দেশজুড়ে

আখাউড়া স্থলবন্দরে স্থবিরতা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেভেন সিস্টারখ্যাত এসব রাজ্যে পণ্য রপ্তানি হয়ে আসছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। কিন্তু দেশটির ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার সঙ্গে পুরো ভারতের রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় তারা এখন অধিকাংশ পণ্য নিজের দেশেই পেয়ে যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরে।

Advertisement

এছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ভারতীয় রুপি ও টাকার মান অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের পর এই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়নি কোনো পণ্য।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে ভারতের ত্রিপুরা পর্যন্ত চার লেন মহাসড়কের কাজ চলছে। এই সড়ক চালু হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের মাছ, শুঁটকি, তুলা, প্লাস্টিক, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন পণ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার সঙ্গে পুরো ভারতের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। আগে আগরতলায় সিঙ্গেল রেললাইন ছিল। তা সম্প্রসারিত করে ডাবল এবং ব্রডগেজে রূপান্তরিত করে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছে দেশটির সরকার। ফলে তারা রেলে নিজ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আসছেন, যা আগে আনতে গেলে দীর্ঘদিন লেগে যেত এবং ব্যয়ও ছিল বেশি। তারা আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে চাহিদা মেটাতেন। রেলে পণ্য পরিবহনে ব্যয় কম হওয়ায় সেদেশের ব্যবসায়ীরা এখন নিজ দেশের পণ্য এনে বিক্রয় করছেন। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের মাছের চাহিদা রয়েছে আগরতলায়। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাছ রপ্তানি হয়। তাও রপ্তানি অর্ধেকে নেমে এসেছে।

Advertisement

এছাড়া সম্প্রতি ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের রপ্তানি বাণিজ্য অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকা ও ভারতীয় রুপির মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই ভারতে পণ্য রপ্তানি করা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন।

আর দীর্ঘদিন ধরে আগরতলা দিয়ে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ। এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে গম, চাল, পেঁয়াজ, আদা ও সিএনজি পার্টস এবং ভুট্টাসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্যের অনুমোদন রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর গম আমদানির চালান আসার পর আর কোনো পণ্য ভারত থেকে এই বন্দর দিয়ে আসেনি। তাও পুরোনো এলসির চালান ছিল এই গম।

এ বিষয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক নাসির উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্দরে আমাদের ব্যবসা অনেকটা কমে গেছে। এর কারণ হচ্ছে ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ডলারের সঙ্গে ভারতের রুপি ও বাংলাদেশের টাকার মূল্য অসামঞ্জস্য রয়েছে। আগে যে পণ্য ছিল ১০০ ডলার, এখন সেই পণ্যের দাম দাঁড়াচ্ছে ১০৫ ডলারে। এর প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। পাশাপাশি আগরতলা ট্রেনে পণ্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। ফলে সেখানে দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকটা কম খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারছেন।’

স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আখাউড়া স্থলবন্দরে ব্যবসার পরিস্থিতি এখন খুব খারাপ। সর্বশেষ গম আমদানির পর আর কিছু আমদানি করা যায়নি। প্রায় দেড় লাখ টন গম ভারত থেকে আমদানি করার কথা থাকলেও দেশটির উচ্চ আদালতের নির্দেশে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এই বন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানি হয়। আমদানি বাড়াতে স্থানীয় এমপি ও আইনমন্ত্রীর কাছে আমরা কিছু পণ্যের তালিকা দিয়েছি, যেন এনবিআরের সাথে কথা বলে আমদানির সুযোগ করতে দিতে পারেন।’

Advertisement

তিনি বলেন, ডলারের মূল্যের কারণে মাছ রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। এছাড়া আমাদের এখান থেকে যেসব পণ্য আগরতলায় রপ্তানি করা হতো, এখন তা তাদের নিজ দেশ থেকে ট্রেনের মাধ্যমে আসছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডলারের মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ ও আশুগঞ্জ-আগরতলা চার লেন সড়ক চালু হলে এই বন্দরে ব্যবসা পরিস্থিতি ভালো হবে।

এদিকে, আমদানি বন্ধ ও রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় স্থলবন্দরের পণ্য খালাসের জায়গা অধিকাংশ সময় থাকে ফাঁকা। ফলে অনেকটা বেকার হয়ে পড়েছে স্থলবন্দরের প্রায় আড়াইশো শ্রমিক।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সুপারিনটেনডেন্ট মো. সামুউল ইসলাম সাম্মু জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসেও আমাদের রাজস্ব আয় ভালো ছিল। এখন তেমন ভালো নেই। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। আশা করছি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডলারের সাথে বাংলাদেশের টাকা সামঞ্জস্যপূর্ণ হোক, ব্যবসা-বাণিজ্য চালু থাকুক।’

এসএইচএস/এএসএম