মতামত

আর্জেন্টিনার জয় এবং ‘একবাপে’র গল্প

এবারের বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে নক আউট পর্ব সবার আগে নিশ্চিত করলো ফ্রান্স।সত্যিই দারুণ খেলছে দলটি। তরুণ তুর্কি এমবাপে তো সেইরকম ফর্মে আছে। একটা টিম হিসেবেও দলটি অসাধারণ নৈপুণ্য দেখাচ্ছে। সেই হিসেবে এবারের বিশ্বকাপ শিরোপার অন্যতম দাবিদার তারাও।

Advertisement

অবশ্য আমরা তো রাজনীতির ময়দানের মতোই ফুটবলেও মোটামুটিভাবে দু'শিবিরে বিভক্ত। ব্রাজিল তাদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে। সামনে এখনও দুটো ম্যাচ বাকি আছে। আবার গতকাল রাতে আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিলো। ফলে নক আউট পর্বে উঠার দৌড়ে টিকে থাকলো বেশ ভালোভাবেই।

সে যাই হোক। আসল কথায় আসি এবার। গতকাল মধ্য রাতে আর্জেন্টিনার জয়ের পর মিছিল আর পটকা ফুটেছে ঢাকা নগরীসহ দেশের অনেক জায়গায়। অনেকের তাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে। আবার আর্জেন্টিনার যারা ভক্ত নন ( তারা ভক্ত নন এই কোটায়) তারা অযথাই বিরক্ত হয়েছেন। এসব বন্ধের দাবিও তুলেছেন অনেকে। কিন্তু ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ জয়ের পরে তার সমর্থকরা যখন একই কাজ করলো তখন কিন্তু তাদের এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি! এ যেন "যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা" প্রবাদের সারবত্তাই প্রমাণ করলো।

সম্ভবত এসব দেখে-শুনে এক চাচা মনে মনে ভয়ংকর ক্ষোভ পুষে রেখেছেন। তারই কিঞ্চিত বহিঃপ্রকাশ করলেন আজ বাসের ভেতরে। চাচার কথা শুনে বাসের ভেতরে হাসির রোল উঠে গেলো। হাসি-কান্না যেটাই হোক তা মারাত্মক বিষয়। কারণ এটাতে একজন সংক্রামিত হলে অন্য অনেকের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। গুরুগম্ভীর ব্যক্তিও হেসে ওঠেন। অথবা হু হু করে শিশুর মতো কেঁদে ওঠেন।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত পাশাপাশি বসে একটু উচ্চস্বরে গল্প করা দুই তরুণের কথার রেশ ধরে। গতকালের খেলা নিয়ে তারা খোশগল্পে মত্ত। সম্ভবত দুজনই আর্জেন্টিনা সাপোর্টার!

দুই তরুণের কথোপকথন এরকম- " আরেহ্ কাল যে খেলা হলো, মাম্মা! মেসি আসলেই যে বস তা আবারও প্রমাণিত হলো।""ঠিকই বলছিস।" "অন্যদিকে নেইমার ইনজুরিতে পইড়া গেছে। সে তো মনে হয় ১ম রাউন্ডে আর খেলতে পারবে না। "

" আমারও তাই মনে হচ্ছে" " নেইমার না থাকলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল তো অসম্ভব হয়ে পড়বে।" এ তো দেখি "চাচার কবর কোথায় আর চাচি কান্দে কোথায়" এর মতো বিষয়। এখনও প্রথম রাউন্ডই শেষ হলো না! অার এরা আছে ফাইনাল নিয়ে!

বস্তুত সকাল হলেও বাসে বেশ ভিড়। অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ বাসের মধ্যে এক চাচা খেঁকিয়ে উঠলেন। চাচার এমন খেঁকিয়ে ওঠা দেখে বাসে পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। কন্ডাক্টরও ভাড়া নেওয়া বাদ দিয়ে ক্ষণিকের জন্য থেমে গেল।

Advertisement

চাচা মনে হয় আসল কথা ছাড়ার আগে ক্ষেত্র তৈরি করে নিলেন৷ তারপর এটম বোমা ছোড়ার মতো শব্দবোমা ছাড়লেন ঐ দুই তরুণকে লক্ষ্য করে।

" তোমরা গেদাগুদা পোলাপাইন! কি কও এসব! রাখ তোমাদের মেসি, নেইমার। আর ঐ যে আছে একজন- ফর্সা, সুন্দর চেহারা! আসলে তো একডা মাকাল ফল! শুধু পেনাল্টি মাইরা গোল করে!"

আমি পাশ থেকে কইলাম, "চাচা ওর নাম রোনালদো, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো!"

চাচা কইলেন,, " তোমরা এই যে এতোসব প্লেয়াররে সাপোর্ট করো! কেন তোমাদের কি বিবেক বুদ্ধি কিছু নেই!"

আমি কইলাম,"চাচা, তাহলে আপনিই কন। কোন প্লেয়ার আর দলকে সাপোর্ট করা উচিত!"

চাচা কইলেন, "কোন দল সাপোর্ট করবা তা তোমাদের যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে, প্লেয়ার হিসেবে সাপোর্ট করতে কইলে আমি একবাক্যে কইবো - তোমরা এরকম হাজার বাপ ছাইড়া একমাত্র 'একবাপ'কে সাপোর্ট করো! মজা পাইবা!"

"একবাপ" কে সাপোর্ট করার পরামর্শ শুনে বাসে আবার পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। তারা কনফিউজড! তারা ভাবছে এ আবার কে? কোন প্লেয়ার আবার বাপ হইলো!

পাশ থেকে একজন বলে উঠলো, "চাচা উনি একবাপে না। এমবাপে!"

চাচা কইলেন, ওই হইলো। "একবাপে" হোক আর "এমবাপে" হোক। একেই সাপোর্ট করা উচিত! তোমাদের মান-ইজ্জত রক্ষা করতে পারলে একমাত্র হেই বেডাই করতে পারবো। অন্য বাপ সব ছাড়ো সময় থাকতে!"

এ কথা শুনে বাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। এদিকে বাইরে তাকিয়ে দেখি আমি আমার স্টপেজে পৌঁছে গেছি। চাচাকে সালাম দিয়ে তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে রিকসা নিয়ে গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম আর চাচার পরামর্শের কথা মনে করে নিজের অজান্তেই মনে মনে হাসতে থাকলাম।

লেখক: চিকিৎসক।

এইচআর/এমএস