সাহিত্য

স্মৃতিপুঞ্জ ও মননের সৈকতে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন

রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে এ পর্যন্ত পঞ্চাশের অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সেসব গ্রন্থে জননেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম, বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে গণ-সম্পৃক্ততা এবং ভোট ও ভাতের লড়াইয়ের ইতিহাস উন্মোচিত। উপরন্তু শাসক হিসেবে তাঁর বৈশ্বিক ভাবমূর্তির উজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল অবধি শেখ হাসিনার শাসনকাল ইতিহাসবিদদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘‘শেখ হাসিনা যুগ’’ অভিধা প্রাপ্ত হয়েছে।

Advertisement

২০২২ সালের আগে প্রকাশিত শেখ হাসিনাকে নিয়ে সম্পাদিত তথা বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা নিয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংকলনগুলোর দিকে মনোযোগী হলে দেখা যায়, সেগুলোর পরিকল্পনায় আন্তরিকতা এবং সমৃদ্ধ তথ্যমালা উপস্থাপিত হলেও সামগ্রিকভাবে ব্যক্তি শেখ হাসিনা ও তাঁর শাসনকালে আসীন হওয়ার পূর্বের প্রতিকূল অবস্থা তথা দুর্যোগময় প্রসঙ্গগুলো স্মৃতিসত্তা ও পর্যবেক্ষণের নিবিড় আলোয় উদ্ভাসিত হয়নি। এদিক থেকে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সম্পাদিত শেখ হাসিনা সংগ্রামী জীবন (২০২২) গ্রন্থটি ব্যতিক্রম এবং শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে লেখকদের স্মৃতি ও বিশ্লেষণী মনের আলোড়নে সমুজ্জ্বল।

শেখ হাসিনা সংগ্রামী জীবন বইটির ৪০টি প্রবন্ধ অবশ্যই জননেত্রীর রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস, কোন রূপকথা-উপকথা নয়। নিরেট সন-তারিখে সংঘটিত ঘটনা ও ঘটনার পেছনের কার্যকারণ পরিপ্রেক্ষিতসহ উপস্থাপনা। এজন্য রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, কবি-সাহিত্যিক নিজেদের স্মৃতিকে মুখ্যত আশ্রয় করেছেন। কেবল স্মৃতি নয়, কেউ কেউ ১৯৭৫ পরবর্তী ইতিহাসের দীর্ঘ পরিসরের ঘটনাপুঞ্জ বিশ্লেষণ করে শেখ হাসিনাকে সেই পরিপ্রেক্ষিতের ভেতর প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। কত কথাই তো উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। উঠে এসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড। খুনি ও স্বৈরশাসকদের ষড়যন্ত্র।

পাকিস্তানি চেতনার পুনরাগমন এবং বিপরীতে শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে চলা বাংলাদেশের সমুন্নতি। শেখ হাসিনা যেন এক হীরকখণ্ড যার শতমুখী দ্যুতিতে প্রোজ্জ্বল স্বদেশের আঙিনা আর বিদেশের প্রাঙ্গণ।

Advertisement

এই গ্রন্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটা নেতাদের স্মৃতি এবং তাঁর সংগ্রামী জীবন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা উচ্চারিত হয়েছে নির্ভীক ভাষ্যে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবন সংগ্রাম, বেড়ে ওঠা এবং বিশ্বনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনের যে জীবন সেই জীবনের কাহিনি, স্মৃতিকথা উঠে এসেছে এই বইয়ে। স্মৃতির দুয়ারে আলো ফেলেছেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম-জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বর্ষিয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি কামাল চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, রাজনীতিবিদ হাসানুল হক ইনু। সরাসরি নেত্রীর স্মৃতি না থাকলেও তাঁর সংগ্রামের একনিষ্ঠ অনুসারীরা মূল্যায়ন করেছেন নেত্রীর আপসহীন ও বলিষ্ঠ পথ চলাকে। সংকটে, সমস্যায় নিমজ্জিত কালখণ্ডে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের স্পষ্ট চিত্র অঙ্কন করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. সামসুল আলম, যিনি আলোচ্য গ্রন্থটির সম্পাদক ও প্রকাশক।অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচয়িতা। এর মধ্যে ‘‘পরিবর্তনের বাঁকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি’’, ‘‘কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধু’’, ‘‘রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্মুখপানে বাংলাদেশ’’, ‘‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ : স্বপ্ন ও বাস্তবতা’’ উল্লেখযোগ্য। এসব গ্রন্থ পাঠে দেখা যায়, বিশ্লেষণাত্মক ও তথ্যবহুল প্রবন্ধ রচনায় তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতির সামগ্রিক চিত্র অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত। দেশ-বিদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি-প্রযুক্তি তাঁর অনুধ্যানে আত্মপ্রকাশ করেছে সাবলীল গদ্যে।

বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে শুরু করে দারিদ্র্য বিমোচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, মুদ্রাস্ফীতি, গণতন্ত্র, সুশাসন এবং টেকসই উন্নয়নের নানা বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলোচনা রয়েছে গ্রন্থসমূহে। এক্ষেত্রে তাঁর অধ্যয়ন ও কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলে আমরা মনে করি। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) হিসেবে বিশাল কর্মযজ্ঞ ও পঠন-পাঠনের ছাপ রয়েছে তাঁর লেখনিতে। ২০২১ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর অভিজ্ঞতা দেশের মঙ্গলে কাজে লাগছে বলে আমরা মনে করি।

‘শেখ হাসিনা সংগ্রামী জীবন’ গ্রন্থটি প্রথম পর্ব। সম্পাদক ও প্রকাশক অধ্যাপক ড. শামসুল আলম লিখেছেন, ‘‘প্রথম পর্ব আমরা তাঁর সংগ্রামের সাংগঠনিক তৎপরতা, দলকে প্রতিকূল পরিবেশে সংঘবদ্ধ করায় ত্যাগ-তিতীক্ষা আত্মত্যাগে যাঁরা সহযোগী হিসেবে সঙ্গে ছিলেন কিংবা গবেষক, বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষক হিসেবে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাঁদের লেখনী ধারণ করে আমরা এই বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।’’

সম্পাদক শেখ হাসিনা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘শেখ হাসিনা দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে উন্নীত করতে পেরেছেন। এসবই যুগান্তকারী সাফল্য। সাফল্যের এই আলোকিত ধারায় পৌঁছাতে শেখ হাসিনাকে পাড়ি দিতে হয়েছে কণ্টকাকীর্ণ দুর্গম পথ, সেটা বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর আশির দশকের শুরু থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত।’’

Advertisement

২.শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের ব্যাপ্তি ও বিশালতার পরিচয় রয়েছে গ্রন্থভুক্ত বিভিন্ন প্রবন্ধে। কয়েকটি প্রবন্ধ সম্পর্কে মন্তব্য নিম্নরূপ।

লেখক নামের বর্ণনানুক্রমিক বিন্যাসে প্রথম প্রবন্ধ অসীম কুমার উকিল এমপির। তিনি নেত্রীকে দেখেছেন প্রেরণার শতধা ধারায় উদ্ভাসিত আলোকবর্তিকা হিসেবে। এজন্য ‘শেখ হাসিনা প্রেরণা উৎস’ তাঁর কাছে। এখানে লেখকের ছাত্র রাজনীতির স্মৃতির বর্ণনা রয়েছে।

১৯৯২ সালে বাদল হত্যাকাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁর এবং তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে নেত্রীর যে আন্তরিকতা, স্নেহ এবং মায়ের মতো আগলে রাখার যে চিত্র তা উপস্থাপিত। তিনি লিখেছেন, ‘‘মায়ের মমতা আর নেত্রীর কর্তব্যপরায়ণতা দিয়ে তিনি তখন সবকিছু দেখছিলেন। রাত ৯টা নাগাদ উনার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে আমাদেরকে নিরাপদ স্থানে পাঠান।’’ (পৃ ১১) তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘নেত্রীর শিক্ষাটাই ছিল সকলকে সাথে নিয়ে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এই নির্দেশনা জাতীয় রাজনীতিতে আমি আজও চর্চা করে আসছি এবং বলব, খুবই ভালো ফল পাচ্ছি।’’ (পৃ ১২)

‘‘দুঃখে যেন করতে পারি জয়’’ প্রবন্ধে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষা প্রসঙ্গে তাইওয়ানের নোবেল বিজয়ী রসায়নবিদ অধ্যাপক ওয়াই টি লি’র কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘‘তোমরা ভাগ্যবান যে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছ।

আমি বহু দেশে রাষ্ট্রনায়কদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, কিন্তু নতুন প্রজন্মের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তোমাদের প্রধানমন্ত্রীর এত স্বচ্ছ, যৌক্তিক ও সংবেদনশীল চিন্তাভাবনা এবং এত বিশদভাবে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকার পারঙ্গমতা আমি কোথাও দেখিনি।’’ (পৃ ১৬) এতে বোঝা যায়, শেখ হাসিনা শিক্ষা সম্পর্কে অনেক সচেতন একজন মানুষ।

‘‘অতুলনীয় নেত্রী শেখ হাসিনা’’ প্রবন্ধে আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন এবং নিজের কাজের সহযোগিতা পেয়ে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার জীবন-যাপন, চিন্তা-ভাবনা দেখে তিনি আনন্দিত। বিভিন্ন সময়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের হুমকিতেও শেখ হাসিনা ভয় পাননি। তিনি যা বলেন তাই করেন এবং করিয়ে দেখান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘আমি তাঁকে কাছ থেকে যতই দেখি, ততই বিস্মিত হই। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, দেশকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর এই দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি ২০০৮ সালে বলেছিলেন, বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। তিনি যথার্থই বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।’’ লেখক আরও বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে তিনি যতটা অনমনীয়, আবার মানুষের সেবায় তিনি ঠিক ব্যতিক্রম।’’ (পৃ ৪৭)

অধ্যাপক, লেখক ও কলামিস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপির ‘‘চরম প্রতিকূল পরিবেশেও শান্ত-অবিচল শেখ হাসিনা’’ শীর্ক প্রবন্ধটিতে নেত্রীর সংগ্রামী জীবনচিত্র আরও বেশি উদ্ভাসিত। প্রবাস জীবনের কথা, কাজের ক্ষেত্রে একে অন্যের সহযোগিতা, জীবনের সহজ এবং কঠোরতার দিকসহ শেখ হাসিনার জীবনের চড়াই-উৎরাই এবং বিশ্বনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে যে সংগ্রাম তার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যার বড় গুণ, তিনি চরম প্রতিকূল পরিবেশেও শান্ত ও অবিচলিত থাকতে পারেন। স্বভাবে বাস্তববাদী, স্বপ্ন দেখতে পারেন, দেখাতেও পারেন। ঠিক যেন পিতারই যোগ্য প্রতিচ্ছবি। গত কয়েক দশকের পরিচয় থেকে দেখেছি, তিনি সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে অবিচল। তাঁর মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতার পুরোটুকুই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কাজে লাগাচ্ছেন। তাঁর প্রজ্ঞা, দক্ষতা আর সৃজনশীলতায় বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র।একসময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত দেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে।’’ (পৃ ৪৯)

শেখ হাসিনা যত দৃঢ়তর অবস্থান নিয়েছেন দেশ ও মানুষের পক্ষে, ততই তার ওপর নেমে এসেছে নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গ। তাঁর বীরোচিত স্বৈরাচারবিরোধী তৎপরতার কারণে তাঁকে জনগণের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র হয়। এত কিছু করেও দমিয়ে রাখা যায়নি তাঁকে। লেখক লিখেছেন, ‘‘শেখ হাসিনা যেন আগুনের ভেতর থেকে জন্ম নেওয়া এক ফিনিক্স পাখি। যতবার পোড়ানো হয় তাঁকে, ততবারই নতুন রূপে, নতুন শক্তিতে এ দেশের মানুষের কাছে ফিরে আসেন তিনি।’’ (পৃ ৫৬)

‘‘শেখ হাসিনার সংগ্রাম’’ প্রবন্ধে ওবায়দুল কাদের এমপি বিভিন্ন ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন এবং সাফল্য তুলে ধরেছেন। এই সাফল্য অর্জন সহজ ছিল না। ঘাতকের বুলেট তাঁকে বারবার তাড়া করেছে। কমপক্ষে ১৯ বার হত্যার অপচেষ্টা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘শেখ হাসিনা সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেন। ধ্বংসস্তূপের মাঝে থেকে ওড়ান সৃষ্টির পতাকা। তিনি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে গেয়ে যান জীবনের জয়গান। স্বজন হারানোর কষ্ট ভুলে থাকেন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নকে তিনি করেছেন জীবনের ব্রত।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক অতন্দ্র প্রহরী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’’ (পৃ ৬০)

‘‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’’ প্রবন্ধে তোফায়েল আহমেদ শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। প্রথম জীবন থেকে শুরু করে বর্তমান জীবনের মাঝে যেসব বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তা খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি নেত্রীর মেধা ও মননের নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরে লিখেছেন, ‘‘তিনি নিয়মিত পড়াশোনা করেন। ক্যাবিনেট মিটিংগুলোতে যথাযথ হোমওয়ার্ক করে, সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মিটিংয়ে আসেন।

