ভ্রমণ

টোকিওতে প্রথমবার গেলে যা যা দেখবেন

জাপান ভ্রমণে গেলে টোকিও যেতে ভোলেন না কেউই! সেখানকার রাজধানী টোকিও ভ্রমণ আপনার জন্য হতে পারে সত্যিই আকর্ষণীয়। জমকালো শপিং কমপ্লেক্স, চমকপ্রদ রেস্টুরেন্ট, বিশ্ববিখ্যাত ভ্রমণ স্পটসমূহ দিয়ে পরিপূর্ণ টোকিও শহর।

Advertisement

দেখা ও উপভোগের মতো এতো বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ উপাদান টোকিওতে আছে, যা রীতিমতো বিস্ময়কর। জাপানবাসীর গর্বের টোকিও শহরে প্রথমবার গেলে চমৎকার কিছু জায়গা ঘুরে আসতে ভুলবেন না। জেনে নিন কোন কোন স্থানগুলো-

শিনজুকু জিও-এন ন্যাশনাল গার্ডেন

অনেকগুলো চেরি গাছ দ্বারা বেষ্টিত শিনজুকু জিও-এন ন্যাশনাল গার্ডেন টোকিও সহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানগুলোর একটি। সপ্তদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত জায়গাটি এদো সাম্রাজ্যের বিখ্যাত নাইতো পরিবারে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো।

Advertisement

বাগানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালে ও এটি টোকিও শহরের বিশেষ এক মুক্তাখণ্ড। এটি হচ্ছে তিনটি বাগানের এক চমকপ্রদ সমন্বয় যেগুলো হলো ইংলিশ ল্যান্ডস্কেপ, ফ্রেঞ্চ ফরমাল ও জাপানিজ ট্র্যাডিশন।

আপনি যদি সত্যিই প্রকৃতিপ্রেমী হন তাহলে এটি হচ্ছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আরামে সময় কাটানোর সেরা জায়গা।

বাগানের মধ্যে আছে একটি আকর্ষণীয় গ্রিনহাউস ও নির্মল ও বিশুদ্ধ একটি পুকুর যা জায়গাটিকে আরেকটু আকর্ষণীয় বানিয়েছে।

এই এলাকায় বেড়ানোর সেরা সময় হলো শরৎকাল, যখন চেরি গাছগুলোতে ফুল ফুটে ও সেখানে এক জাদুকরী পরিবেশ তৈরি হয়।

Advertisement

শিবুয়া ক্রসিং শপিং স্পট

শপিং করতে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য শিবুয়া ক্রসিং হচ্ছে কেনাকাটার জন্য টোকিওর অন্যতম সেরা জায়গা। শপিং কমপ্লেক্সের ছড়াছড়ি সেখানে। শিবুয়া হিকারি ও শিবুয়া ১০৯ এর মতো জায়গায় শপিং করতে গেলে পাওয়া যাবে প্রায় সবকিছুই।

একই সময় প্রায় ৩ হাজার মানুষ এই ক্রসিং অতিক্রম করতে পারেন, একে বিশ্বের ব্যস্ততম ক্রসিং হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে ২৮৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পর্যবেক্ষণ ডেস্ক থেকে আপনি এই নজরকাড়া ক্রসিংয়ের দৃশ্যাবলীতে নিজেকে মগ্ন করে রাখতে পারবেন।

শপিংয়ের ব্যস্ততা শেষে একটু প্রশান্তির জন্য যেতে পারেন ইয়োগি পার্কে যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিস্ময়ে পরিপূর্ণ। সন্ধ্যার দিকে নিয়ন রংয়ের ভবনগুলোর সৌন্দর্য ও চমৎকার সূর্যাস্ত উপভোগ করুন।

সেনসো-জি মন্দির

টোকিওর আসাকুসা জেলায় অবস্থিত সেনসো-জি মন্দির শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভগুলোর একটি। ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে সালে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে বৌদ্ধ দেবী কাননের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে। বিভিন্ন শতাব্দীতে মন্দিরটির অনেক সংস্কার করা হলেও এখনো এটির মৌলিকত্ব বজায় আছে যা এর উল্লেকযোগ্য দিক। এটির চতুর্দিকের রাস্তায় বিক্রেতাদেরকে বিভিন্ন জাপানি স্যুভেনির বিক্রি করতে দেখা যায়।

এমনকি মন্দিরের বাইরে কিছু গণক বা ভবিষ্যৎবক্তাদেরও দেখবেন যারা অর্থের বিনিময়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। মন্দিরটির প্রধান আকর্ষণ হলো ‘কামিনারিমন গেট’ যা আবার ‘থান্ডার গেট’ নামেও পরিচিত।

রাতে মন্দিরটি ঘুরে দেখতে ভুলবেন না, সেটি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে সম্পূর্ণ নতুন এক পৃথিবীর সঙ্গে।

হারুজুকু

দুটি বিখ্যাত জায়গা শিবুয়া ও শিনজুকুর সঙ্গে সংযুক্ত হারুজুকু হচ্ছে প্রথবার টোকিও ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণীয় স্থান।

জাপানের সংস্কৃতিকে জানার জন্য এটি একটি জনপ্রিয় জায়গা। টোকিওর প্রধান স্পটগুলোর প্রাণকেন্দ্র এটি।

শিবুয়ার মতো এটিও একটি বিখ্যাত শপিং প্লেস যেখানে আপনার প্রয়োজন অনুসারে সব ধরনের সরঞ্জামাদি পাবেন। এখানকার সবচেয়ে বেশি ঘুরে দেখা শপিং কমপ্লেক্সগুলো হলো তাকেশিতা স্ট্রিট ও হারাজুকু গার্লস।

টটি ক্যান্ডি ফ্যাক্টরিতে কিছু বর্ণিল কটন টফি কিনতে পারেন ও হারাজুকুতে প্রিয়জনকে নিয়ে চমৎকার সময় কাটাতে পারেন।

টোকিও স্কাইট্রি

টোকিও স্কাইট্রি থেকে দেখতে পাবেন টোকিও শহরের নজরকাড়া দৃশ্যাবলী। মিনাতো এলাকার সুমিদা জেলার একটু বাইরে এর অবস্থান। ২০১২ সালে স্থাপিত টোকিও স্কাইট্রি জাপানের দীর্ঘতম স্থাপত্য বিস্ময়।

২০১২ সালের আগে এর নাম ছিলো টোকিও টাওয়ার ও তখনো এটি জাপানের দীর্ঘতম কাঠামো ছিলো। শেষ পর্যন্ত টোকিও টাওয়ারকে ছাপিয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় টোকিও স্কাইট্রি। রকেটাকৃতির এই স্থাপনা থেকে উপভোগ করুন টোকিও শহরের রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, শপিং এরিয়া আর শহরের চোখধাঁধাঁনো আলোকরশ্মি।

সিলিন্ডার আকৃতির আরও কিছু পর্যবেক্ষণ স্থাপনা আছে যেগুলো থেকে যে কোনো জায়গার দৃশ্য দেখা যাবে। কাঁচের তৈরি চমৎকার ও রোমাঞ্চকর কিছু যাত্রাপথও তৈরি করা হয়েছে সারারাত ধরে হাঁটার জন্য।

রপঙ্গি

টোকিওর মিনাতো সিটিতে অবস্থিত রপঙ্গি হলো বেশকিছু দুর্দান্ত রেস্টুরেন্ট, বার, চমৎকার নাইট ক্লাব ও বিখ্যাত আর্ট মিউজিয়ামের প্রাণকেন্দ্র।

আপনি যদি উচ্চ আওয়াজের ডিস্ক জকিসহ একটি বিস্ময়কর নৈশজীবনের সন্ধান করে থাকেন তাহলে তাহলে আপনার জন্য তৈরি আছে রপঙ্গির অসংখ্য নাইট ক্লাব।

সেখান থেকে আপনি যাতে টোকিও শহরের দৃশ্যাবলী দেখতে পারেন সেজন্য তৈরি করা হয়েছে ২৫০ মিটার উঁচু একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।

মরি আর্ট মিউজিয়ামের একটি উপভোগ্য দিক হলো উঁচুমানের সমসাময়িক চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। এখানে আরও আছে চমকপ্রদ আশাই টিভি হেডকোয়াটার্স।

যেখানে প্রদর্শনী হয় বিশ্ববিখ্যাত জাপানি টিভি শো ‘ডোরেমন’এর। যখনই আপনি রপঙ্গিতে পৌঁছবেন তখনই আপনার জন্য অপেক্ষা করবে বিস্ময়কর অনেক কিছু।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক।

জেএমএস/জেআইএম