কৃষি ও প্রকৃতি

১৪ বিড়াল নিয়ে তাপসীর ‘পুচি ফ্যামিলি’

তাপসী দাস একজন প্রাণীপ্রেমী। গৃহপালিত পশু-পাখির প্রতি তার আগ্রহ অনেক বেশি। দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে পোষা বিড়ালদের নিয়েই কাটে। তার এই পশু-পাখির প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন অন্যদের মাঝেও। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করেন। যার নাম রাখেন ‘পুচি ফ্যামিলি’।

Advertisement

করোনাকালে যখন সবাই ছিলেন ঘরবন্দি। তখন কিছু বিড়াল ও একটি পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের কর্মকাণ্ডগুলো দেখা যেত ‘পুচি ফ্যামিলি’ ফেসবুক পেজে। মানুষ ও প্রাণীর একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে সবার সঙ্গে শেয়ার করাই ছিল তাপসীর মূল উদ্দেশ্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ‘পুচি ফ্যামিলি’।

তাপসী জানান, পশু-পাখির প্রতি তার ভালোবাসা ছিল ছোটবেলা থেকেই। বিড়াল তার সবচেয়ে প্রিয় এবং আদুরে প্রাণী। ছোট থেকেই তিনি বিড়াল পছন্দ করতেন। ওদের সাথেই কাটতো অধিকাংশ সময়। বর্তমানে তার বাড়িতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিড়াল। তাপসী নিজের পরিবারের অন্য সদস্যের মতোই মনে করেন বিড়ালগুলোকে। বিশেষ করে ‘পুচি’। যে বিড়ালটিকে তার নিজের মেয়ের মতো করেই ভাবেন। সেভাবেই লালন-পালন করেন। তাপসীর ভাষায়, ‘এসব বিড়াল আমার সন্তানের মতোই।’

বর্তমানে তাপসীর প্রায় ১৪টি বিড়াল আছে। বিড়ালগুলোর সঙ্গে তার পরিবারের কাটানো মুহূর্ত, ভালোবাসার দৃশ্যগুলো ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। এসব ভিডিও পশু-পাখি নিয়ে অনেকের মনের মধ্য লালন করা ভ্রান্ত ধারণা, ভীতি দূর করছে। তাপসী তার ভিডিওতে মানুষকে সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করেন, গৃহপালিত পশু-পাখি ভয়ংকর কোনো প্রাণী নয়, ওরা মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। ওরাও মানুষকে ভালোবাসতে জানে। এ ছাড়া যারা বাড়িতে বিড়াল বা পশু-পাখি লালন করেন তাদের জন্যও নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

Advertisement

ফেসবুকে তাপসীর ‘গলুস রিভিউ’ ও ‘পুচির মা’ নামে আরও দুটি জনপ্রিয় পেজ আছে। ‘পুচি ফ্যামিলি’র আছে প্রায় ১৫ লাখেরও বেশি ফলোয়ার্স। এসব মাধ্যম থেকে উপার্জনের একটি অংশ দিয়ে তাপসী ও তার পরিবার অসহায় মানুষের সেবা করে থাকেন।

তাপসী দাসের পশুপ্রেমী হওয়াটা সহজ ছিল না। এজন্য তাকে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়েছে। বিশেষ করে পোষাপ্রাণী সম্পর্কে একটি শ্রেণির মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণা থাকায় অপ্রীতিকর মুহূর্ত কিংবা হেনস্তার শিকারও হতে হয়েছে। বাড়িতে একাধিক বিড়াল লালন-পালনে আপত্তি ওঠায় তাকে ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে এসব কোনোকিছুই তার পোষাপ্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারেনি। তাপসী বলেন, ‘ওদের (বিড়াল) সাথে থাকা শুরু করার কারণে এখন ওদের ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব আমার কাছে। বর্তমানেও যেমন ওদের সঙ্গে আছি, ভবিষ্যতেও ওদের সাথে থাকবো। ওরা আমার পরিবারের অংশ।’

নিজের এ যাত্রায় সবচেয়ে বেশি পাশে পেয়েছেন স্বামী ও পরিবারকে। তাপসী বলেন, ‘আমার পথচলার সবটুকুজুড়ে আমার পরিবার এবং পরিবারের সদস্যরা খুবই সাহায্য করেছে। এতগুলো বিড়াল নিয়ে এতদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার স্বামীর। তার সাপোর্ট ছাড়া এতদূর আসা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।’

শুধু নিজের পোষাপ্রাণীর জন্যই তাপসীর সব পরিশ্রম, ভালোবাসা এমনটাও নয়। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বিড়ালের সুস্থতার জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া তার তৈরি বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট থেকে উপার্জিত আয় ব্যবহার হচ্ছে পশু-পাখি ও অসহায় মানুষের জন্যই।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম