ধর্ম

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই’র জানাজা ও হজরত ওমরের দুঃসাহসিকতা

মুনাফিকদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলঅিইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজায় গেলেন, সে সময় হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজির সামনে গিয়ে দাঁড়ান এবং দিন তারিখ উল্লেখ করে তার মুনাফেকির বিবরণ দেন আর তার জানাজা দেওয়া প্রসঙ্গে আপত্তি করেন। এ সম্পর্কে পরবর্তীতে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করে মুনাফিকদের জানাজায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে দেন। একটি দীর্ঘ হাদিসে বিষয়টি ওঠে এসেছে। হাদিসটি তুলে ধরা হলো-

Advertisement

হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমি বলতে শুনেছি- আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেলে তার জানাজা আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করা হয়। তিনি সেখানে যেতে শুরু করলেন। তিনি জানাজার উদ্দেশে দাঁড়ালে আমি ঘুরে গিয়ে তার বুক বারবার সামনে দাড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার দুশমন ইবনু উবাইর জানাজা কি আপনি আদায় করবেন, যে অমুক দিন এই কথা বলেছে, অমুক দিন এই কথা বলেছে? এভাবে নির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতে লাগলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসি দিতে থাকলেন।

(হজরত ওমর বলেন) এমনকি আমি যখন তাকে অনেক কিছু বললাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওমর! আমার সামনে থেকে সরে যাও। আমাকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি (জানাজা আদায়ের) এখতিয়ার গ্রহণ করেছি। আমাকে বলা হয়েছে-

اِسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ اَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ ؕ اِنۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِیۡنَ مَرَّۃً فَلَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰهُ لَهُمۡ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ

Advertisement

তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর, এমনকি তুমি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবুও আল্লাহ তা’আলা তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা আত-তওবা : আয়াত ৮০)

(নবিজি বলেন) আমি যদি জানতাম তাদের জন্য সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন, তাহলে আমি তাই করতাম।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজা আদায় করলেন এবং তার জানাজার সঙ্গে গেলেন। তিনি তার কবরের সামনে দাঁড়ান এবং সকল কাজ শেষ করেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আমার দুঃসাহসিকতায় আশ্চর্যবোধ হল। আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। আল্লাহর শপথ! কিছুক্ষণ পরেই এ দুটি আয়াত অবতীর্ণ হয়-

وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِهٖ ؕ اِنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ مَا تُوۡا وَ هُمۡ فٰسِقُوۡنَ

Advertisement

আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে, তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না এবং তার কবরের উপর দাঁড়াবে না। নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তারা ফাসিক অবস্থায় মারা গিয়েছে।’ (সুরা তওবা : আয়াত ৮৪)

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কোনো মুনাফিকের জানাজা আদায় করেননি এবং এদের কবরের পাশেও দাঁড়াননি।’ (তিরমিজি ৩০৯৭)

হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ’আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাবা ’আবদুল্লাহ ইবনু উবাই’ মারা গেলে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এসে বলেন, আপনার জামাটি আমাকে দিন, তা দিয়ে তাকে (বাবাকে) কাফন দেব এবং আপনি তার জানাজা আদায় করুন, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তার জামা দিলেন এবং বললেন, তোমরা (গোসল, কাফন ইত্যাদি থেকে) অবসর হলে আমাকে খবর দিও।

তিনি (নবিজি) নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নিলে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে টেনে ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাজা আদায় করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন; আমাকে দুটো ব্যাপারেই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে- ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর’। যাই হোক তিনি তার জানাজা আদায় করলেন। আল্লাহ তাআলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘তাদের কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তুমি কখনো তার জানাজা আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশেও কখনো দাঁড়াবে না....’ (সুরা আত-তওবা : আয়াত ৮৪)। এরপর তিনি (নবিজি) তাদের জানাজা আদায় করা ছেড়ে দেন।’ (তিরমিজি ৩০৯৮)

এমএমএস/এএসএম