পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেয়ারবাজারে একের পর এক কারসাজি করেছেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের। যিনি শেয়ারবাজারে হিরু নামে পরিচিত। বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী ও শ্যালক নিয়ে গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই সরকারি কর্মকর্তা। নিজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নাম তুলেছেন কারসাজি চক্রের তালিকায়। শেয়ারবাজারে হিরু ও তার পরিবারের কার্যক্রমকে জুয়ার সঙ্গেও তুলনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
হিরুর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তোলা এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান এবং কাজী ফরিদ হাসান। চক্রটি সিরিজ লেনদেন করে বিভিন্ন কোম্পানির দাম বাড়িয়েছে। যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়ে ওই শেয়ার কিনেছেন, তখন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফাঁদ পেতে শেয়ারবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে আইনের কোনো তোয়াক্কা করেননি হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা। আইন লঙ্ঘন করে নিজেদের মধ্যে সিরিজ লেনদেন করে দাম বাড়িয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে মিলেছে এসব তথ্য। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনেও হিরু এবং তার পরিবারের সদস্যদের কারসাজির চিত্র উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে চলতি বছর আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়ান আবুল খায়ের হিরু। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াতে সরাসরি নেতৃত্ব দেন এই সরকারি কর্মকর্তা। হিরু এবং তার পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কারণে গত ২৯ এপ্রিল থেকে ২৪ মে এর মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে যায়। এক মাসের কম সময়ের মধ্যে ৩৪ টাকার শেয়ারের দাম ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।
Advertisement
সিরিজ লেনদেন করে আইপিডিসির শেয়ারের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিক্রি না করা শেয়ারের বিপরীতেও মোটা অঙ্কের মুনাফা রয়েছে। এর মধ্যে আইপিডিসির শেয়ার বিক্রি করে হিরু ২ কোটি ২৪ লাখ ২ হাজার টাকা, আবুল কালাম মাতবর ৪ কোটি ১১ লাখ ৭৩ হাজার, মোহাম্মদ বাসার ৫০ লাখ ৪২ হাজার, কাজী ফুয়াদ হাসান ৩ হাজার, সাজিদ মাতবর ২৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং আলেয়া বেগম ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন : শেয়ারবাজারে বেপরোয়া কারসাজি চক্র, নিষ্ক্রিয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা
এছাড়া হিরু এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও প্রায় ১৩ কোটি টাকা মুনাফা রয়েছে। শেয়ারবাজারের ভাষায় এই মুনাফাকে ‘আনরিয়েলাইজড গেইন’ বলে। এর মধ্যে হিরু’র ২ কোটি ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানের ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৪ হাজার, আবুল কালাম মাতবরের ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৯ হাজার, কনিকা আফরোজের ৩ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার, কাজী ফরিদ হাসানের ২ লাখ ৩৩ হাজার, কাজী ফুয়াদ হাসানের ৪ লাখ ১২ হাজার এবং আলেয়া বেগমের ৪২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আনরিয়েলাইজড গেইন রয়েছে।
শেয়ারবাজার থেকে এই মুনাফা করতে হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা সিরিজ লেনদেন করে। আইনের তোয়াক্কা না করে শেয়ারের দাম বাড়াতে হিরু এবং তার স্ত্রী সাদিয়ার যৌথ বিও হিসাবে (নম্বর-১৬০৫১১০০৭১০৯১১১৬) থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার নিজের নামে থাকা বিও হিসাব (নম্বর-১৬০৫৫৩০০৫২১৩৭১৪৮) থেকে কেনেন হিরু। এভাবে নিজেদের মধ্যে বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১৭ (ই) (৩) ধারা অনুযায়ী এ ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ।
Advertisement
