনে বইবিক্রেতা থেকে শত কোটির মালিক

শহীদ ও তার ছেলে টনি খান ২০১৯ সালে ‘অল এলিট রেসলিং’ নামে একটি রেসলিং কোম্পানি চালু করেন। এটিকে ডব্লিউডব্লিই’র অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

ব্ল্যাক নিউজ চ্যানেলের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকও শহীদ খান। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয় ক্যাবল চ্যানেলটি।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৬৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অ্যান কার্লসনের (বর্তমান নাম অ্যান কার্লসন খান) সঙ্গে পরিচয় হয় শহীদ খানের। ১০ বছর প্রেম করার পর ১৯৭৭ সালে বিয়ে করেন তারা। তাদের সংসারে দুই সন্তান- মেয়ে শানা খান ও ছেলে টনি খান। ১৯৯১ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পান শহীদ।

আরও পড়ুন>> ব্রাজিলের শীর্ষ ধনী কারা, কত সম্পদের মালিক?আরও পড়ুন>> আর্জেন্টিনার শীর্ষ ধনীদের মধ্যে মেসি নেই কেন?

সম্পত্তিফ্লোরিডার ন্যাপলসে বিশাল একটি বাড়ি রয়েছে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এ ধনকুবেরের। শিকাগোর গোল্ড কোস্টে রয়েছে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। এছাড়া কিসমত নামে একটি সুপার ইয়টের মালিকও তিনি।

অর্জন

২০১২ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন শহীদ খান। এতে তাকে ‘আমেরিকান স্বপ্নের মুখচ্ছবি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

২০২১ সালে ফোর্বসের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে ৯৪তম ও বিশ্বের মধ্যে ২৯১তম হয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে ১৫১তম এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সর্বোচ্চ ধনী শহীদ খান।

আরও পড়ুন>> রোনালদোর চেয়ে ৯ গুণ ধনী পর্তুগালের যে পরিবারআরও পড়ুন>> বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারের শীর্ষ ধনী কে?

সূত্র: ফোর্বস, উইকিপিডিয়াকেএএ/