একনেক বা ক্যাবিনেট মিটিংয়ের দু-এক দিন আগেই মিটিংয়ের আলোচ্যসূচি, প্রস্তাবাবলি আমাদের ফাইলে দেওয়া হয়। যখন একটি বিষয় প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয়, তখন সেই বিষয়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তিনি সভায় সবিস্তারে তুলে ধরেন এবং সঠিকভাবে প্রতিটি প্রস্তাবের ওপরে সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেন। তাঁর এই অবাক করা প্রস্তুতি আমাদের মুগ্ধ করে। সারা দিন তিনি কাজ করেন। ভীষণ পরিশ্রমী, হাস্যোজ্জ্বল এবং আবেগময়ী মানুষ তিনি। ধর্মপ্রাণ হিসেবে প্রতি প্রত্যুষে তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ আদায় করে তবেই তিনি দিনের কাজ শুরু করেন। পিতার মতোই গরিবের প্রতি তাঁর দরদ অপরিসীম।’’ (পৃ ১১০) লেখকের মতে, এক কথায় তিনি বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ করে চলেছেন। এতেই তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বিস্ময়কর উত্থান বাংলাদেশের।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রির ঘটনা ব্যক্তির জীবনে যে প্রভাব রেখেছিল তার বর্ণনা রয়েছে কবি নির্মলেন্দু গুণ রচিত ‘‘বঙ্গবন্ধুর পুনর্জন্ম’’ প্রবন্ধে। পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে সাক্ষাতে তাঁর যে অবস্থা হয়েছিল তা তুলে ধরেছেন। সেদিন তিনি নিজের গ্রামের আশ্রমের জগা সাধুর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সেই স্মৃতিচারণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু চলে যাওয়ার পর তার অসমাপ্ত কাজ কে করবে সেটা নিয়ে অনেক দ্বিধা ছিল কিন্তু সেই কাজ পুনর্জন্মের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সমাপ্ত করে চলেছেন। এজন্য তিনি বলেছেন শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পুনর্জন্ম হয়েছে। তাঁর মতে, ‘‘সেদিন জগা সাধুর যে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি, বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার ৪৫ বছর পর, আজ বলতে পারি- বঙ্গবন্ধুর পুনর্জন্ম সাধিত হয়েছে তাঁর কন্যা বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে।’’ (পৃ ১২৭)

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন স্মৃতি ও বাস্তবতার নিরিখে লিখেছেন ‘‘অনির্বাণ শিখা জ্বলুক প্রাণে’’। শেখ হাসিনার মেধা, মনন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রসঙ্গ ও তাঁর সংস্কৃতি ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র সংগীতসহ বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পছন্দ করেন, সংস্কৃতিমনা এই নেত্রী ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। মানুষের দুঃখে পাশে থেকে সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অন্যের দুঃখে দুঃখিত হন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কথায়, ‘‘আমরা জাতি হিসাবে ধন্য। কেননা, আমরা একজন সংস্কৃতিমনা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি, যিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে রবীন্দ্রসংগীত শোনেন। শুধু শুনেই শেষ হয় না, তিনি শিল্পীকে অভিনন্দিত করেন। এখানেই তাঁর সংস্কৃতিচর্চার বড় পরিসর।’’ (পৃ ৩৫২)

অধ্যাপক, গবেষক, লেখক ও কলামিস্ট ড. শামসুল আলম। তিনি একযুগ ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেশের নির্বাহী প্রধান মানবতাবাদের দিশারি জননেত্রীকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁর সঙ্গে দেশের অগ্রগতি নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করেছেন। কিন্তু নেত্রীর পক্ষে কলম ধরেছেন অনেক আগে থেকেই। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হলে তিনি কলামটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন। এবং এটি ৩০ জুলাই জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়। শিরোনাম- ‘পঁচাত্তর-উত্তরকালে শেখ হাসিনাই সবচেয়ে সফল নেত্রী’।

এ প্রবন্ধে ড. শামসুল আলম দুটি ধারার রাজনীতির কথা বলেছেন, যার একটি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক ধারা। এই ধারায় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পঁচাত্তর-উত্তরকালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানমনষ্কতার যে ধারা প্রচলিত হয়েছিল তা পরিবর্তন করে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছেন জননেত্রী।

শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব ছিল না এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করে তিনি দেশ পরিচালনা করছেন এবং সে লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন- তারই বিস্তারিত বিবরণ সংহত বাক্যবিন্যাসে তুলে ধরেছেন। তিনি না থাকলে দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারা একটা কালো অধ্যায়ে পরিণত হতো এবং এ আশঙ্কায় তিনি ২০০৭ সালে লিখেছেন, ‘হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগত আদর্শ থেকে ছিটকে পড়তে পারে দীর্ঘকালের জন্য। সে কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রাসঙ্গিকতা অপরিহার্য।

শেখ হাসিনা পঁচাত্তর-উত্তরকালে কোনো ব্যক্তি থাকেননি, তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন স্বাধীনতার মূল্যবোধজারিত পরিবর্তনের পতাকাবাহী বাংলাদেশের রাজনৈতিক মূলধারার।’ (পৃ ৩০১) শেখ হাসিনা সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন, দুঃখী মানুষের কথা চিন্তা করেছেন, অসহায় মানুষের কথা ভেবেছেন এবং সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য কাজ করছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ভাতা চালু করা ছিল শেখ হাসিনার নিম্নবিত্ত ও অসহায়দের জন্য সহানুভূতির পরিচায়ক একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চিন্তাপ্রসূত।’ (পৃ ৩০০)

‘সংগ্রামের দিনগুলোতে শেখ হাসিনা’ প্রবন্ধে হাসানুল হক ইনু ছাত্রজীবনে একসঙ্গে রাজনীতি করার কথা বলেছেন। শিক্ষাজীবনে তাঁরা একই ধারার রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে তখন থেকেই কাজ করেছেন এবং সেই ধারায় পরে একইসঙ্গে রাজনীতির মাঠে থাকার কথা বলেছেন। তারপর ভিন্ন পথে চললেও একে অপরের সহযোগিতা ছিল সব সময়, এখনো আছে। বিস্তারিত সেসব তুলে ধরে তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যা করা দরকার তা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের মেধা ও মননের কারণেই।

ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা দুর্দান্ত সাহসী ছিলেন, সে কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া অনেক কিছুই সম্ভব নয়, আর অসম্ভবকে সম্ভব করাই শেখ হাসিনার কাজ। তাঁর মন্তব্য হলো, ‘১৯৮২ সালের শুরুতে যা অসম্ভব মনে হয়েছিল, তা সম্ভব হলো ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ফলে।

এখানে ঐক্যের নীতির ওপর বলিষ্ঠভাবে দাঁড়ানো এবং সংসদীয় পদ্ধতির জন্য অটল থাকা, এই দুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দূরদৃষ্টির জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করি। ওই সময় কাছ থেকে দেখেছি তাঁকে। অনেক কথা হয়েছে, অনেক আলোচনা হয়েছে। সবকিছুর শেষ কথা, উনি যা সিদ্ধান্ত নেন, তাতে অটল থাকেন।’ (পৃ ৩৭৬)

৩.শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন তথা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দিনটিকে কেন্দ্র করে যাঁরা প্রবন্ধ লিখেছেন তাঁরা আশির দশকের বাংলাদেশের রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করে জননেত্রীর গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অনুপুঙ্খ বিবরণ প্রদান করেছেন। ইতিহাসের উপকরণ এবং ব্যক্তিগত স্মৃতি মিলেমিশে জীবন্ত হয়ে উঠেছে লেখাগুলোয়। এধারার অন্যতম লেখকরা ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, কবি কামাল চৌধুরী, কবি-সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ এবং ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী ও মুনতাসীর মামুন।

‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা: শেখ হাসিনা’ লেখায় মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাসূত্রে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। আশির দশকের পথযাত্রা থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংগ্রাম, সাহস আর পরিকল্পনামাফিক কাজের বাস্তবায়ন করে চলেছেন জননেত্রী। পাকিস্তানপন্থি চেতনার রাজনৈতিক ধারা ভয়ভীতি, জুলুম, অত্যাচারের পরেও তিনি থেমে থাকেননি। মানুষের কাছ থেকে শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করেছেন। সে সাহসই সামনে এগিয়ে চলায় সাহায্য করেছে। এমন জীবন পরিচালনাকারী বাংলাদেশে দ্বিতীয় মানুষ নেই।

তিনি লিখেছেন, ‘জনগণের ভালোবাসা ও আস্থা শেখ হাসিনার শক্তির উৎস। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিশেষ করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গভীরভাবে ভালোবাসেন। পিতা শেখ মুজিবের স্বাধীন সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নপূরণই শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার অদম্য লক্ষ্য।’ (পৃ ৩০৮)

‘পথ শুধু এগিয়ে চলার’ লেখায় কবি-সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সংগ্রামী জীবনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এই চিত্রও উপস্থাপিত। তিনি বলেছেন, ‘পিতার মতোই গভীর দেশপ্রেম ও দুর্জয় সাহস, প্রজ্ঞা, ধৈর্য, কর্মকুশলতা, কর্মনিষ্ঠা, মেধা, মনন, দক্ষতা নিয়ে সব প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ সম্মুখপানে। মানবমুক্তির লক্ষ্যে। উদার আকাশ আর বিস্তীর্ণ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে উদাত্ত কণ্ঠে দেশবাসীকে আহ্বান করেন যিনি কল্যাণে-মঙ্গলে মানবতার জয়গানের আহ্বানে মুক্তির সংগ্রামে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘পুরো জীবনই তার নিবেদিত বাঙালি এবং এই বাংলার মানুষের জন্য। আর এজন্য তাকে বহুবার হতে হয়েছে মৃত্যুর মুখোমুখি। পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার পর ঘাতক চক্র তাকে বিনাশের কত শত অপচেষ্টা ও চক্রান্তই না চালিয়ে যাচ্ছে আজও।’ এভাবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন থেকে দুর্গম পথ অতিক্রম করে চলার ইতিবৃত্ত লিখেছেন জাফর ওয়াজেদ।

এ ধারার আরও একটি অনন্য লেখা সংকলনভুক্ত হয়েছে, যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার মনোজগতে পরিভ্রমণ করেছে। সুন্দর ও কাব্যিক ভাষায় লেখা প্রবন্ধটি বেশ আকর্ষণীয়। এটি হলো, ‘শেখ হাসিনা: বিরুদ্ধ স্রোতে সাহসী যাত্রা’। এ লেখায় কবি কামাল চৌধুরী শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং সংগ্রাম ও সংগ্রামের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছেন শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে। তিনি দেখিয়েছেন শেখ হাসিনার ভাষা, সংস্কৃতি, লেখনিশক্তির মনোভাবনাসহ ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চিন্তা জনকল্যাণে সম্পৃক্ত।

