সুইজারল্যান্ডকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম শান্তির দেশ। আল্পস পর্বতমালা সংলগ্ন দেশটির ঘড়ি, ট্রেন ও চকলেটের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তবে অন্য দেশের দুর্নীতিবাজ ধনীদের কালো টাকা নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য কুখ্যাতি রয়েছে সুইস ব্যাংকগুলোর। আর সেই দেশেরই এক নাগরিক অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট দিয়ে শীর্ষ ধনীদের কাতারে চলে গেছেন মাত্র ৪১ বছর বয়সে। তার নাম গুইলাম পৌসেজ।
Advertisement
ফোর্বসের তথ্যমতে, সুইজারল্যান্ডে এই মুহূর্তে অন্তত ৪০জন বিলিয়নিয়ার বা শতকোটি ডলারের মালিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী পৌসেজ। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। সুইজারল্যান্ডে এক নম্বর এবং বিশ্বের মধ্যে ৬১তম ধনী ব্যক্তি এখন তিনি।
পৌসেজের উত্থান
গল্পটা খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র ১০ বছর আগে ২০১২ সালে চেকআউট ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন এ সুইস যুবক। এর কাজ ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করা।
Advertisement
প্রথম থেকে মোটামুটি চললেও করোনাভাইরাস মহামারি পৌসেজের ব্যবসার জন্য রীতিমতো আশীর্বাদ হয়ে আসে। এক বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে চেকআউট ডটকমের গ্রাহক বেড়ে যায় একলাফে তিনগুণ।
আরও পড়ুন>> ব্রাজিলের শীর্ষ ধনী কারা, কত সম্পদের মালিক?
আরও পড়ুন>> বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারের শীর্ষ ধনী কে?
২০২২ সালের জানুয়ারিতে চেকআউট ডটকমের মূল্য দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটি ডলার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শেয়ারের মালিক গুইলাম পৌসেজ। ফলে তার সম্পদও বেড়েছে হু হু করে।
Advertisement
প্রাথমিক জীবনপৌসেজ সুইজারল্যান্ডের ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেলে ডি লুজানে’তে ম্যাথেমেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে এইচইসি লুজানে ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন।
প্রথম জীবনে পৌসেজ ব্যাংকার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার ক্যানসার ধরা পড়ার পর ২০০৫ সালে ইউনিভার্সিটি ছাড়তে হয় তাকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান এবং সার্ফিং শুরু করেন।
কর্মজীবন
২০০৬ সালে পৌসেজ ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস কনসালট্যান্টসে (আইপিসি) যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর আগ্রহে কিছুদিন পরে সেই চাকরি ছেড়ে দেন।
আরও পড়ুন>> স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াই বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী আদানি
আরও পড়ুন>> ভারতের দুই শীর্ষ ধনীর স্ত্রীদের খুঁটিনাটি
আরও পড়ুন>> অনলাইনে বইবিক্রেতা থেকে শত কোটির মালিক
২০০৭ সালে আইপিসির হেড অব সেলসের সাহায্যে নেটমার্চেন্ট নামে একটি মানি ট্রান্সফার সার্ভিস চালু করেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের মধ্যে অর্থ আদান-প্রদানে কাজ করতো। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত চলে।
ওই বছরই তিন লাখ ডলারের বিনিময়ে তিন বছরের জন্য মরিশাস-ভিত্তিক ‘এসএমএস পে’ কিনে নেন পৌসেজ। কিছুদিন পরে সিঙ্গাপুরে ওপাস পেমেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের পেমেন্ট সেবায় কাজ করতো।
২০১২ সালে ওপাস পেমেন্টের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় চেকআউট ডটকম। এটি সারাবিশ্বের ব্যবসায়ী ও তাদের গ্রাহকদের অর্থনৈতিক লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করে থাকে।
২০২১ সালের মে মাসে জিনিয়াল গ্রোথ নামে একটি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ফার্ম চালু করেন পৌসেজ। ই-কমার্স স্টার্ট-আপ জিনা ও ওয়েফ্লায়ার এবং ব্লকচেইন ফার্ম স্নিকারডুডল ল্যাবসে বিনিয়োগ রয়েছে তার।
ব্যক্তিগত জীবন
গুইলাম পৌসেজের জন্ম সুইজারল্যান্ডে। তবে চেকআউট ডটকমের সদরদপ্তর স্থাপন করেছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। আর তার স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকেন দুবাইয়ে। ব্যস্তজীবনে সুযোগ পেলেই পরিবারের কাছে ছুটে যান তিনি।
আরও পড়ুন>> শ্রমিক থেকে পানি ব্যবসায়ী, আজ চীনের শীর্ষ ধনী
আরও পড়ুন>> টিকটক দিয়ে বিশ্ব মাত, ৩৮ বছরেই শীর্ষ ধনীর কাতারে
সূত্র: ফোর্বস, উইকিপিডিয়া, চেকআউট ডটকমকেএএ/