ফেনীর পরশুরামে বিএসএফের হাতে নিহত কৃষক মোহাম্মদ মেজবাহারের মরদেহ ১৭ দিন পর বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় পুলিশ। পুলিশ মেজবাহারের মরদেহ গ্রহণ করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে বিলোনিয়া ইমিগ্রেশনে চেকপোস্টে সীমান্তবর্তী বিলোনিয়া স্থলবন্দরের চেকপোস্ট দিয়ে ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের কাছে মেজবাহারের মরদেহ হস্তান্তর করে।
এ সময় বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন খেজুরিয়া কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার ওমর ফারুক ও পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম।
বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ২০০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সারসীমা কোম্পানি কমান্ডার সত্যিয়া পাল সিং ও ভারতীয় বিলোনিয়া থানার ওসি পরিতোস দাস।
Advertisement
এরআগে গত ১৩ নভেম্বর উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামে সীমান্তবর্তী এলাকায় ধান কাটতে গেলে বিএসএফ কৃষক মোহাম্মদ মেজবাহারকে ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন পর স্থানীয়রা মেজবাহারের মরদেহ ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের একশ গজ ভেতরে পড়ে থাকতে দেখে বিজিবিকে খবর দেন।
১৬ নভেম্বর দিনগত রাত ৩টায় মরদেহ নিয়ে যায় বিএসএফ। বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে মরদেহ নিয়ে যান তারা।
ওই মরদেহ পরশুরাম উপজেলার উত্তর গুথুমা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ মেজবাহার (৪৭) বলে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম ও স্থানীয়রা। তিনি পরশুরাম পৌর এলাকার উত্তর গুথুমা গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে এবং পেশায় কৃষক ছিলেন।
মেজবাহারের মরদেহ হস্তান্তরের সময় পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম, একমাত্র ছোট বোন পারুল আক্তারসহ চার মেয়ে, পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল ও স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন।
Advertisement
পরশুরামের মজুমদার হাট সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মনিরুজ্জামান জানান, বিজিবি-বিএসএফ ও পুলিশের উপস্থিতিতে আইনগত প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত মেজবাহারের স্ত্রী মরিয়ম বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামীর মরদেহ চেনার উপায় নেই, অনেকটা পচে-গলে গেছে। এ ঘটনায় তিনি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, বিএসএফ তার স্বামীকে বাংলাদেশ থেকে ধরে নিয়ে বিনা অপরাধে হত্যা করেছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন জানান, গত ১৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোহাম্মদ মেজবাহার বাঁশপদুয়া গ্রামের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধান কাটতে যান। এ সময় বিএসএফের সদস্যরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। ১৭ দিন পর ওই মরদেহ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। তবে মরদেহ শনাক্তের কোনো সুযোগ নেই, পচে-গলে গেছে।
ভারতের বিলোনিয়া থানার পরিদর্শক পরিতোস দাস জানান, নিহত মেজবাহারের শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো তাদের হাতে আসেনি। অফিসিয়ালভাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বাংলাদেশের পুলিশকে দেওয়া হবে।
পরশুরাম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, ফেরত পাওয়ার পর মরদেহ ময়নাতদন্তের ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসআর/এএসএম