চিনিকলে এখনো আখ সংগ্রহ শুরু হয়নি। অপরদিকে, থেসার মেশিনে আখ মাড়াই করাতে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জনপ্রিয় ফসল আখ এবার কৃষকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Advertisement
বছরজুড়ে আবাদ করার পর একসঙ্গে বড় অঙ্কের টাকার যোগান দেওয়া ফসল আখ পরিপক্ব হয়ে জমিতেই দাঁড়িয়ে আছে। আখ কেটে রবিশস্য আবাদের জন্য জমি প্রস্তুতও করতে পারছেন না কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, আখ কাটার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তবুও তারা না পারছেন জমির আখ অন্যত্র বিক্রি করতে, আবার না পারছেন নিজেরা মাড়াই করতে। চিনিকল আখ নেওয়ার বিষয়ে এখনো কিছুই জানায়নি। জমি থেকে আখ কাটতে না পারায় গম, মসুর, সরিষা বা অন্য ফসল চাষাবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না। এর ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে থেসার কলে আখ মাড়াই করে গুড় বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিন্তু আখ মাড়াই করতে গেলেই প্রশাসনের লোকজন এসে থেসার আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকরা আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
তবে উল্টো কথা বলছেন রাজশাহী চিনিকলের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আখের এখনো পরিপক্বতা আসেনি। আগামী ডিসেম্বর থেকে আখ সংগ্রহ শুরু করা হবে। কৃষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে সবসময়ই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রবি মৌসুমের সফল আবাদ করার এখনো অনেক সময় আছে।
Advertisement
রাজশাহী চিনিকল সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারীশিল্প কারখানা রাজশাহী চিনিকলের আওতায় ৯টি সাবজোন এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাবজোন চারঘাট।
চিনিকলের মোট আখের ৩০ শতাংশের অধিক আখ এই সাবজোন থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। চারঘাট সাবজোন এলাকায় এবছর ১ হাজার ২৬০ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। আখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। গতবছর আখ চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫৯০ একর জমিতে। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৯০০ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছিল ৬ হাজার ১৮ টন।
উপজেলার রাওথা এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আখের চাষ করেছি। সার, কীটনাশক সব বাকিতে নেওয়া। জমির আখগুলো সময়মতো চিনিকলে দিতে পারলে কিংবা মাড়াই করতে পারলে গম, মসুরসহ অন্য আবাদ করতে পারতাম। কৃষি অফিস বিনামূল্যে গমের বীজও সরবারহ করেছে। কিন্তু আখের কোনো ব্যবস্থা করতে পারছি না। লাভের জিনিস এখন মাথার বোঝা।
জাতীয় কৃষক সমিতি চারঘাট উপজেলার সভাপতি হায়দার আলী বলেন, আখ চাষ করে কৃষকরা মহাবিপদে পড়েছেন। রবি মৌসুম শুরু হলেও কৃষকরা জমি ফাঁকা পাচ্ছেন না। আবার মৌসুমের শেষের দিকে চিনিকল আখ নিলেও টাকা পেতে কৃষকেরা হয়রানির শিকার হন। বাধ্য হয়ে থেসার কলে আখ মাড়াই করলে মেশিন জব্দ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কৃষকদের নিয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া ও মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
Advertisement
চারঘাট সাবজোন প্রধান ও রাজশাহী চিনি কলের উপ-সহকারী আখ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, গতবারের চেয়ে এবার আখের উৎপাদন অনেক কম। আখ পরিপক্ব না হওয়ায় চিনিকলে আখ সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি। তবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে আখ সংগ্রহ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু কিছু কৃষক সরকারি নিয়ম অমান্য করে থেসার কলে আখ মাড়াই করছে।
তিনি আরও বলেন, জমিতে আখ থাকলেও কৃষকদের লোকসান হবে না। কৃষকদের কথা চিন্তা করে চিনিকল আখের দাম বাড়িয়েছে। গতবার ১৪০ টাকা মণ আখ সংগ্রহ করা হলেও এবার ১৮০ মণ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আখের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি চিনিকল বাঁচাতে কৃষকদের সহযোগিতা চান তিনি।
এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, থেসার কলে আখ মাড়াই করলে অনেকটা অংশ অপব্যবহার হয়। এজন্য থেসার কলে আখ মাড়াই করার বিষয়ে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগগুলোর বিষয়ে চিনিকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এমআরআর/এমএস