ধৃমল দত্ত (কলকাতা): আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে আর ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে নাগরিকত্ব আইন ইস্যুতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির আঞ্চলিক রাজনীতি। ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস হওয়ার পর উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা ভারত। এবার এই আইন বাস্তবায়নের দাবিতে ঝড় উঠেছে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে।
Advertisement
ভারতে মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। তাদের প্রশ্ন গুজরাটে এই আইনে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও পশ্চিমবঙ্গে কেন হচ্ছে না?
মতুয়া মহাসংঘের নেতা ও বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সিএএ কার্যকর করতে দায়বদ্ধ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সিএএ নিয়ে আড়াই শতাধিক মামলা হয়েছে। যারা এই আইন চায় না তারাই মামলাগুলো করেছে। এসব মামলার নিষ্পত্তি হলেই আইন কার্যকর হয়ে যাবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজ্য সরকারের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, আগামীতে পুরো দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও নতুন নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হবে।
পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি সংসদীয় কেন্দ্র ও ২৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অর্থাৎ, এসব কেন্দ্রে তারাই ফলাফল নির্ধারকের কাজ করে। গোটা রাজ্যে ঠিক কতজন মতুয়া ভোটার রয়েছেন তা কোনো সরকারি তথ্যে জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া ভোটারের মোট সংখ্যা প্রায় দুই কোটি।
Advertisement
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নাগরিকত্বের ইস্যু তুলে মতুয়াদের পাশে পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু নানা কারণে এই আইন বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমনকি, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধি না থাকায় ২০২১ সালের শেষের দিকে দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেন মুকুটমণি অধিকারী, সুব্রত ঠাকুর, অসীম সরকারসহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ক। বিজেপির বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। বিষয়টি নিয়ে সেসময় বেশ শোরগোল হয়েছিল।
রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস শুরু থেকেই সিএএ’র বিরোধিতা করে আসছে। দলের সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ‘আমরা সিএএ কার্যকর করতে দেবো না। আমরা অবস্থানে অনড়।’ তার দাবি, গুজরাট নির্বাচনের আগে এটা চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের কাছে রাজনৈতিক স্টান্ট’র চেয়ে মানুষের জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের সাবেক সংসদ সদস্য ও মতুয়া সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেত্রী মমতা বালা ঠাকুরও। এর পেছনে ভোটের রাজনীতি দেখছেন তিনি। তার মতে, গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, আমাদের দাবি নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। কী প্রমাণপত্রের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা পরিষ্কার নই। সেটা জানার পরেই সঠিকভাবে বলতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ফের এই ইস্যুটিকে জাগিয়ে তুলতে চাইছে।
Advertisement
কেএএ/