চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অন্তত ৮ শতাংশ জীবাণু সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তারা বলছেন, যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ওষুধ আর সাড়া দেয় না, তখনই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) এর উদ্ভব হয়। এতে সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে উঠছে, রোগের বিস্তার ঘটছে, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
Advertisement
তারা বলছেন, শুধুমাত্র ২০১৯ সালে এএমআর-এর ফলে বিশ্বজুড়ে ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, জনস্বাস্থ্যের শীর্ষ ১০টি হুমকির মধ্যে একটি হলো এএমআর।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) আইইডিসিআর মিলনায়তনে আয়োজিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিলেন্স শীর্ষক একটি সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এএমআর নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতি বছর ১৮-২৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সপ্তাহটি পালন করেছে।
Advertisement
সেমিনারে আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এএমআর সার্ভিলেন্স সেক্টোরাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব জানান, এই সময়ে ২৭ হাজার ৪৩৮ জন রোগীর বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হয়। জীবাণুর উপস্থিতি আছে এমন সব মল, রক্ত এবং প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষাতে যথাক্রমে ভিব্রিও কলেরা, টাইফয়েড এবং প্যারা-টাইফয়েডের জীবাণু (সালমোনেলা) এবং ই. কোলাই সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া শনাক্তকৃত জীবাণুসমূহের মধ্যে ই. কোলাই-এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরও জানান, শনাক্ত জীবাণুসমূহের মধ্যে এসিনিটোব্যাক্টর নামক যে জীবাণুটি পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে মোটামুটি সব ধরনের এন্টিবায়োটিকই অকার্যকর। আইসিইউ হতে সংগৃহীত নমুনাতে এ জীবাণুর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরও জানান, ২০১৭-২০২২ সালের সার্ভিলেন্সের তথ্য থেকে দেখা যায়, এজিথ্রোমাইসিন ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, বাকি সব ক্রিটিক্যালি অ্যান্টিবায়োটিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস (সেফটাজিডিম, সেফিক্সিম, সেফেপাইম, সেফট্রায়াক্সোন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন) জীবাণুর বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে বেশি হারে কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিজ কন্ট্রোল শাখার পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া, সুইডিশ অ্যাম্বাসির ফার্স্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল নোভাক, আইভিডির টিম লিডার ডা. রাজেন্দ্র বোহরা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ফ্লেমিং ফান্ড বাংলাদেশের টিম লিড অধ্যাপক ডা. নিতীশ দেবনাথ প্রমুখ।
Advertisement
এএএম/এমএইচআর/এমএস