১৯৫ থেকে ২২৯ পৃষ্ঠাব্যাপী গ্রন্থভুক্ত একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ হলো, ‘জাতির অস্তিত্বের সংগ্রাম: শেখ হাসিনার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুকে অধ্যাপক লেখক মুনতাসীর মামুন এখানে শেখ হাসিনার সংগ্রাম ও অস্তিত্ব টিকে রাখা জীবনের সঙ্গে একীভূত করেছেন বাঙালি জাতির টিকে থাকার অনুধ্যান। এই প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের ৫০ বছরের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনীতির বাক পরিবর্তনের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। দীর্ঘ আলোচনায় তিনি বাংলাদেশের ৫০ বছরে উত্থানপতন দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দেশে দেখেছেন সাধারণ মানুষের লড়াই-সংগ্রাম, দুঃখ-কষ্ট এবং খুনের রাজনীতি। তিনি তুলে ধরেছেন ৫০ বছরের আগের ইতিহাস এবং বর্তমানের চিত্র।

সেসময় পৃথিবীর মানচিত্রে যে চিত্র ছিল বাংলাদেশের তার তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশের উন্নতির দৃশ্যপট আলাদা। এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের পরিচালনার জন্য। আসলে উন্নয়ন চিত্রের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই। আর এজন্য সারা পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের মানুষ বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা করছে। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ এখন সম্ভাবনাময় নয়, বরং ক্ষুদ্র দেশ হিসেবেও পৃথিবীর বুকে আলোয় আলোকিত। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনো নিশানা পেতে আছে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের উন্নতি নষ্ট করার জন্য।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে তথা দেশপ্রেমিকদের সজাগ থাকতে বলেছেন লেখক।তাঁর কথা, ‘নষ্টদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন, আরও পথ পেরোতে হবে। তাঁর এই যাত্রায় আমরা আছি তাঁর সঙ্গে। নষ্টদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, পাকিস্তানি বাঙালিদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, তারা উৎখাত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।’ (পৃ ২২৬) শেখ হাসিনা মানুষকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন। কারও উপকারের কথা ভোলেন না।

লেখকের মতে, ‘আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, শেখ হাসিনার জন্য যদি কেউ এক ছটাক করে থাকেন বা বঙ্গবন্ধুর জন্য, সেই কেউ পরে অন্য রাজনীতি করলে এমনকি দুর্বৃত্ত হলেও শেখ হাসিনা সেই এক ছটাকের কথা ভোলেন না। তার জন্য কিছু না কিছু করেন। বাবার জিন পেয়েছেন তিনি।’ শেখ হাসিনা গভীর শোক ও কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন সে কষ্ট তাঁর বেঁচে থাকার শক্তি এবং চলার পাথেয়। তাঁর মতো দুঃখিনী পৃথিবীতে খুব কমই আছে।

লেখকের ভাষ্য, ‘শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার মতো দুঃখিনী বাংলাদেশে আর কেউ নেই। আমি অনেক সময় বলি ফেমিনিস্ট মনোভঙ্গির বিরোধী হয়ে যে, বাংলাদেশে যদি সিংহপুরুষ ও সিংহহৃদয় কারও থাকে, তবে তা শেখ হাসিনার। পরিবারের একজন বা দুজন একসঙ্গে মারা গেলে পাগল পাগল লাগে। এখন ভাবুন ১৯৭৫ সালের কথা।’ (পৃ ২১৭)

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ১৪৯ থেকে ১৮৪ পৃষ্ঠায় বিশদ আলোচনা করেছেন ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী। প্রবন্ধটি হলো, ‘শেখ হাসিনা: বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত রাজনীতি ও স্বাধীনতার মূল্যবোধভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের সংগ্রামে ব্রতী এক রাষ্ট্রনায়ক’। লেখক এই প্রবন্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন, রাজনৈতিক জীবন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেছেন ১৯৭৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে শেখ হাসিনা যে বিভিন্ন ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজের জীবন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে যে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন- সেই সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই দীর্ঘ প্রবন্ধে।

এক কথায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও এখানে লিপিবদ্ধ। লেখক লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর সম্মুখে রাষ্ট্রের আদর্শের বিসরজনজনিত অসংখ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার তিনি মুখোমুখি হন। বেশ কিছু অপশক্তি তাঁকে হত্যার নানা ষড়যন্ত্র গোপনে যেমন করছিল, একইভাবে তাঁর প্রশাসনকে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যাপকভাবে ব্যস্ত রাখা ও সমালোচিত করারও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিল। শেখ হাসিনা সকল বাধা উপেক্ষা করে শুরু থেকেই অগ্রসর হতে থাকেন।’ (পৃ ১৬৭-১৬৮)

