দেশজুড়ে

উপহারের ঘর পেয়ে বদলে গেছে জীবন

কেউ বসবাস করতেন অন্যের জায়গায় বা খাসজমিতে। তাদের ছিল না কোনো স্থায়ী ঠিকানা। কেউ কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। গাইবান্ধা সদরের ভূমি ও গৃহহীন ৬০১টি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর পেয়ে বদলে গেছে সুবিধাভোগীদের জীবনমান।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি বদলে ফেলছেন জীবনের গল্প। এই ঘর অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পর্যায়ে সদরের ৬০১ জনসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৯২ জনকে। আরও জেলায় চতুর্থ পর্যায়ে (ক শ্রেণি) সদরের ৩১৩ জনসহ ১ হাজার ৩৯৩ জনকে ঘর দেওয়া হবে। জেলায় অবশিষ্ট ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৮১৩ জন।

সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহারের ঘর পেয়ে হাসি ফুটে উঠেছে। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন অন্যের জায়গায় বা খাসজমিতে বসবাস করা ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন এবং দুর্ভোগ পোহানো এই মানুষগুলো।

Advertisement

হোসনে আরাদেরও জীবনমান বদলে দিয়েছে একটি ঘর-ছবি জাগো নিউজ

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের হরিণসিংহা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া হোসনে আরা (৬২) বলেন, চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকতাম। ছয় বছর আগে তার ভ্যানচালক স্বামী ক্যানসারে মারা যান। স্বামী হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে পড়েছিলেন বিপাকে। পরে ঠাঁই মেলে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওই এলাকায় ২৫০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। উপহারের এই ঘর পেয়ে বদলে যেতে থাকে তাদের জীবন। বর্তমানে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনে মুদি দোকান দিয়েছেন। দোকানের আয় দিয়ে চলছে তার সংসার।

হোসনে আরার মতো ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মিলন মিয়া ও রাব্বি ইসলাম।

Advertisement

কথা হয় মিলন মিয়ার (৩৬) সঙ্গে। তিনি বলেন, পৌরপার্কে ফুচকার ব্যবসা করতেন তিনি। পরে পৌরপার্ক থেকে দোকানপাট তুলে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন। ঘাঘট নদীর বাঁধে বসবাস করতেন পরিবার নিয়ে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর পাইছি। এখন পরিবার নিয়ে ভালো আছি। আগের মতো কষ্ট নেই। ঘরের বারান্দায় একটি মুদি দোকান দেওয়ায় প্রতিদিন বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ টাকা। এতে আর কোনো সমস্যাই নেই তাদের।

মিলন মিয়াদের জীবনচাকা ঘুরছে-ছবি জাগো নিউজ

ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন রাব্বী ইসলাম (৩২)। সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে বসে থাকা রাব্বীর কিছুই ছিল না। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে মেলে উপহারের ঘর। সেই ঘরের বারান্দায় তিনিও দিয়েছেন মুদি দোকান। এক মেয়েসহ তিনজনের সংসারে ভালোই চলছে তাদের।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, অনেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের বারান্দায় দোকান করেছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা চেষ্টা করছি ওইখানে বসবাসকারীদের জন্য সেলাই, কৃষি ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার। যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে।

এসএইচএস/এএসএম