শুধু আইপিডিসি ফাইন্যান্স নয়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে হিরু বেশ কয়েকটি কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান ওয়ান ব্যাংক। ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবর তার সহযোগীদের (পরিবারের সদস্য) নিয়ে সিরিজ লেনদেন করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ৭০ পয়সায় নিয়ে যান। দুপুর ১টা ৪৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড থেকে দুপুর ১টা ৫৩ মিনিট ২ সেকেন্ডের মধ্যে এই দাম বাড়ানো হয়। এই ১০ মিনিটে চক্রটি ওয়ান ব্যাংকের ২ কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১৯টি শেয়ার লেনদেন করে।
একইভাবে ২২ নভেম্বরও চক্রটি সিরিজ লেনদেন করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ায়। ওইদিন সকাল ১০টা ১ মিনিট থেকে ১০টা ৫ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত চলে তাদের সিরিজ লেনদেন। এই পাঁচ মিনিটে চক্রটি ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৫টি শেয়ার লেনদেন করে। চক্রটির এ ধরনের লেনদেনের ফলে ১৬ টাকা থেকে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম ১৭ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে। এভাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফা সিরিজ লেনদেন করে চক্রটি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১৭ (ই) (৫) ধারা অনুযায়ী এ ধরনের লেনদেন নিষিদ্ধ।
আবুল খায়ের হিরু- সংগৃহীত ছবি
হিরু’র পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কারণে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ে ৫৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এতে ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২০ টাকা ১০ পয়সায় ওঠে। এভাবে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে ওই ১৫ দিনেই চক্রটি ১৪ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়। এছাড়া বিক্রি না করা শেয়ারে আরও ১৪ কোটি ৩৮ লাখ ১১ হাজার টাকা মুনাফা ছিল চক্রটির।
আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারে ‘আলাদিনের চেরাগ’ বিএসসি
এভাবে হিরু কখনো নিজে, কখনো স্ত্রী সাদিয়া, কখনো বাবা আবুল কালাম মাতবর, কখনো বোন কনিকা আফরোজকে সামনে রেখে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন। অবশ্য সামনে যাকেই রাখা হোক প্রতিটি ঘটনায় হিরুর পরিবারের একাধিক সদস্য রয়েছেন। হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরের নেতৃত্বে ফরচুন সুজের শেয়ার দাম ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুনের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এই দাম বাড়ানোর সময়ে কোম্পানিটির শীর্ষ ক্রেতা-বিক্রেতার তালিকায় হিরুর বাবার পাশাপাশি ছিলেন হিরু নিজে, তার স্ত্রী সাদিয়া, বোন কনিকা আফরোজ, শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ। চক্রটি একাধিক দিন সিরিজ লেনদেন করে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ায়।
এর মধ্যে হিরু তার নিজের নামে থাকা সাতটি বিও হিসাব ব্যবহার করে ফরচুন সুজের শেয়ার দাম প্রভাবিত করতে। এছাড়া আবুল কালাম মাতবরের দুটি, কনিকা আফরোজের দুটি, ডিআইটি কো-অপারেটিভের তিনটি, কাজী সাদিয়ার তিনটি বিও হিসাব ব্যবহার করা হয়। এ সময়ের মধ্যে চক্রটি ফরচুন সুজের শেয়ার বিক্রি করে ৬ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়। এছাড়া তাদের কাছে থাকা অবিক্রীত শেয়ারে আরও ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৪ টাকা মুনাফা রয়েছে।
হিরুর স্ত্রী সাদিয়ার নেতৃত্বে ঢাকা ইন্স্যুরেন্স এবং গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হিরু এবং তার স্ত্রীর প্রভাবে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ৩ মে’র মধ্যে মাত্র এক মাসে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম ১০৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বাড়ে। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৪১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াতেও একাধিক দিন সিরিজ লেনদেন করে চক্রটি। এই এক মাসে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বিক্রি করে হিরু এবং তার স্ত্রী সাদিয়া ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেন।
