অর্থনীতি

পাইকারিতে উধাও আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি, খুচরায় বিক্রি রমরমা

# খুচরায় দাম বেড়েছে প্রায় চারগুণ# পাইকারি বিক্রেতারাও এখন খুচরা বিক্রি করছেন# ক্রেতা বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের

Advertisement

বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনায় কাঁপছে গোটা বিশ্ব। প্রিয় দলের পতাকা-জার্সি নিয়ে মাতোয়ারা সমর্থকরা। কেউ নিজের বাড়ি, কেউ গাড়ি, কেউ রাস্তা রাঙাচ্ছেন পতাকার রঙে। দীর্ঘতম পতাকা বানানোর প্রতিযোগিতাও থেমে নেই। সমর্থনে শীর্ষে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে এসে পতাকার পাশাপাশি ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে জার্সি নিয়ে। এখানেও এগিয়ে দুই দলের দুই শীর্ষ তারকা মেসি ও নেইমার। রাজধানীতে পতাকা ও জার্সির ব্যবসা এখন রমরমা। চাহিদা এত বেশি যে পাইকাররাও খুচরা বিক্রি শুরু করেছেন। দামও বাড়তি কয়েক গুণ।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান পাইকারি বাজার ও এর আশপাশের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকাররা আর পাইকারি জার্সি-পতাকা সরবরাহ করছেন না। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার সংকট। পণ্য কম থাকায় জার্সি বিক্রি হচ্ছে খুচরায়। এতে লাভ কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। শেষ মুহূর্তে পাইকারদের স্টক শেষ হলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দোকানিরা খুচরা বাজার থেকে বেশি দরে কিনছেন পতাকা।

আরও পড়ুন >> জমি বিক্রির টাকায় শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত পতাকা টানালেন মিন্টু

Advertisement

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই থেকে চারগুণ দাম বেড়েছে জার্সির। এরপরও বিক্রি থেকে নেই, বাড়ছে ক্রেতা। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকা, এরপরই রয়েছে ব্রাজিল। বিক্রি বেড়েছে জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশের পতাকা-জার্সিরও।

রাজধানীর স্পোর্টস মার্কেট খ্যাত গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সে দেখা যায় প্রতিটি পাইকারি দোকানে জার্সি বিক্রি হচ্ছে খুচরায়। দরদাম বেঁধেই ক্রেতা ডাকছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলসি বন্ধের কারণে এখন আর কাপড় আসছে না। আগের কাপড়ে তৈরি জার্সিগুলোই বিক্রি হচ্ছে। কাপড় কম থাকায় এখন আর নতুন জার্সি তৈরি হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই পাইকারির পরিবর্তে খুচরা বিক্রি করছেন তারা।

এ এলাকায় ভালো মানের জার্সি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২শ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়, যেটা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৫শ থেকে ৫৫০ টাকা। ফ্যান ভার্সন জার্সি বিক্রি হচ্ছে ৯শ থেকে হাজার টাকার মধ্যে, আগে যেটা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪শ টাকায়। থাই ভার্সন বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়, যেটা এর আগে ৩শ থেকে ৩৫০ টাকায় পাওয়া যেত।

আরও পড়ুন >> মানিকগঞ্জে ‘আর্জেন্টিনা বাড়ি’ দেখতে ভিড় করছে মানুষ

Advertisement

এছাড়া সাধারণ জার্সি বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। যেগুলো এর আগে বিক্রি হয়েছে ২শ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। দাম বেড়েছে পতাকারও। গুলিস্তান এলাকায় ৫/৩ ফুট পতাকা সপ্তাহ খানেক আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৮০ থেকে ২শ টাকা চাওয়া হচ্ছে। কদর বেড়েছে পতাকার আদলে তৈরি বিভিন্ন ক্যাপের।

এ নিয়ে কথা হয় স্বাধীন বাংলা স্পোর্টসের বিক্রেতা নোমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ১৫ থেকে ২০ দিন ধরেই এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে নতুন করে জার্সির কাপড় আমদানি করা যায়নি। অনেকেই আমদানি করতে পারেনি। ফলে নতুন করে জার্সি তৈরি করাও যাচ্ছে না। যাদের হাতে রিজার্ভ ছিল তারা কাপড়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন >> ৩০ বছর ধরে পতাকা বানান তুষার পাল

একই কথা বলেন আল্লাহর দান স্টোরের ম্যানেজার বাপ্পি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে কাপড় ছিল, এ কারণে জার্সির অভাব পড়েনি। এখন জার্সি বানানোর কাপড় নেই বলে দাম বেড়েছে।

কোন জার্সির চাহিদা বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনার জার্সি, এরপর রয়েছে ব্রাজিল। অন্য দেশের জার্সিও বিক্রি হচ্ছে, তবে সেটা খুবই কম।

নাটোর থেকে হোলসেল বিক্রেতা আমদ আলী এসেছেন জার্সি কিনতে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গুলিস্তান এলাকা থেকে দুই সপ্তাহ আগেও আমি জার্সি নিয়ে এলাকায় বিক্রি করেছি। এখন আর পাইকারি জার্সি পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা বাজার থেকে কিছুটা সংগ্রহ করে এলাকায় বিক্রি করবো।

আরও পড়ুন >> আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে অটোরিকশা সাজালেন আশরাফুল

পাইকারিতে কেন বিক্রি হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে পাইকার ব্যবসায়ী বাপ্পি বলেন, আমার দোকানে মাল থাকলে না পাইকারি বিক্রি করবো। যেখানে মাল নেই সেখানে পাইকারে সেল কীভাবে দেবো। যতটুকু আছে এগুলো খুচরা বিক্রি করার মতো। তাই পাইকারি বন্ধ করে খুচরা বিক্রি করছি।

আরও পড়ুন >> আর্জেন্টিনা সমর্থকদের টেক্কা দিয়ে ব্রাজিলের ৫০০ হাত লম্বা পতাকা

আগামী ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। এবার বিশ্বকাপ হচ্ছে কাতারে। প্রথম ম্যাচ শুরু হবে ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। উদ্বোধনী ম্যাচের পাশাপাশি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হবে ৬০ হাজার আসন বিশিষ্ট আল বাইত স্টেডিয়ামে। রাজধানী দোহা থেকে যা প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে। ৯২ বছরের ঐতিহ্য বদলে জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে এবার নভেম্বর-ডিসেম্বরে গড়াতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ।

ইএআর/এএসএ/এমএস