সবুজ দুর্বাঘাসে পা ফেলতেই শিশির বিন্দুকণার পরশ বুলিয়ে দেয়। ঠিক তখনই অনুভূতির ভাষায় শব্দ জমাট হয় এ যেন শীতের আগমন। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস খ্যাত নারিকেলবাড়িয়ায় জলাশয়ে এ বার্তা নিয়ে এসেছে পরিযায়ী পাখিরা। বিকেল হতেই খুনসুটিতে মেতে উঠছে পরিযায়ী পাখির দল।
Advertisement
নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স এবং ক্রপ সায়েন্স বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হয় সেখানে। মানুষের খুব একটা আনাগোনা না থাকায় স্থানটি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাখিদের সংরক্ষণে এলাকাটিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। সর্বসাধারণের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত ছোট এক টুকরো ক্যাম্পাস। বড় একটি পুকুর। তার বিপরীত পাশে কচুরিপানায় ভরা ছোট একটি জলাশয়। সেখানে বসেছে পাখির মেলা। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। তাদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, জলকেলি আর খুনসুটিতে যেন মুখর পুরো অঙ্গন।
এ যেন এক টুকরো পাখির রাজ্য। কিছু পাখি ডুব সাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে, এ ডাল থেকে ও ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পুকুরে। আবার কিছু পাখি চক্রাকারে আকাশে ঘুরে এসে আবার নামছে জলাশয়ে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। এ যেন মুগ্ধতার আরেক রূপ। এসব পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে ছোট সরালি। এছাড়া আছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস।
Advertisement
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামে। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় পাখি আসে এর মধ্যে রাবির নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাস অন্যতম।
ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র জাবের বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারিকেলবাড়িয়া নামে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আছে বলে শুনেছিলাম। আজ এখানে এসে স্বচক্ষে তা দেখতে পেলাম। চারদিকে গাছপালায় ঘেরা নিরিবিলি এক খণ্ড জায়গা। এখানকার মূল আকর্ষণ শীতের পরিযায়ী পাখি। মূল ক্যাম্পাসে আগে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটলেও এখন তা একেবারেই নেই। পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো তৈরির করায় পাখিরা তাদের স্থান ত্যাগ করেছে। এখন তারা নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসে এসে বিচরণ করছে।
নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসের উপ-প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মো. হেমায়াতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই এখানকার জলাশয়ে শীত এলেই পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। শীতে হিমালয়ে প্রচুর তুষারপাত হয়। তাই পরিযায়ী পাখিরা নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় বংশ বৃদ্ধির জন্য আসে। মানুষের আনাগোনা কম থাকায় এখানে পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ ক্যাম্পাসের জায়গাটুকু অরক্ষিত অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। পাখি রক্ষায় জলাশয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তায় কাঁটাতার দিয়ে আটকে দিয়েছি। জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জলাশয়ে গোপনে একটি চক্র পাখি শিকার করতো, তাদের ধরে শাস্তির আওতায় এনেছি। পরিযায়ী পাখি রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ প্রয়োজন।
Advertisement
এ বিষয়ে শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গতকালই আমি বিষয়টি শুনেছি। এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছি সেখানে। অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে হলেও আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত করতে পারি। যাতে সেখানকার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি জনসমাগম বাড়ে। পাখিগুলো রক্ষায় আমরা পদক্ষেপ নেবো। আমি সেখানে যাবো।
এসজে/এমএস