আর গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ২ জুনের মধ্যে বাড়ানো হয় ১১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াতে সাদিয়ার নেতৃত্বে প্রথম সিরিজ লেনদেন করা হয় ২০২১ সালের ২৪ মে। ওইদিন সকাল ১০টা ৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে ১০টা ৩৬ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড পর্যন্ত সিরিজ লেনদেন করে গ্রীন ডেল্টার শেয়ার দাম ৬৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৭৪ টাকা ১০ পয়সায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া ১ জুন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড থেকে ১টা ৩৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের মধ্যে সিরিজ লেনদেন করে সাদিয়া ও তার সহযোগীরা কোম্পানিটির শেয়ার দাম ১০৪ টাকা ২০ পয়সা নিয়ে যায়। আগের দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৯৪ টাকা ৮০ পয়সা। সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে এভাবে শেয়ার দাম বাড়িয়ে সাদিয়ার নেতৃত্বাধীন চক্রটি ওই এক মাসে ১ কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়।
হিরুর বোন কনিকা আফরোজকে সামনে রেখে ২০২১ সালের ৫ মে থেকে ২৪ মে’র মাধ্যমে চক্রটি এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দাম ১২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠায়। কনিকা আফরোজের সঙ্গে ব্যাংকটির শেয়ার দাম বাড়াতে হিরু, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া, বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ প্রভাব বিস্তার করে। এই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে চক্রটি ৫ মে, ৬ মে, ১১ মে, ১২ মে ১৬ মে এবং ২৩ মে সিরিজ লেনদেন করে। এভাবে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে চক্রটি ১৫ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে।
শেয়ারবাজারে কারসাজি করতে হিরু তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিষ্ঠানকেও ব্যবহার করেছেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ। হিরুর মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে সামনে রেখে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে মোটা অঙ্কের মুনাফা তুলে নিয়েছেন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ডিআইটি কো-অপারেটিভের নামে খোলা বিও হিসাব (১৬০৪৫৩০০৬৫৭৫৭৮১১) এবং হিরুর স্ত্রী সাদিয়া, বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং হিরু ও তার স্ত্রীর যৌথ বিও হিসাবের মাধ্যমে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়। চক্রটির ভূমিকায় চলতি বছরের ৭ মার্চ থেকে ১০ মার্চে বিডিকমের শেয়ার দাম ২৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৩৪ টাকা ৩০ পয়সায় ওঠে। অর্থাৎ মাত্র চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৪৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
সহযোগীদের (হিরুর পরিবারের সদস্য) নিয়ে আইন লঙ্ঘন করে সিরিজ লেনদেন করে ডিআইটি কো-অপারেটিভ এই শেয়ার দাম বাড়ায় বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তে উঠে আসে। শেয়ার দাম বাড়িয়ে চক্রটি তিনদিনের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে ১ কোটি ৭০ লাখ ৩ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নেয়। এছাড়া চক্রটির কাছে থাকা অবিক্রীত শেয়ারের আরও ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা মুনাফা ছিল। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও সহযোগীদের ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।
আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারে ‘মার্কেট মেকার’ সনদ চায় সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংস
এভাবে তিন ডজনের বেশি কোম্পানি নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হিরু ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফলে হিরু ও তার পরিবারের সদস্যদের আয় ও সম্পদে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। গত বছরের জুন শেষে হিরুর জমা দেওয়া আয়কর নথির তথ্য অনুযায়ী, ওই অর্থবছর শেষে তার নিট সম্পদ মূল্য ২০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এক বছর আগে যা ছিল মাত্র ৬৫ লাখ টাকারও কম। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে হিরুর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১৯ কোটি টাকার বেশি।
