ধর্ম

কোনো মুসলমানকে কাফের-মুনাফেক বলা যাবে কি?

মুসলমানের মূল্যবান সম্পদ ঈমান। কথা ও কাজে কাফের বা অবিশ্বাসী সাব্যস্ত করতে না পারলে কাউকে কোনোভাবেই কাফের বা অবিশ্বাসী বলা যাবে না। বরং তাকে ঈমানদার মনে করে অন্তর থেকে ভালোবাসতে হবে। এটাই ঈমানের একান্ত দাবি। কিন্তু চাইলেই কি কোনো মুসলমানকে কাফের-মুনাফেক বলা যাবে?

Advertisement

তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মানুষ একে অপরকে কাফের, মুনাফেক কিংবা অনেক খারাপ বিশেষণে বিশেষায়িত করে থাকে। অথচ এমনটি করা কোনোভাবেই উচিত নয়। কারণ কথা ও কাজে ঈমানবিধ্বংসী বক্তব্য না পাওয়া গেলে চাইলেই যে কাউকে কাফের-মুনাফেক বলা যাবে না।

আর কোনো মুসলিমকে কাফের বলে অভিহিত করা কবিরা গুনাহ। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যাকে কাফের বলা হবে সে সত্যিকারে কাফের না হলে যে কাফের বলল তার দিকেই সেটা ফিরে আসবে (তিরমিজি ২৬৩৭; বুখারি ৬১০৩)।নবিজি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার (মুসলিম) ভাইকে কাফের বলাটা তাকে হত্যা করার মতো অপরাধ।’ (মিশকাত ৩৪১০)

বর্তমানে একশ্রেণির ব্যক্তি ও গোষ্ঠী অন্য মুসলিমকে অতি উৎসাহী হয়ে কাফের আখ্যায়িত করতে দেখা যায়। এমনটি করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতে’র নীতিবিরোধী এবং ভ্রান্ত চরমপন্থী আক্বীদার অনুরূপ। সুতরাং কাউকে ‘কাফের-মুনাফেক’ বলার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অবলম্বন করা আবশ্যক। তার মধ্যে কুফরি ও মুনাফেকি থাকতে হবে।

Advertisement

মনে রাখতে হবে, কোনো ব্যক্তিকে ঈমানদার হিসেবে বিশ্বাস করা ও তার ঈমানদার হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট হাদিসটিই যথেষ্ট। আর তাহলো-হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখতে পাও যে, সে নিয়মতি মসজিদে আসা-যাওয়া করে এবং তার (মসজিদের) তত্ত্বাবধান ও খেদমত করে তখন তোমরা ওই ব্যক্তির ঈমান আছে বলে সাক্ষ্য দেবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন- নিশ্চয়ই তারাই মসজিদসমূহের আবাদ রাখে; যারা আল্লাহ ও কেয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস রাখে।’ (মিশকাত, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি)

ইসলাম ও ঈমানদার মানুষকে ভালোবাসা ফরজ বা আবশ্যক করে দিয়েছেন। তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধি-আধিপত্য ও খেয়াল-খুশি মোতাবেক কাউকে যেমন কাফের বলা যাবে না তেমনি কারো কোনো দোষের কারণে তাকে ঘৃণাও করা যাবে না।

যদি কোনো ঈমানদারের মাঝে মন্দ কাজ পাওয়া যায় কিংবা দেখা যায় তবে সে ঈমানদারকে তার মন্দ কাজ থেকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে কিন্তু তাকে ঘৃণা করা যাবে না বরং তাকে ভালোবাসতে হবে। এমনটি করাও ঈমানের আবশ্যক দাবি।

একটি বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরিনিজেদের মতের সঙ্গে মিল না থাকলেই যে কাউকে ইসলাম বিদ্বেষী বা অবিশ্বাসী কাফের, মুনাফেক ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করা যাবে না। যতক্ষণ না ওই ব্যক্তির মাঝে প্রকাশ্য কুফর ও মুনাফেকি প্রকাশ না হয়। বরং অবিশ্বাসী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মসজিদে যাতায়াতকারী, নামাজ-রোজাসহ ইবাদত-বন্দেগি করা ব্যক্তিকে মুমিন-মুসলমান হিসেবে ভালোবাসাও ঈমানের একান্ত দাবি।

Advertisement

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের বিষয়ে একে অপরকে ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। অযথা হিংসাবশতঃ একজন ঈমানদারকে কাফের, মুনাফেক কিংবা খারাপ বিশেষনে আখ্যায়িত করে নিজের ঈমান নষ্ট করা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস