শিল্প-কারখানার বর্জ্য, কেমিক্যাল, রং প্রভৃতি থেকে দূষণ নতুন কোনো বিষয় নয়। সিরামিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা থেকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে কি না তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। পরিবেশবিদরা বলছেন, এগুলো যেহেতু সলিড ওয়েস্ট প্রডিউস করে সেহেতু দূষণ তো থাকবে। সেভাবে চিহ্নিত করা না হলেও দূষণটা মারাত্মক হওয়ার কথা। আর কারখানা মালিকরা বলছেন, আগে হাত দিয়ে হাঁড়ি বানানোর মতো কাজটি এখন যন্ত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এখানে কোনো রকম কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে না। তাই পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা খুবই কম।
Advertisement
জানা যায়, ষাটের দশকে থালা-বাসন উৎপাদনের মাধ্যমে তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ এদেশে ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে বৃহৎ শিল্পগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে সিরামিক খাত। সিরামিক কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে কৃষিজমি ও নদীর পাড়ে। অসাধু কিছু সিরামিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ আছে। তবে পরিবেশ দূষণে সিরামিক শিল্পের প্রভাব নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা তথ্য নেই পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে। ফলে পরিবেশ দূষণে এই শিল্পের দায় কতটুকু তা নিয়েও নেই আলোচনা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল জাগো নিউজকে বলেন, সিরামিক শিল্পের দূষণ নিয়ে আমাদের খুব ভালো ধারণা নেই। যেহেতু এগুলো সলিড ওয়েস্ট প্রডিউস করে সেহেতু সেগুলো দূষণ করে। দূষণ তো থাকবে, তারা তো কেমিক্যাল ও রং ব্যবহার করে। দূষণ তো অবশ্যই আছে, কিন্তু সেভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। তবে দূষণটা মারাত্মক হওয়ার কথা।
তবে সিরামিক কারখানার মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। ডিবিএল সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জাব্বার জাগো নিউজকে বলেন, সিরামিক পণ্য ব্যবহারে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি নেই। একটা সময় গ্রামে সিরামিক ব্যবহার হতো না। সরকার নিরাপদ স্যানিটেশনে জোর দেওয়ার পর সিরামিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ে। আমরা জানি স্যানিটেশন ভালো না হলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকে। এখন মানুষ কমোড, বেসিন ব্যবহার করছে। সেই জায়গায় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমেছে। টাইলসটা পরিষ্কার করা সহজ, আবর্জনামুক্ত থাকে। আগে মানুষ উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কাজ সারতো। সেখানে পরিবেশ দূষণ হতো, মানুষের রোগ-বালাই হতো।
Advertisement
উৎপাদনেও পরিবেশগত ঝুঁকি নেই জানিয়ে বিসিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা তো মাটি ব্যবহার করি। কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। দিন শেষে মাটি ফর্ম করে ডিজাইন করছি। আগে যেমন হাত দিয়ে হাঁড়ি বানাতাম এখন সেটা যন্ত্রের মাধ্যমে করছি। এখানে কোনো রকম কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে না, সেখানে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা খুবই কম।
বাংলাদেশে সিরামিকস পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) জানায়, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে সিরামিক কারখানার সংখ্যা ৭১টি, আর ব্র্যান্ডের সংখ্যাও ৭০টির কাছাকাছি। বর্তমানে এই শিল্পের বাজার ১০ হাজার কোটি টাকার। স্থানীয় বাজারে যার আকার ৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৮৫ কোটি টাকা।
এসএম/এএসএ/জেআইএম
Advertisement