হিরুর থেকে তার পরিবারের আয় আরও বেশি। হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজার থেকে আয় করেছেন ৫০ কোটি টাকার বেশি। বাবা আবুল কালাম মাতবর ২০ কোটি টাকা এবং ছোট বোন কনিকা আফরোজ প্রায় ১৪ কোটি টাকা আয় করেছেন। এক বছরে এই চারজনের আয় প্রায় ১০৬ কোটি টাকা। এই আয় মিলে তাদের সম্পদ মূল্য ২৭৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ২০১৯ সাল শেষে ছিল মাত্র দুই কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ছবি জাগো নিউজ
শেয়ার কারসাজির আয় দিয়ে হিরু শুধু তার ও পরিবারের সম্পদ বাড়াননি বেশকিছু কোম্পানির দখলও নিয়েছেন। মোনার্ক নামে নতুন ই-কমার্স সাইটের ব্যবসার পাশাপাশি গড়েছেন শেয়ার লেনদেনের প্রতিষ্ঠান (ট্রেক) মোনার্ক হোল্ডিং। এমনকি ক্রিকেটে বিপিএলের দলও কেনেন হিরু। বিপিএল’র অন্যতম প্রধান ফ্র্যাঞ্চাইজি বরিশাল ফরচুনের মালিক এই সরকারি কর্মকর্তা। এছাড়া মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের মালিকও তিনি।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেয়ারবাজারে এ ধরনের কারসাজির ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এমনকি গত দুই বছরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হিরু যতটা প্রভাব বিস্তার করেছেন শেয়ারবাজারে এর আগে কেউ এতোটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটান নবীউল্লাহ নবি। তবে নবীউল্লাহ নবি মূল বাজারের বাইরে গিয়ে অবৈধ প্লেসমেন্ট ব্যবসার ফাঁদ পাতেন। তার ফাঁদে পা দেন খেলোয়াড়, চিত্রজগতের তারকাসহ বিভিন্ন খাতের প্রভাবশালীরা। নবীউল্লাহ নবির অবৈধ প্লেসমেন্ট ব্যবসার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি সাহায্য চাইলে ২০১০ সালের ১৫ জুলাই র্যাবের একটি দল নবীউল্লাহ নবিকে গ্রেফতার করে। আটক থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে মারা যান নবীউল্লাহ নবি।
নবীউল্লাহ নবির পর শেয়ারবাজারে সব থেকে আলোচিত হয়েছেন আবুল খায়ের হিরু। এমনকি হিরুকে নিয়ে শেয়ারবাজারে এখন যতটা আলোচনা হয়, নবীউল্লাহ নবিকে নিয়ে এতটা আলোচনা হয়নি। হিরু নবীউল্লাহ নবির মতো প্রভাবশীদের তার ফাঁদে ফেলেছেন। সরকারের ২২ জন সচিবের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। আর শেয়ার কারসাজি করতে গিয়ে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানকেও সরাসরি ব্যবহার করেছেন হিরু।
হিরু নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন তার অন্তত পাঁচটি কোম্পানির শীর্ষ শেয়ার ক্রেতা অথবা বিক্রেতার মধ্যে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে রয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, এনআরবিসি ব্যাংক এবং ওয়ান ব্যাংক। এছাড়া মোনার্ক হোল্ডিংয়ের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান। এই মোনার্ক হোল্ডিংও চক্রটির শেয়ার কারসাজিতে ভূমিকা রেখেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) এক সদস্য বলেন, ২০১০ সালে নবীউল্লাহ নবি শেয়ারবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তবে হিরু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। শেয়ারবাজারে হিরু’র মতো এতো প্রভাব বিস্তার আগে কেউ করতে পারেননি। এমনকি পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে হিরুর মতো কেউ কারসাজিতে জড়িত হননি। শেয়ারবাজারে হিরুর প্রভাব এতটা যে, বড় বড় বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংকও তার পেছনে ছুটেছে। হিরু কোন শেয়ার কিনছে, এটা জানার জন্য সবাই উদগ্রীব হয়ে থাকে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে শেয়ার ব্যবসা করতে কোনো সমস্যা নেই। যদি কারও ফান্ড থাকে সে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসতে পারে। এখন বিষয় হলো সে অনিয়ম করছে কি না? যদি অনিয়ম না করে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। আর যদি অনিয়ম করে তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তি দিতে হবে।
আরও পড়ুন: সি পার্লের শেয়ারের দাম বাড়ছেই, কাজ হচ্ছে না সতর্কবার্তায়ও
কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ১৭ (ই) ধারায় যা বলা আছে, তাতে হিরু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে। অপরাধ প্রমাণ হলে সব মুনাফা তো বটেই, এ পথে উপার্জিত সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত, জেল ও জরিমানা সবই হতে পারে।
