দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে কাটলা মেধাবিকাশ স্কুলে শিক্ষকতা করেন মোস্তাক হোসেন। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে বসে। দীর্ঘ চার বছরের বেশি ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। বর্তমানে ইনসুলিন ও অন্য ওষুধ মিলে মাসে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয় করতে হয় তাকে।
Advertisement
শুধু মোস্তাক হোসেন নয় তার মতো উপজেলার প্রায় তিন হাজারের বেশি রোগী ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, গত কয়েক বছরে এ রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে।
বিরামপুর ডায়াবেটিস সমিতি ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৩ হাজারের বেশি রোগী রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিমাসে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১২০ জন রোগী রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করতে আসেন।
বিরামপুর ডায়াবেটিস সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত গবেষক। গবেষণায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী সাড়ে ১৪ হাজার নারী-পুরুষের রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করা হয়।
Advertisement
এতে দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের শতকরা ১৩ জন ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ নিয়মিত চিকিৎসা নেন। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো ৬২ ভাগই সচেতন নন।
ষাটোর্ধ্ব শামিম হোসেন। বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়া এ বৃদ্ধ বেটারিচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ১০ বছর ধরে ডায়াবেটিসসহ শরীরে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চলছেন তিনি। চিকিৎসা খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
ডায়াবেটিস রোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শামিম বলেন, ‘আগে আমি প্যাডেলওয়ালা রিকশা চালাতাম। রিকশা নিয়ে সড়কে উঠলেই শরীর ঘেমে যেত। সেই সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকতো। এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে শরীর আর ঘামে না। শরীরটা আগের চেয়ে অনেক কষ্টের হয়েছে। আর চলে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সংসারে পাঁচজন সদস্য। দিনে প্রায় ৫০০ টাকা খরচ হয়। আমার ওষুধ, ইনসুলিন নিতে মাসে প্রায় দেড় হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়। শেষ বয়সে আমার চলা দায় হয়েছে।’
Advertisement
জলিল হোসেন নামের আরেক রোগী বলেন, ‘আমরা যে শাক সবজি খাই, অলস জীবন যাপন করি, শরীরের শ্রম দেই না এর ফলেই ডায়াবেটিস রোগ বেশি হচ্ছে। আগে শুনতাম শহরের বড়লোকদের এই রোগ হয়, এখন দেখি গ্রামের মানুষেরও হচ্ছে।’
বিরামপুর ডায়াবেটিস সমিতি ও হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ডায়াবেটিস একটি সারাজীবনের রোগ। এ রোগ সারে না, নিয়ন্ত্রণ হয়। আমাদের অর্ধেক রোগী জানেই না তাদের এ রোগ আছে। রোগ নির্ণয়ের আগেই তারা নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন।
তিনি আর বলেন, আমরা তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য করে এ রোগ নির্মূল করতে পারি। খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করা, পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করা এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করা। শুধু ওষুধের ওপর ভরসা করে এ রোগ নিমূল হবে না।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শ্যামল কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, দিন দিন ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত দুবছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মজার বিষয় হলো যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ৪০ শতাংশের ওজন স্বাভাবিক। দিন দিন মানুষের কায়িক শ্রম কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ওজন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, কম হাঁটা-চলা ও গ্রামে যানবাহন ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় রোগীও বাড়ছে।
এসজে/এমএস