হৃদয় ও মস্তিষ্কের মতো লিভার বা যকৃতও শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। লিভারের প্রাথমিক কাজগুলো হলো- অ্যালবুমিন ও পিত্ত উৎপাদন, রক্ত পরিস্রাবণ, এনজাইম সক্রিয়করণ, গ্লাইকোজেন, ভিটামিন ও খনিজের সঞ্চয় করা।
Advertisement
শরীরের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ হওয়ায় লিভারের অনেক ভূমিকা আছে। যখন লিভার সঠিকভাবে তার কাজ সম্পন্ন করতে পারে না, তখন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। লিভারের সঙ্গে যুক্ত সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হলো ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
ফ্যাটি লিভারের কারণ কী?
লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে ফ্যাটি লিভার রোগ হয়। এটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। এর শীর্ষ কারণগুলো মধ্যে একটি হলো অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, যা অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগের কারণ হতে পারে।
Advertisement
অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় লিভার স্টোরকে ভেঙে ফেলার পরিবর্তে আরও চর্বি তৈরি করতে পারে। যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে আলকোহলিক ফ্যাটি লিভারে বেশি আক্রান্ত হন।
অন্যদিকে এনএএফএলডি বা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হল অন্য ধরনের ফ্যাটি লিভারের অসুখ, যা মূলত স্থূলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ইনসুলিন প্রতিরোধ, রক্তে উচ্চ মাত্রার চর্বি (ট্রাইগ্লিসারাইড) ও বিপাকীয় সিনড্রোমের মতো কারণগুলোর কারণে ঘটে।
বয়স, জেনেটিক্স, নির্দিষ্ট ওষুধ ও গর্ভাবস্থা ফ্যাটি লিভারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধের চাবিকাঠি হলো প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়।
যদি রোগটি সময়মতো শানাক্ত না করা হয় বা চিকিত্সা না করা হয়, তাহলে তা লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যার অবনতি হলে পা ও পেটে পড়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব।
Advertisement
ক্রমাগত চর্বি জমার ফলে শরীরের এই গুরুতর অঙ্গে প্রদাহ হতে পারে, যা ন্যাশ (নন অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস) নামক আরেকটি স্বাস্থ্য সমস্যাকে আলো দেয়।
নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (ন্যাশ)
নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস বা ন্যাশ লিভারের অতিরিক্ত চর্বি কোষের কারণে প্রদাহকে বোঝায়। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ প্রগতিশীল যকৃতের ক্ষতি বা সিরোসিস সৃষ্টি করে।
সিডার সিনাই-এর মতে, ন্যাশের রোগী, যাদের যকৃতের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ‘পা ফুলে যাওয়া’ ও ‘পেটে তরল জমা’র অনুভূতি ঘটে।
এটি লিভারের মধ্য দিয়ে রক্ত সঞ্চালনকারী শিরায় বর্ধিত চাপের কারণে ঘটে, যা পোর্টাল শিরা নামে পরিচিত। শিরায় ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে পা, গোড়ালি ও পেট’সহ শরীরে তরল জমা হয়।
যখন পোর্টাল শিরায় চাপ বেড়ে যায়, তখন এটি ফেটে যেতে পারে। ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে। পা বা পেট ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি মল বা বমিতে রক্তের লক্ষণ দেখেন তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান রোগীকে।
চোখ ও ত্বকের হলুদ হওয়া থেকে সাবধান থাকুন, লিভারের ক্ষতির আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুসারে, লিভার যখন রক্ত থেকে পর্যাপ্ত বিলিরুবিন (রক্তের বর্জ্য পদার্থ) অপসারণ করতে পারে না তখনই জন্ডিস হয়।
জন্ডিসের কারণে ত্বক হলুদ, চোখের সাদা ও প্রস্রাব কালচে হয়ে যায়। কেউ চুলকানি, দ্রুত ওজন হ্রাস, ত্বকে মাকড়সার মতো রক্তনালি ভেসে ওঠা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা হ্রাস ও ক্লান্তি অনুভব করতে পারে।
কীভাবে ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধ?
স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে কেউ নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (এনএএফএল) বা নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (ন্যাশ) প্রতিরোধ করতে পারে।
এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি, তেল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/জিকেএস