কারসাজি নিয়ে করা বিএসইসির তদন্তেই হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান এবং কাজী ফরিদ হাসানের নাম উঠে এসেছে। তবে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পাওয়ার পরও হিরু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি বিএসইসি। কয়েকটি ক্ষেত্রে শুধু জরিমানা করা হয়েছে। অবশ্য চক্রটি শেয়ারবাজার থেকে যে পরিমাণ মুনাফা তুলে নিয়েছে, জরিমানার পরিমাণ তার তুলনায় খুবই কম।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, যদি কারও কারসাজি প্রমাণিত হয়, তাহলে সে কারসাজির মাধ্যমে যে পরিমাণ মুনাফা করেছে, আমি মনে করি তার থেকে কম জরিমানা হওয়া উচিত নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিএসইসির ভুল নীতির কারণে কারসাজি চক্র শেয়ারবাজার থেকে সুযোগ নিচ্ছে। কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, বিএসইসি তা নিতে পারছে না। শেয়ারবাজারে এখন বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। গুটিকয়েক কোম্পানি নিয়ে জুয়া খেলা হচ্ছে। বাকি কোম্পানিগুলো ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে।
এ সময় আবুল খায়ের হিরুর বিষয়ে তিনি বলেন, হিরু মূল নায়ক। সে তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিও হিসাব খুলেছে। মূলত এসব বিও হিসাব সেই পরিচালনা করে। পরিবারের সদস্যদের নামে বিও হিসাব খুলতে আইনে বাধা নেই। তবে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় পরিবারের সদস্যদের নামে এভাবে বিও হিসাব খুলে কারসাজি করতে দেখিনি।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, যখন কোনো সিকিউরিটিজ নিয়ে সন্দেহ হয় কমিশন তদন্ত করে। তদন্তের সময় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তকারী দল। সেখানে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কয়েকটি ধাপে এ কার্যক্রম চলে। আইন লঙ্ঘন ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই জরিমানা করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায় না তাদের জরিমানা করা হয় না।
কারসাজির মাধ্যমে করা মুনাফা থেকে জরিমানা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে রিয়েলাইজড গেইন এবং আনরিয়েলাইজড গেইন দুটিই দেখা হয়। সেই সঙ্গে বিষয়টি কতটা ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত তাও দেখা হয়। সবকিছু মিলেই জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফরচুন সুজের কোম্পানি সচিব রিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ফরচুন সুজের শেয়ার কে কিনলো, কে বিক্রি করলো? কয় টাকায় কিনলো, কয় টাকায় বিক্রি করলো, সেটা কোম্পানির ভেতর থেকে বলতে পারা সম্ভব নয়।
আপনাদের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে, বিষয়টি কি আপনারা জানেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না, এ বিষয়ে আমার কোনো তথ্য জানা নেই। পত্রপত্রিকায় আমি দেখেছি অনেক বেশি বাই-সেল (ক্রয়-বিক্রিয়) করছে। সিরিয়াল ট্রেডিং হয়েছে। একটা গ্রুপ বা একটা ফ্যামিলিকে হয় তো জারিমানা করা হয়েছে, আমি এতোটুকুই জানি। এর সঙ্গে কোম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বিডিকম অনলাইনের কোম্পানি সচিব এ কে এম কুতুব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কোম্পানির শেয়ার দাম যেভাবে ওঠা-নামা করেছে এটা অবশ্যই স্বাভাবিক নয়। শেয়ারের এই দাম ওঠা-নামার ক্ষেত্রে কোম্পানির কোনো হাত নেই। শেয়ার যখন ওঠা-নামা করে স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানির ওপর একটা মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। যেটা কখনই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, একজন বিনিয়োগকারী আমার শেয়ারে তখই বিনিয়োগ করবে, যখন এটার ডিভিডেন্ট ইল্ড ব্যাংকের ইন্টারেস্টের থেকে বেশি হবে। কিন্তু শেয়ারের দাম এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এটা (বিডিকম’র শেয়ার) আর বিনিয়োগের জায়গায় নেই। ট্রেডিং শেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কে শেয়ার কিনছে বা বিক্রি করছে সেই তথ্য আমাদের কাছে থাকে। কিন্তু আমরা কাউকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় না করার জন্য বলতে পারি না। এটা আমাদের পার্ট না। আমাদের দায়িত্ব হলো কোন কোন তথ্য শেয়ার দামের ওপর প্রভাব ফেলবে তা সঠিকভাবে তুলে ধরা। শেয়ারের প্রাইস কোথা থেকে কোথায় যাবে সেটা দেখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে। এটা আমাদের পাট না। এখানে আমরা নাক গলাতে পারি না।