তিনি আরও লিখেছেন, ‘দলের ভেতরের আদর্শকে সংগঠিত, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত রাজনীতি এবং তাঁর কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সাধন করা’ শেখ হাসিনা মূলমন্ত্র।

৪.‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আশীর্বাদ’ লেখায় শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। এখানে দেখা যায় শেখ হাসিনার জীবনের লক্ষ্য-মানুষের কল্যাণে কাজ করা। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বাবা-মা নেই, আমার ভাই নেই, আপনাদের মাঝে আমি আমার বাবা-মা, ভাইদের খুঁজে পেতে চাই।’ সংগ্রামী জীবনের মাধ্যমে তিনি কীভাবে বিশ্বনেত্রী হয়ে উঠেছেন তা এই লেখাটি পড়লে জানা যাবে।

লেখকের একটি মন্তব্য, ‘শেখ হাসিনা এখন আর শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের নেতাও বটে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। পরম করুণাময় আল্লাহই তাঁকে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চান। পরম করুণাময় আল্লাহ যেন তাঁকে সেই সুযোগ দেন, যেন তাঁর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারি।’ (পৃ ৩১৪)

‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন’ বর্ণনা করতে গিয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন। জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত যে জীবন শেখ হাসিনা অতিবাহিত করেছেন তার কিছু অংশ এখানে সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি সারাজীবন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। কোনো বাধা তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।

লেখকের মতে, ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে একজন নির্ভরযোগ্য ত্রাণকর্মী হিসেবে শেখ হাসিনা নামে যে সূর্যের উদয় হয়েছিল, সেই সূর্য আজ মধ্যগগনে দেদীপ্যমান।’

এছাড়াও তিনি লিখেছেন, ‘সংকটের সময়ে দেশের দায়িত্বে থাকাটাই যাঁর জন্য স্বাভাবিক, সেই জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন এক জ্যোতির্ময় আলোর নাম, যা মারাত্মক গ্রেনেড হামলার পরও অনির্বাণ। তিনি বাংলাদেশের মেহনতি কৃষক-শ্রমিক শ্রেণিকে সাহায্য করার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন, অর্থাৎ তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কেবলই জনগণের কল্যাণের সাথে সম্পর্কিত।’ (পৃ ১৯১)

‘বাংলাদেশকে তিনি বিশ্বে নতুন মর্যাদায় উন্নীত করেছেন’ লেখায় আমির হোসেন আমু শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত জীবন তুলে ধরে তাঁর সংগ্রামের চিত্র অঙ্কন করেছেন।জননেত্রী হাজার কষ্টের বোঝা হৃদয়ে নিয়ে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করেছেন। কাজ করে বাংলাদেশকে উন্নীত করেছেন বিশ্ব মর্যাদায়। এজন্য তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা।

বর্ষীয়ান এই নেতা লিখেছেন, ‘সফল রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, শিক্ষানীতি প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, গণতন্ত্র, শান্তি, জঙ্গি দমন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেছেন বহু মর্যাদাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার।’ (পৃ ৩৯)

‘আলোর পথযাত্রী’ প্রবন্ধে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন। নিজে দুঃখী এজন্য তিনি গরিব দুঃখী মানুষকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন। আর এই ভালোবাসাই তাঁর প্রেরণা। রামেন্দু মজুমদার শিল্পীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনা সাহিত্যপ্রেমী, গান ভালোবাসেন এবং শিল্পীদের খবর রাখেন, নিয়মিত বই পড়েন।

নাট্যজন লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় গুণ মানুষের জন্য ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু যেমন সব সময়ই চাইতেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাঁর কন্যাও স্বাভাবিকভাবেই মানবিকতার এ দৃষ্টান্ত বুকে ধারণ করেছেন। তাঁর সকল কাজের চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে সাধারণ মানুষের কল্যাণ। এজন্য তিনি বিশ্বে পরিচিত লাভ করেছেন মানবতার জননী হিসেবে।’ (পৃ ২৭১)

সুভাষ সিংহ রায় তাঁর ‘শেখ হাসিনার পথে পথে পাথর ছড়ানো’ প্রবন্ধে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন, সরল অথচ তীক্ষ্ণ বাগ্মিতা দিয়ে আপনি দেশের জনগণের জন্য আপনার সংগ্রামের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তা হলো ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’।

‘সহপাঠী শেখ হাসিনা, জননেত্রী শেখ হাসিনা’ প্রবন্ধে নিরঞ্জন অধিকারী সহপাঠী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কিছু স্মৃতির বর্ণনা করেছেন। শেখ হাসিনা লেখাপড়া এবং সংগঠনের পাশাপাশি লেখালেখি ভালোবাসতেন। তিনি লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা ছাত্রনেত্রীও ছিলেন। ধৃষ্টতা ও বিনয়ের সঙ্গে বলছি, সতীর্থ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, শেখ হাসিনার উল্লেখ করার মতো সৌন্দর্য ছিল। সৌন্দর্য তা কেবল রূপে হয় না, সৌন্দর্যকে প্রখর করে ব্যক্তিত্ব।

