দেশজুড়ে

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আছে, থাকেন এলাকার বাইরে

কুড়িগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে বেশির ভাগ পরিবার ভালো আছে। ভালো আছেন তারাই যাদের প্রকৃতপক্ষে একটি ঘরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু গৃহহীন ভূমিহীন দুস্থ পরিবারের জন্য বানানো এইসব ঘরও কৌশলে বরাদ্দ নিয়েছে কিছু মানুষ। যাদের এই ঘরের তেমন একটা দরকার নেই। এদের কারও কারও নিজের ঘর-বাড়ি-জমি সবই আছে। তাই নিজের নামে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিলেও সেই ঘরে তারা থাকেন না।

Advertisement

রাস্তাঘাট, চিকিৎসা আর কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে অনেকে আছেন নিজের বাড়িতে কিংবা পরিবারের সঙ্গে থাকছেন ভাড়া বাড়িতে। অনেকেই ঘরে তালা ঝুলিয়ে জেলা শহর থেকে পাড়ি জমিয়েছেন রাজধানী ঢাকায়।

ঘোগাদহ ইউনিয়নের মাধবরাম আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, ১৪টি ঘরের ৮টিই তালাবদ্ধ। ঘরগুলোর বারান্দা আবর্জনায় ভরা। ঘরের দরজায় মাকড়সার জাল ঘিরে আছে। মাসে দু-একদিন এসে ঘর পরিষ্কার করে আবার চলে যায় নিজ বাড়িতে। কারও তালাবদ্ধ থাকা ঘরটির দেখভাল করেন ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবেশী কিংবা স্বজনরা।

কথা হয় চর মাস্টারপাড়া মাধবরাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া মোছা. রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছি তবে থাকি নিজের বাড়িতে। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশেপাশে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে ধরলা ব্রিজের পূর্ব পাশে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করে থাকি।

Advertisement

ঘরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ঘর বরাদ্দ হওয়ার আগে জমি কিনেছি পরে বাড়ি করেছি। নিজের বাড়ি ও বাচ্চা দুটোর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আশ্রয়ণের ঘরে থাকা হচ্ছে না। আমি বিধবা । আমার জন্য আরও কোনো সহযোগিতা করা হলে উপকার হতো বলে জানান তিনি।

ওই আশ্রয়ণের আরেক ঘর পাওয়া শাহিদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি জানান, ‘আমি কুড়িগ্রাম পৌর শহরে ভেলাকোপা গ্রামে থাকতাম। এখন কাজের জন্য ঢাকা শহরে মেয়ে জামাইদের সঙ্গে থাকি। মাঝে মাঝে এসে খোঁজখবর নিয়ে আবার ঢাকায় চলে আসি।’

মাধবরাম এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম বলেন, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দু-তিনটা ঘরে কেউ থাকে না। এখানে যারা থাকেন তারা নিতান্ত গরিব। আর যারা থাকেন না তাদের নিজস্ব ঘর আছে, জমি আছে। কেউবা সন্তানদের সঙ্গে কুড়িগ্রাম শহর ও ঢাকা শহরে আছেন। সামর্থ্য থাকার পরও যারা এ ঘর পেয়েও ব্যবহার করছে না এদের কাছ থেকে ঘর ফেরত নিয়ে সরকার যদি প্রকৃত দুস্থদের দিত তাহলে তাদের খুব উপকার হতো।

এ বিষয় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেদুল হাসান বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছি। যাদের নিজের ঘর আছে কিংবা ঘর পেয়ে যারা বাইরে থাকেন তাদের নোটিশ করা হবে। এরই মধ্যে আমরা নোটিশ পাঠানো শুরু করেছি।

Advertisement

ফজলুল করিম ফারাজী/এসএইচএস/এএসএম