আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ‘উন্মাদনার’ খবর ওয়াশিংটন পোস্টে

রাত পোহালেই পর্দা উঠছে ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরের। এ নিয়ে বরাবরের মতো উন্মাদনায় মেতেছেন বাংলাদেশিরাও। বিশ্বকাপ এলেই এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা মূলত দু’ভাগে ভাগ হয়ে যান- ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এই উত্তেজনার খবর দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকদের নানা কার্যকলাপ নিয়ে বিশাল প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

Advertisement

ওই প্রতিবেদনে কী নেই! ভবনগুলোতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা টানানো, বিশাল বিশাল পতাকা তৈরি, সেতুতে রঙ করা, চায়ের দোকানে তর্কাতর্কি, এমনকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারামারির খবরও উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে।

খবরে বলা হয়েছে, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে এত সব ঘটনা ঘটছে এমন একটি দেশে, যার রাজধানী রিও ডি জেনিরো থেকে সাড়ে নয় হাজার মাইল ও বুয়েন্স আয়ার্স থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মাইল দূরে। এমন একটি দেশে ফুটবল নিয়ে এই উত্তেজনা, যেটিকে ক্রিকেটপাগল বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশের এসব ভক্তরা জীবনে কোনোদিন কোনো ব্রাজিলিয়ান বা আর্জেন্টাইন নাগরিকের দেখা পাবেন, এমন সম্ভাবনা কম হলেও দেশ দুটিকে নিয়ে তাদের উত্তেজনার অভাব নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে সংঘর্ষের খবর পৌঁছে গেছে মেসি-নেইমারদের কাছেও

 ঢাকায় বসবাসকারী আকুয়েদ কাদের চৌধুরী নামে এক ব্রাজিল-ভক্তের মতে, এটি উন্মাদনা! আপনি যদি সত্যিই একে এক কথায় বলতে চান, তবে এটি এমন এক উন্মাদনা, যা গোটা দেশকে জাগিয়ে তোলে।

নোফেল ওয়াহিদ নামে এক আর্জেন্টিনা-ভক্ত বলেন, জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি বড় দেশ। কিন্তু আপনি আর্জেন্টিনা-ভক্ত ও ব্রাজিল-ভক্তদের পরিপ্রেক্ষিতে গোটা দেশকে দু’ভাগে ভাগ করতে পারেন।

তিনি বলেন, এটি একটি মজার বিষয়, তাই না? এটি কোনো যুক্তিই মানে না। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এত দূরে এশিয়ার মাঝামাঝি এই দেশটিতে ফুটবল নিয়ে এমন প্রতিদ্বন্দিতা কেন? এটি ব্যাখ্যা করা কঠিন।

Advertisement

তবে বেশিরভাগের ধারণা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতালাভের পর থেকেই মূলত এই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা উন্মাদনা শুরু। সেসময় মানুষ সাদা-কালো টেলিভিশনের সামনে বসে দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করতেন।

এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেটে দ্রুত উন্নতি করলেও ফিফা র‌্যাংকিংয়ে পড়ে রয়েছে একেবারে তলানিতে। তবু ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের আবেগের কমতি নেই।

আরও পড়ুন>> রাঙ্গামাটিতে ৩ সেতু নিয়ে মেতেছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকরা

এ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। যেমন- ব্রাজিলের খেলা নিয়ে সংঘর্ষের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন বড় পর্দায় খেলা দেখানো বন্ধ, কিংবা ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোল বা ‘হ্যান্ড অব গড’কে অবৈধ বলা নিয়ে বরিশালে মারামারি।

এমনকি, ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ব্রাজিল সাত গোল খাওয়ার পর ব্রাজিল-ভক্তদের ‘সেভেন আপ’ বলে ক্ষেপানোর প্রবণতার কথাও উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে।

তবে এর বড় অংশ জুড়েই ছিল বাংলাদেশিদের ফুটবলপ্রেমের ইতিবাচক দিকগুলো। যেমন- ১৯৯৪ সালে ইতালিকে হারিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতার পরপরই মধ্যরাতে আনন্দে মেতে উঠেছিল বাংলাদেশের রাস্তাঘাট।

তবে বিরল কিছু ক্ষেত্রে এ দেশে বেলজিয়াম বা জার্মানির মতো ফুটবল-ভক্তেরও দেখা পাওয়া যায় এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুন>> পাইকারিতে উধাও আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি, খুচরায় বিক্রি রমরমা

কেএএ/