শেখ হাসিনার সেই ব্যক্তিত্ব ছিল। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যেই তাঁর রাজনৈতিক চেতনা এবং সংগঠন শক্তির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।’ বিভিন্ন কারণে লেখাপড়ায় সমস্যা ছিল সেটাও তুলে ধরেছেন তিনি। ক্লাসে শেখ হাসিনা ছিলেন সবার আনন্দের উৎস। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আর তাঁর উপস্থিতিও নিয়মিত ছিল না। পিতা বেশির ভাগ সময় কারাবাসে, দ্বিতীয়ত সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী- এসব কারণে তিনি শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত থাকতে পারতেন না। যেদিন আসতেন, সেদিন ক্লাসে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। তাঁর উপস্থিতি, তাঁর হাসি, তাঁর পরিহাস— সবটাই আমাদের জন্য ছিল আনন্দের।’ (পৃ ১৩০)

‘ইতিহাসের পাতা আলোকিত করা শেখ হাসিনা’ লেখায় পান্না কায়সার শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম দেখা, নানা স্মৃতি এবং জার্মানিতে সাক্ষাতের যে বিবরণ তুলে ধরেছেন তাতে তিনি দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকেই শিশুবান্ধব, শিশুদের সবসময় মায়ের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখেন।

তিনি লিখেছেন, ‘কী সৌভাগ্য। আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গেলো। আপনি আমাদের নেতার মেয়ে। এই কথাগুলো শুনেও উনার চেহারায় সেদিন কোনো দাম্ভিকতা, অহংকার ফুটে ওঠেনি। আমি মনে মনে উনাকে অভিনন্দন জানালাম। এই আমার শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম দেখা।’ (পৃ ১৩৮) সমস্যা মোকাবেলায় তিনি সব সময় কাজ করেছেন এবং করছেন। দেশের যে কোনো সমস্যা তিনি মুহূর্তের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করেন।

‘আমার বন্ধু শেখ হাসিনা’ লেখাটি নাসিমুন আরা হকের স্মৃতিকথায় শেখ হাসিনার সরলতা তুলে ধরা হয়েছে। ‘শেখ হাসিনার দেশ গড়ার সংগ্রাম’ লেখায় গোলাম কুদ্দুছ শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন, মানবিকতাসহ জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।

‘তবু মুখ বুজে মুক্তা ফলাও’ প্রবন্ধে আ ব ম ফারুক বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের কিছু কথা, শেখ হাসিনার বাল্যজীবন এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনাকে নিয়ে ড. আব্দুল খালেক লিখেছেন, ‘স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার ভূমিকা (১৯৮১- ১৯৯০)’। এই সময়ের মধ্যে যে বিভিন্ন ঘটনা শেখ হাসিনার জীবনে ঘটে গেছে, সংগ্রাম ও রাজনীতি তাঁর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারই সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন লেখক।

এছাড়াও নজরুল ইসলাম, নূহ-উল-আলম লেনিন, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি, মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি, মো. মোখলেসুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মোস্তাফা জব্বার, রাশেদ খান মেনন এমপি, শ ম রেজাউল করিম এমপি, ড. শরীফ এনামুল কবির, শেখর দত্ত, শেখ শহীদুল ইসলাম, হারুন হাবীব প্রমুখ ‘শেখ হাসিনা: সংগ্রামী জীবন’ গ্রন্থে মূল্যবান প্রবন্ধ লিখে জননেত্রীর নেতৃত্বের গুণকে মহিমান্বিত করেছেন।

৫.১৯৮১ থেকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের কালখণ্ডে আবর্তিত শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁকে মিশরীয় পুরাণের ফিনিক্স পাখি, দেদীপ্যমান সূর্যের জ্যোতির্ময় আলো কিংবা গ্রিক পুরাণের ইলেকট্রার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসলে ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন নিয়ে ‘শেখ হাসিনা: সংগ্রামী জীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। ঋদ্ধ প্রবন্ধগুলো পড়লে জানা যাবে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের কথা, তাঁর জীবনের বিভিন্ন দ্যুতিময় দিক।

প্রত্যেকটি লেখাই সহজ-সরল ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপিত। একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। শুধু জানতেই ইচ্ছে করে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে। তাঁর ফিনিক্স পাখি হয়ে ওঠা আর বেদনাকে সঙ্গী করে পুনর্জীবিত হওয়ার গল্প। তাঁর জীবনের গল্প রূপকথাকেও হার মানায়।

বইয়ের নাম: শেখ হাসিনা : সংগ্রামী জীবন সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. শামসুল আলম, প্রকাশকাল: ২০২২ প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরামূল্য: ৬০০ টাকা

লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এসইউ/জিকেএস