বর্তমানে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়াইতলী, ফেনী পরশুরামের বিলোনিয়া ও খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর। এসব স্থলবন্দরের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সময় পেলেই এগুলো উদ্বোধন করা হবে। চারটি স্থলবন্দর উদ্বোধনের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে। বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি বাড়বে সিমেন্ট, প্লাস্টিক ও খাদ্যপণ্যের।
Advertisement
এছাড়া গোবড়াকুড়া-কড়াইতলী দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে কয়লা আমদানি বাড়বে। রামগড় দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকে ভারত যেতে পারবেন। কারণ এখানে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
ইমিগ্রেশন চালু হবে গোবড়াকুড়া-কড়াইতলী স্থলবন্দরে: মেঘালয়ের সেই ঝরনা সবুজাভ পাহাড়শ্রেণি গায়ে মাখিয়ে নেমে এসেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলীর নদীতে। এ নদীর পাশেই নির্মিত হচ্ছে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর। হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক পাশে গোবরাকুড়া এবং ছয় কিলোমিটার দূরে আরেক পাশে কড়ইতলী স্থলবন্দর। এ দুই বন্দর নির্মাণে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্থলবন্দরের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেঘালয় ঘেঁষা দুই স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির নতুন দুয়ার
Advertisement
এখানকার বন্দর দিয়ে আগে কয়লা আমদানি হতো, কিন্তু সেটা এখন বন্ধ। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যোগাযোগ স্থাপন ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তার জন্য ‘গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। পুরোপুরি চালু করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে কড়ইতলী বন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার এবং গোবরাকুড়া বন্দর দিয়ে পণ্য পারাপার হবে। কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার ওপাশে (ভারতের অংশে) মেঘালয় রাজ্যের তোড়া জেলায় গান্ধীনগর গাছুয়াপাড়া শুল্ক স্টেশন অবস্থিত। অর্থাৎ ওই স্টেশনের সঙ্গেই সংযোগ ঘটবে কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার। বন্দর দুটি চালু হলে কেবল কয়লা নয়, ভারতে বিভিন্ন ধরনের পণ্যও রপ্তানি করা হবে। ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য এবং ভুটান ও নেপালে পণ্য পাঠাতে পারবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তখন উত্তর-পূর্বের রপ্তানি বাজারে প্রবেশের অন্যতম দরজা হবে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর।
প্রকল্পের আওতায় স্থলবন্দর দুটিতে ওয়্যারহাউজ, পার্কিং ইয়ার্ড, অফিস ভবন, ওয়েব্রিজ স্কেল, ডরমিটরি ভবন, নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার ব্যারাক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে ২০২২ সালের জুনে। ঢাকা থেকে এই দুটি স্থলবন্দরের দূরত্ব সব থেকে কম, মাত্র ১৮০ কিলোমিটার।
ভারতে প্লাস্টিক ও খাদ্যপণ্য রপ্তানির অন্যতম রুট হবে বিলোনিয়া স্থলবন্দর: ১০ একর জমিতে শতভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কাজ। এটা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। এই বন্দর দিয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু হবে। ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এটা নির্মিত হয়েছে। ১০ একর জমিতে ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, গুদামঘর, তিনতলা অফিস ভবনসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখন চালুর অপেক্ষায়। আগে থেকেই এটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে কার্যকর ছিল। স্থলবন্দরটি চালু হলে প্লাস্টিক পণ্য, জুস, নানা ধরনের পানীয় ভারতের রপ্তানি বাড়বে। ইট, পাথর, সিমেন্ট ও রড রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
অন্যদিকে ভারত থেকে মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, কাঠ, বীজ, কয়লা, গম, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে শুধু একমুখী বাণিজ্য চলে আসছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি-আমদানিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতেন। তবে সেই চিরচেনা সমস্যা আর থাকবে না। মালবাহী ট্রাক সড়কে থাকবে না এখন থেকে পার্কিং ইয়ার্ডে থাকবে। চালকরা টয়লেটসহ বিশ্রামের সুবিধা পাবেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ ট্রাক মালামাল লোড-আনলোড হয়। অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা কারণে বিলোনিয়া সীমান্তে দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাক আটকে থাকে। তবে উদ্বোধনের পরে সেই সমস্যা নিরসন হবে।
Advertisement
পণ্য রপ্তানি-মানুষ যাতায়াতের নতুন দ্বার রামগড়
উদ্বোধনের অপেক্ষায় রামগড় স্থলবন্দর। এখানে ইমিগ্রেশন চালু হবে। ফলে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। অনেকে স্বল্প খরচে এই স্থলবন্দর হয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে ভারতের যেতে পারবেন। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানি-আমদানিও বাড়বে। রামগড় স্থলবন্দর পুরোদমে চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এরইমধ্যে স্থলবন্দর ঘিরে ১০ একর জায়গায় বন্দর টার্মিনাল, সড়কপথ, গুদামঘর, চেকপোস্ট, কাস্টম ও বিজিবি’র জন্য জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পৌঁছাবে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমে। ২০১৫ সালের ৬ জুন ঢাকা সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগড় স্থলবন্দর ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তিপ্রস্তর প্রতিস্থাপন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ফলে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হতে যাচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চারটি স্থলবন্দরের কাজ আমরা শতভাগ সম্পন্ন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেদিন সময় দেবেন সেই দিনই উদ্বোধন করতে পারবো। চলতি বছরের জুন মাসে চারটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়। চারটি স্থলবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। গোবড়াকুড়া-কড়াইতলী দিয়ে এখন কয়লা আমদানি করা হয়। এখানে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে নানা ধরনের খাদ্যপণ্য ভারতের মেঘালয়সহ অন্যান্য রাজ্যে রপ্তানি করতে পারবো। রামগড় স্থলবন্দরের কাজও সমাপ্ত হয়েছে। এখানেও ইমিগ্রেশন চালু হবে। এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য-সেবাও আমদানি রপ্তানি হবে।’
অপার সম্ভাবনার বিলোনিয়া স্থলবন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমাদের অন্যতম রপ্তানি রুট। ভারতের সিমেন্ট, বালি ও প্লাস্টিক পণ্য এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের রপ্তানি করা হয়। কিন্তু অবকাঠামোসহ নানা সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতেন না। এটাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখন ভারতের সেভেন সিস্টার্সে প্লাস্টিক, জুস, চিফস, সিমেন্টসহ নানা পণ্য ও সেবা ভারতের আমদানি বাড়বে এই রুট দিয়ে।
এমওএস/এসএইচএস/এএসএম