কুতুব উদ্দিন বলেন, আমাদের কোম্পানি খুব বড় না। এ ধরনের ছোট ছোট কোম্পানি হলেই একটা দেশে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠে। এখন দেশে তো ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে না, এর জন্য অনেকগুলো বিষয় জড়িত থাকে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে যদি এ ধরনের কারসাজি করে, মানুষকে (বিনিয়োগকারী) তো পথে বসিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু না।
শেয়ারবাজার কারসাজিতে বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, শ্যালকসহ নিজের নাম এলেও তা নিয়ে বিব্রত নন বলে দাবি করেছেন হিরু। অবশ্য তিনি এও বলেছেন, এখন তিনি আর শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে নেই। সম্প্রতি জাগো নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে হলে তিনি এ দাবি করেন।
জাগো নিউজের পক্ষ থেকে হিরুর কাছে প্রশ্ন রাখা হয় কেউ কেউ বলে আপনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি করছেন, আবার কেউ বলে জুয়ার আসর বসিয়েছেন। আপনি কি এতে বিব্রত? উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে যাই বলে বলুক, আমি বিব্রত না। আমি আর শেয়ারবাজারে নেই।’
শেয়ারবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘জাজমেন্ট নেই। বাজারে অনেক শেয়ারের দাম বেড়েছে, সব তো আমি উঠাইনি। বড় ব্যবসায়ী শেয়ার কিনলে যদি জরিমানা হয়, তাহলে শেয়ার কিনবো কেন।’
তার বাবা আবুল কালাম মাতবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ৮ বছর ধরে শেয়ার ব্যবসা করছি। বিএসইসি আমাকে জরিমানা করেছে, এর জন্য আমার খারাপ লাগে। কিন্তু খারাপ লাগলেও করার কিছু নেই। একটা কাজ করতে গেলে ভালো-মন্দ হতেই পারে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-সংগৃহীত ছবি
শেয়ারবাজারে আপনার কী পরিমাণ বিনিয়োগ আছে? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘অল্পবিস্তর কিছু আছে। এটা হিসাব না করে বলা যাবে না।’
আরও পড়ুন: ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির সেই ২৫ সুপারিশ
এ বিষয়ে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তাকে বলা হয়, শেয়ার কারসাজিতে আপনার, আপনার শ্বশুরবাড়ির সদস্য এবং আপনার ভাইদের নাম পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। পরে কথা হবে। আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ হাফেজ।’এই বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বিভিন্ন শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজী ফুয়াদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’
কারণ কি, আপনি নিজে শেয়ার ব্যবসা করেন না? না-কি আপনার ব্যবসা অন্য কেউ করে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওকে ভাইয়া। এই বলে তিনি মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
শেয়ার কারসাজি নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে কনিকা আফরোজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘আচ্ছা আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি পরে কথা বলবো এটা নিয়ে।’
কেন কথা বলতে চাচ্ছেন না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘দেখুন এগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলার প্রয়োজন নেই। যখন দরকার হবে, তখন অবশ্যই বলবো।’
বিএসইসি আপনাদের জরিমানা করেছে। বিষয়টি আপনারা কীভাবে নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা বিব্রত। যারা জরিমানা করছে তারা ভালোভাবে জানে না, বুঝে না এবং আমাদের বিপক্ষে কথা বলার জন্যই তারা করছে।’
কনিকা অফরোজের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘কয়েক ধাপে চলে তদন্ত। তদন্তে একাধিক কর্মকর্তা কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার কোনো অভাব নেই। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে করা হয়। সুতরাং না বুঝে জরিমানা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’
এমএএস/এসএইচএস/এএসএম