দেশজুড়ে

দালাল ছাড়া কাজ হয় না নওগাঁর বিআরটিএ কার্যালয়ে

দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না নওগাঁ বিআরটিএ কার্যালয়ে। ফলে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। এতে দিনের পর দিন শত শত ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযান নিবন্ধন আটকে আছে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট বিআরটিএ নওগাঁ সার্কেল অফিসে মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তার সময়ে অফিসটি দুর্নীতি ও প্রকাশ্য ঘুস গ্রহণের আখড়ায় পরিণত হয়। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ায় দুর্নীতি-ঘুষ লেনদেন কিছুটা কমে আসে। এতে দালালদের দৌরাত্ম্যও কমে যায়।

২০২০ সালের ৮ এপ্রিল মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে ওই যোগদান করেন ফয়সাল হাসান। তিনি যোগদানের পরই সেখানে আবারও শুরু হয় প্রকাশ্য ঘুষ লেনদেন। এবছর ২৮ এপ্রিল নওগাঁ বিআরটিএতে সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আবারও যোগদান করেন মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। নতুন এডি হিসেবে যোগদানের সপ্তাহ না পেরোতেই অফিসটিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিণত করেন। দালাল ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেও তাদের অকৃতকার্য দেখিয়ে দিনের পর দিন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রতিটা আবেদনে কমপক্ষে চার হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেল নিবন্ধনে প্রতিটা ফাইলে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা উৎকোচ না পেলে ফাইলটি ছুঁয়েও দেখেন না এডি ও ইন্সপেক্টর। বিআরটির এসব অনিয়মে অসংখ্য দালাল সম্পৃক্ত থাকলেও এডি ও ইন্সপেক্টরের নির্ধারিত দালাল আব্দুল কুদ্দুস। অন্য সব দালালের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে ইন্সপেক্টরের হাতে তুলে দেন এ আব্দুল কুদ্দুস। দীর্ঘ বছর ধরে এডি ও ইন্সপেক্টরের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় নিজেকে বিআরটির কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন তিনি। সম্প্রতি শহরের থানার মোড় এলাকার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) গিয়ে দেখা যায়, প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নিচ্ছেন আব্দুল কুদ্দুস। ওই সময় তার পরিচয় এবং লাইসেন্স প্রতি খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে বিআরটিএর কর্মকর্তা পরিচয় দেন। পরে তিনি বলেন, হেড অফিস থেকে এখানকার প্রত্যেক লাইসেন্স আমি কনট্রাক্ট নিয়েছি। আমার মাধ্যমেই সব লাইসেন্স হয়। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রতি ৯ হাজার টাকা এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রতি ১২ হাজার টাকার প্যাকেজ রয়েছে। পরীক্ষা নিজে উপস্থিত থেকে দিতে হবে। তবে কিছু না পারলেও পাশ করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

Advertisement

গত ১৪ নভেম্বর নওগাঁ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) অপেশাদার মোটারসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে আসেন পরিতোষ কুমার। তার রোল নম্বর ২০৭। লিখিত, ভাইভা ও প্রাকটিক্যালে উত্তীর্ণ হওয়ার পর খাতায় কী লিখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। খাতায় কী প্রশ্ন ছিল বলতে পারবো না। ভাইভা বোর্ডে স্যাররা সব শিখিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ নামের এক দালালকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে সব ধাপে পাশ করেছি। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে সবকিছুই ওই দালাল তৈরি করে দিয়েছেন।

নওগাঁ সদর উপজেলার লোকমান আলী, আত্রাই উপজেলার পলাশ, পত্নীতলা উপজেলার রফিকুল, মহাদেবপুর উপজেলার তৌহিদসহ টিটিসিতে আসা একাধিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের সময় প্রথম ধাপে দালালকে এক হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। এরপর পরীক্ষার আগে আরও ৬-৮ হাজার টাকা নিয়েছেন। ঘুষ না দিলে দিনের পর দিন অফিস থেকে ঘুরানো হয়। পরীক্ষা দিলেও অফিসাররা পাশ দেন না। তাই বাধ্য হয়েই ঘুষ দিয়ে পাশ করতে হয়েছে।

মোটরযান পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ফয়সাল হাসান বলেন, কুদ্দুস নামে অফিসে কোনো স্টাফ নেই। অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলা নিষেধ। তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে বিআরটিএ নওগাঁ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (এডি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, অফিসে কোনো ধরনের ঘুসের লেনদেন হয় না। দালালমুক্তভাবে কাজ করা হয় বলে জানান তিনি।

Advertisement

আব্বাস আলী/আরএইচ/এএসএম