হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, হৃদরোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ, প্রতি বছর আনুমানিক ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রতি ৫ জনে অন্তত ৪ জন করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের কারণে।
Advertisement
হার্ট অ্যাটাককে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কারণ হার্ট অ্যাটাকের আগে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে জার্নাল সার্কুলেশনে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের আগে বেশ কিছু সতর্কতা চিহ্ন থাকতে পারে। যা হার্ট অ্যাটাকের একমাস আগেই প্রকাশ পেতে পারে।
গবেষণায় ৫০০ নারী অংশগ্রহণ করেন যারা হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। মোট অংশগ্রহণকারীদের ৯৫ শতাংশ জানিয়েছেন যে, হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগ থেকেই তারা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
৭১ শতাংশ সাধারণ উপসর্গ হিসেবে ক্লান্তি রিপোর্ট করেন। ৪৮ শতাংশ বলেছেন যে তারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। অন্যরা এতোটাই ক্লান্তি অনুভব করেছিলেন যে, বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারতেন না।
Advertisement
কিছু নারী বুকে চাপ, শক্তভাব ও ব্যথার লক্ষণ রিপোর্ট করেন। হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগে নারীদের শরীরে কোন কোন লক্ষণ দেখা দেয় তা জেনে নিন-
১. অস্বাভাবিক ক্লান্তি২. ঘুমের ব্যাঘাত৩. শ্বাসকষ্ট৪. বদহজম৫. উদ্বেগ৬. বুক ধড়ফড় করা৭. মনোযোগে অভাব৮. চিন্তা বা স্মৃতিতে পরিবর্তন৯. চোখে ঝাপসা দেখা১০. ক্ষুধামান্দ্য১১. হাত বা বাহুতে যন্ত্রণা বা ব্যথা১২. রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
এই লক্ষণগুলো কখনো হালকাভাবে নেবেন না। এষব লক্ষণ দেখলে দ্রুত আপনার হার্ট পরীক্ষা করুন। হার্ট অ্যাটাকের আগে প্রকাশ পাওয়া এসব লক্ষণ বেশিরভাগ মানুষই অবহেলা করেন। যার ফলাফল হতে পারে ভয়ঙ্কর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত হার্ট স্ক্রিনিং ও মেডিকেল চেক আপ করা, রক্তচাপ পরীক্ষা করা জরুরি। ডায়াবেটিস আছে যাদের, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তাদের। এ ধরনের অসুস্থতা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
Advertisement
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়
যে কেউ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপায়ী বা মদ্যপায়ী হলে আপনার হঠাৎ কার্ডিয়াক জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।
হার্ট অ্রাটাক প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা জরুরি। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত, তৈলাক্ত ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এর পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন।
সিপিআর গুরুত্বপূর্ণ
আপনার যদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। যদি কারও হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক ঘটে ও তার শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, তাহলে শরীরে রক্ত প্রবাহ বজায় রাখতে বা পুনরুদ্ধার করতে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) শুরু করুন।
মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, সিপিআর এর সঙ্গে বুকের সংকোচন (১০০-১২০ প্রতি মিনিট) জড়িত। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, যদি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রথম কয়েক মিনিটে সিপিআর করা হয়, তবে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বা তিনগুণ বাড়তে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/এমএস