অনেক নাটকীয়তা শেষে নোরা ফাতেহি ঢাকা ছাড়লেন। উড়াল দিলেন আরব আমিরাতে। সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন। এদিকে নোরার নাচ দেখার জন্য টিকিট কিনে যে সকল ভক্ত অধীর আগ্রহে ছিলেন তাদের মন খারাপ!
Advertisement
তিনি মঞ্চে উঠেছেন ঠিকই। তবে নাচেননি। তার নাচ না করা আর সে অুনষঙ্গে ভক্তকুলের মন খারাপ হওয়ার খবর-দুটো নিয়েই অনলাইন-অফলাইনে বিস্তর লেখালেখি চললো। আমি ছা-পোষা মানুষ। খবর পড়েই খুশি। নোরার প্রোগ্রামের টিকিটের দাম শুনতেই ভয় লাগে। কেনার কথা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনে। এ লেখা অবশ্য নোরা বন্দনা নয়। মূল প্রসঙ্গে আসার উছিলা মাত্র।
নোরার প্রোগ্রামের পরদিন টং ঘরে বসে চা খাচ্ছি। সাথে হিমেল ভাই আছেন। আমার খুব কাছের মানুষ । আমাদের একটু দূরে বেঞ্চে বসা দুই তরুণ। তারা চা খাচ্ছে। সাথে টাও মানে ধূম্রশলাকাও টানছে। তাদের আলাপের বিষয়বস্তু ওই নোরাকে নিয়েই এটা বুঝতে পারলাম। হঠাৎ কি হলো কি জানি না। দেখি পরিবেশ গরম! গরম মানে সেইরকম গরম! বুঝলাম বিশ্বকাপ উত্তাপের রেশ শুরু হইছে।
আমাদের চা খাওয়া শেষ। টাকা দিয়ে উঠতে যাব কিন্তু দোকানদার আমাদের ছাড়ছেই না। অনেক দিনের পরিচিত দোকানদার উনি। তার একটাই কথা- ‘এ ঝামেলা শেষ করে দিয়ে যান। না হলে বেচাবিক্রি চাঙ্গে উঠবে।’ এদিকে আমাদেরও ফেরার তাড়া। তবুও অনুরোধে ঢেঁকি না হলেও তখন লাঠিই গিলতে হলো। ঝামেলা তো ফুটবল নিয়ে! এর এমন কি সমাধানই বা আমরা দিবো!
Advertisement
অগত্যা কি আর করা। হিমেল ভাই মাথা চুলকে কি যেন ভেবে নিয়ে ওদের দু’জনকে ডাকলেন। ঝগড়ার বিষয়বস্তু ওই আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল দল নিয়ে। কোন দল ভালো খেলে, কে চ্যাম্পিয়ন হবে, আগে কে কতবার চ্যাম্পিয়ন হইছে- এসব নিয়ে। কিন্তু কথায় আছে না “কেউ কারো নাহি ছাড়ে, সমানে সমান”। এ এক যুক্তি দেয় তো , ও দেয় পাল্টা যুক্তি। কি মুশকিল!
হিমেল ভাই নিজেও ব্রাজিলের সাপোর্টার। আমি শঙ্কায় আছি। উনি আবার ঝামেলা মিটাইতে গিয়া নিজেই ব্রাজিলের পক্ষে কথা বইলা আবার পেঁচগি লাগাইয়া না দেন! কিন্তু আমার আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত কইরা হিমেল ভাই লম্বা এক লেকচার দিলেন। কোথাকার পানি কোথায় নিয়ে গিয়ে ঢাললেন! শুরু করলেন ফুটবল নিয়া । গিয়া থামলেন ক্রিকেটে! গনগনে আগুনে যেন পানি ঢাইলা দিলেন ! দুই তরুণও শেষে চুপ মাইরা গেলো।
এর মধ্যে আমার একটা জরুরি ফোন আইসা পড়ায় আমি ফোনে ব্যস্ত হইয়া পড়লাম। কথা শেষ কইরা আইসা দেখি পরিস্থিতি একদম কুল। পুরাই কুল। তিন জনে বইসা চা খাইতেছে। আমার কথা শেষ হইতেই হিমেল ভাই আমাকে ডাক দিলেন। চা খাইতেছি আর শুনতেছি ; পাশের তরুণ অন্য তরুণরে বলতেছে-
‘দেখলি মরুব্বিদের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাকে সম্মান করতে হয়। খেলার মধ্যে সত্যিকার অর্থে ক্রিকেটই আসল! এমনি এমনি তো আর বলে না এটা ভদ্রলোকের খেলা। তাছাড়া যে খেলায় চার, ছক্কাই নেই সেটা কোনো খেলা হইলো!” পাশের ছেলেটাও দেখি মাথা নাইড়া সায় দিতেছে। আমি বেকুবের মতো চাইয়া আছি! কয় কি! ফুটবলে—চার, ছক্কা!
Advertisement
এরই মধ্যে টং ঘরে আর এক রাজনীতিবিদ আইসা পড়ছেন। উনি তো ফোনে সেই চিল্লানো চিল্লাইতেছেন। ‘খাসি রেডি কর, গরু রেডি কর- উদ্বোধনী দিনেই বিরানি হবে। বড় কইরা পতাকা লাগা। আকাশী-সাদা-হ হ- ঠিক কইছোস- আরে মেসির হাতে কাপ উঠবো— লিইখা রাখ। নেইমার-টেইমারের কোনো খানা নেই। আর পতাকা লম্বা হইব পাঁচ ফুট।”
কত ফুট-পাঁচ নাকি পাঁচশ-যা ইচ্ছে বানাক। শুইনা কাজ নেই আর। পরিস্থিতি আবার গরম কইরা ফালানোর আগেই হিমেল ভাইরে নিয়া সোজা হাঁটা শুরু করলাম। কারণ এহেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চইলা যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
আগে তো দুই তরুণের ঝগড়া থামাইছেন ব্রাজিল সাপোর্টার “রাজনীতিবিদ” হিমেল ভাই। এখন আইসা পড়ছেন আর্জেন্টিনা সাপোর্টার আর এক “রাজনীতিবিদ”। দুই রাজনীতিবিদ যদি লাইগা পড়েন তাইলে সেই উত্তাপ থামাইতে তো দমকলও ফেইল মারবো। একদম লাড্ডুগুড্ডু মার্কা ফেইল যারে কয়! কেউ কারো কথা শুনবোও না। মানবোও না। বলেন তাইলে- কোন আশায় বাঁধি খেলা ঘর?
মনে মনে তাই ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নেই’ এর মতো ‘টং ঘরে বইসা থাইকা আর কাজ নেই’ গানের সুর গুন গুনাইতে নিরাপদ দূরত্বে আইসা পড়লাম।
লেখক: চিকিৎসক ও লেখক।
এইচআর/এমএস