স্বাস্থ্য

রাত পোহালেই স্বাচিপের সম্মেলন

রাত পোহালেই স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ৫ম জাতীয় সম্মেলন। রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীসহ সারাদেশের ২৫ থেকে ৩০ হাজার চিকিৎসক সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করছেন স্বাচিপ নেতারা। সাত বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সম্মেলন সফল করতে গত দুই সপ্তাহ ধরে স্বাচিপের নেতাকর্মীরা রাতদিন পরিশ্রম করছেন। নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেতে সংগঠনটির প্রবীণ ও নবীন নেতারা ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কাছে ছোটাছুটি করে দোয়া চাইছেন।

Advertisement

স্বাচিপের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য ৫ম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে চিকিৎসক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা সকাল ১০টা থেকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসবেন। দুপুর আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী স্বাচিপের নিজস্ব কার্যালয় (পান্থপথ ও কলাবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের) উদ্বোধন করবেন।

সম্মেলনের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাতে স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তার মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত সাত বছরে স্বাচিপ সাধারণ চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের কাছে কার্যকর সংগঠন হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। সাধারণ চিকিৎসকদের পদ সৃষ্টি, পদায়ন ও ন্যায্য পদোন্নতি লাভের ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে স্বাচিপ সক্রিয়ভাবে আংশগ্রহণ করেছে। করোনা মহামারিকালে স্বাচিপের চিকিৎসকরা জীবনবাজি রেখে রোগীদের সেবাদান করেছেন।

নেতৃত্বে কারা আসছেন?স্বাচিপের সম্মেলনে সভাপতি ও মহাসচিব পদে কোন দুজন আসছেন তা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। কেউ বলছেন পুরোনো, অভিজ্ঞ ও দলের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এমন প্রবীণ চিকিৎসক নেতাদের মধ্যে থেকেই সভাপতি ও মহাসচিব নির্বাচিত হবেন।

Advertisement

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রায় আসন্ন। বিরোধীদল আগামী বছর ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে মাঠে সক্রিয় থাকবে। সেক্ষেত্রে (বিরোধীদলের আন্দোলন মোকাবিলায়) স্বাচিপ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে হবে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পরীক্ষিত ও সাহসী নেতা তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এম এ আজিজকেই বহাল রাখা হতে পারে। এর বাইরে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক দুই উপাচার্য- অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান কিংবা অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকেও সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে।

যদিও এম এ আজিজকে সভাপতি কিংবা মহাসচিব হিসেবেই রাখার পক্ষে স্বাচিপের সাধারণ চিকিৎসকরা। তবে সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিএমএ’র নতুন কমিটি হওয়ার কথা রয়েছে। অধ্যাপক এম এ আজিজ ও কামরুল হাসান খানের নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনের ইচ্ছে রয়েছে। সেদিক বিবেচনা করলে তারা কমিটিতে নাও থাকতে পারেন। তবে স্বাচিপের শীর্ষপদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় হবে একথা সবাই স্বীকার করছেন। সেক্ষেত্রে তিনি যে কোনো কাউকে সভাপতি কিংবা মহাসচিব নির্বাচিত করতে পারেন বলে মনে করছেন চিকিৎসক নেতারা।

তবে এর বাইরেও অনেকেই সভাপতি ও মহাসচিব পদ পেতে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট ও পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। এমনকি শীর্ষ পদে ঠাঁই পেতে কেউ কেউ আওয়ালী লীগের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও সিনিয়র সংসদ সদস্যদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন।

সবশেষ খবরে সভাপতি পদের দৌড়ে স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এবং অধ্যাপক ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।

Advertisement

অন্যদিকে মহাসচিব পদেও বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজের নাম রয়েছে। এছাড়াও স্বাচিপের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিএসএমএমইউ’র নিউরোসার্জারি বিভাগের ডিন ও নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন, সিলেট মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. উত্তম বড়ুয়ার নাম শোনা যাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত হয় ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর। স্বাচিপের প্রতিষ্ঠাকালে অধ্যাপক এম এ কাদেরী সভাপতি ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৩ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক সভাপতি ও অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান মহাসচিব নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান সভাপতি ও অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ মহাসচিব নির্বাচিত হন।

এমইউ/কেএসআর/জেআইএম