আজ ১৯ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সামাজিক প্রথা ভেঙে নারীরাও হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত নানা বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই বিশ্বের নারী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানাতে ও নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে মূলত দিবসটি পালন শুরু হয়।
Advertisement
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন বাংলাদেশের নারীরা। তারাও হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে। তেমনই কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তারা জানান নারী উদ্যোক্তা দিবসের নানাবিধ ভাবনা—
জেএনজে ফ্যাশন অ্যান্ড কালেকশনের উদ্যোক্তা জারিন তাসনিম বলেন, ‘নারীদের প্রতিকূলতা, সীমাবদ্ধতার মধ্যেই জীবন অতিবাহিত করতে হয়। আর উদ্যোক্তা জীবন মানে তো বিশাল ব্যাপার। পরিবার যদি সাথে থাকে, সাপোর্ট দেয় তাহলে এগিয়ে যেতে সুবিধা হয়। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমি মনে করি, আমরা যারা এখন ঘরে থেকে কাজ করে স্বনির্ভর হওয়ার মাধ্যমে সামাজে অবদান রাখার চেষ্টা করছি; আমরা যদি কাজের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাই, তাহলে খুব ভালো হবে। যেমন ডেলিভারি এজেন্সির সুবিধা, ডেলিভারি চার্জ নাগালের মধ্যে থাকা, সহজ কিস্তিতে ঋণের সুবিধা পেলে আমাদের কাজকে এগিয়ে নিতে অনেকটা সুবিধা হবে। আমাদের কাঁচামাল পেতেও অসুবিধা হয়। অনেক বোন প্রান্তিক এলাকা থেকে কাজ করেন। কিন্তু কাঁচামাল প্রাপ্তির সুবিধা কম থাকায় তাদের অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। আমার চাওয়া, যেন এ প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।’
ওয়ান স্টোর জারের সায়মা সুলতানা বলেন, ‘আমরা নারীরা এখন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে শিখেছি। নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পরিচয় তৈরি করছি। দিন-রাত পরিশ্রম করছি। অনেক নারী আজও পরিবারের সাপোর্ট পান না। তারা নিজ উদ্যোগে সব কাজ পরিচালনা করছেন নিজ সাহসে। নারী উদ্যোক্তাদের বলতে চাই, বাধা আসবেই। তারপরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের একটি পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নারী উদ্যোক্তাদের।’
Advertisement
উদ্যোক্তা আফরোজা আনিকা বলেন, ‘বর্তমানে ইন্টারনেট কাজে লাগিয়ে বহু নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। এসব নারী উদ্যোক্তা নিজের কাজের পরিচিতি ও প্রসারের জন্য নানা ভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নিজের উদ্যোগ পরিচালনা করছেন। তবে বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তাই কোনো না কোনো ভাবে সাইবার বুলিং ও হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছেন। নারীরা বর্তমানে অনলাইনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমার চাওয়া, নারীর জন্য অনলাইন হোক নিরাপদ। নারী তার কাজের জায়গায় নিশ্চিন্তে-নিরাপদে বিচরণ করুক। নারী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলুক আগামীর পথে।’
ক্লেজের প্রতিষ্ঠাতা কান্তা চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘যুগে যুগে নারী বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে নিজ গন্তব্যের দিকে। সময়ের সাথে সাথে গন্তব্যেও এসেছে পরিবর্তন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বর্তমানে নারীর ছুটে চলা নিজের আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা জীবন বেছে নিয়েছেন বহু নারী। কোভিড শুরুর সময় থেকে গত তিন বছরে অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন। তাই এখন আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস উদযাপনের পরিসর অনেক বড়।’
বাংলাদেশে নারীদের জন্য কাজ করা অনেকটা সহজ হয়েছে সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায়। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় গ্রামেও এখন তৈরি হচ্ছেন নারী উদ্যোক্তা। যারা আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পণ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন দেশ এবং দেশের বাইরে। তবে চ্যালেঞ্জ এখনো আছে।
অনেক নারী উদ্যোক্তা প্রপার গাইডেন্স এবং ডকুমেন্টেশনের অভাবে ঝরে পড়ছেন। অনেকে সম্ভাবনা থাকার পরেও উঠে আসতে পারছেন না। যেহেতু নারীরা আগে ঘর থেকেই বের হতে না পারলেও এখন পারছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারছেন। বেশিরভাগ পরিবারের সহযোগিতা পাচ্ছেন। আশা করি, যে সামান্য প্রতিবন্ধকতা আছে; তা খুব দ্রুতই চলে যাবে।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম