যাদের বছরে করযোগ্য আয় রয়েছে তাদের অবশ্যই কর দিতে হবে। সময়মতো কর না দিলে জরিমানা সহ নানা ঝামেলায় পড়তে পারেন। জমি রেজিস্ট্রি থেকে শুরু করে ইউটিলিটি সংযোগ, ক্রেডিট কার্ডসহ ৩৮টি পরিষেবা পেতে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
Advertisement
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যাদের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন রয়েছে তাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। তবে রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে তা নয়। কারো আয় যদি করযোগ্য না হয় তাহলে কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু রিটার্ন জমা দিলেই হবে।
প্রতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস জরিমানা ছাড়া বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যায়। ৩০ নভেম্বর দেশে আয়কর দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিনই ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার শেষ তারিখ। আয়কর মেলায় গিয়েও জরিমানা ছাড়াই আয়কর জমা দিতে পারবেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক আয়কর ও আয়কর রিটার্ন জমা দিলে অনেক সুবিধাই পাবেন। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অনেক জায়গায় রিটার্নের স্লিপ প্রমাণ হিসেবে দেখানো বাধ্যতামূলক। যেমন-
Advertisement
সঞ্চয়পত্র ক্রয়পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে আয়কর বা আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে। যেখানে সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদন করবেন, সেখানেই প্রমাণ জমা দিতে হবে।
ব্যাংক ঋণকোনো ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণের আবেদন করলে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দিতে হবে।
ব্যাংকে জমাব্যাংক জমার সুদ আয় থেকে উৎস কর কর্তনে টিআইএন সনদ থাকলে ১০ শতাংশ কাটা হয়ে থাকে। না থাকলে ১৫ শতাংশ কাটা হয়। এখন থেকে টিআইএনের পরিবর্ততে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদরের পৌর এলাকা অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি, বিক্রি, দলিল হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হলে এতদিন শুধু টিআইএন সার্টিফিকেট জমা দিতে হতো। কিন্তু এখন থেকে ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি অফিসে রিটার্ন জমার স্লিপ বা সনদ জমা দিতে হবে।
Advertisement
ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে এখন থেকে আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তিস্বীকার পত্র জমা দিতে হবে।
গাড়ি ক্রয়দুই বা তিন চাকা ছাড়া যে কোনো মোটরগাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতে রিটার্ন জমা স্লিপ দেখাতে হবে। আগে শুধু টিআইএন সার্টিফিকেট দেখিয়ে কাজ হলেও এখন রিটার্ন দাখিলের কপি দিতে হয়।
বাচ্চার স্কুলের ভর্তিসিটি কর্পোরেশন বা জেলা সদর, পৌরসভায় সন্তান বা পোষ্যদের আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের আওতায় ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করাতে হলে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ বা সনদ জমা দিতে হবে।
গ্যাসের সংযোগদেশের যে কোনো স্থানে বাণিজ্যিক বা শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংযোগ নিতে হলে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাসা বাড়ির গ্যাসের সংযোগ নিতে বা আগের সংযোগ বজায় রাখতে হলে রিটার্ন জমার স্লিপ বা সনদ লাগবে।
বিদ্যুৎ সংযোগসিটি কর্পোরেশন বা সেনানিবাস এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে রিটার্নের প্রাপ্তিস্বীকার পত্র জমা দিতে হবে। গ্রাম বা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে অবশ্য এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
সরকারি আয় ও বেসরকারি বেতনসরকার বা সরকারি কোন সংস্থা, কর্পোরেশন থেকে বেতন হিসাবে মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা বেশি হলেই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেওয়ার সময় বার্ষিক আয়কর রিটার্ন প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
নকশার অনুমোদনঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন চাইলে আবেদনপত্রের সঙ্গে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হয়।
জনপ্রতিনিধিজাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলায় কোন নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে আবেদনপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ফান্ডের রিটার্নপেনশন ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ছাড়া অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্সসিটি কর্পোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে হলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে এর বাইরের অন্যান্য এলাকায় এই নিয়ম প্রস্তাব করা হয়নি।
সমবায় সমিতি: সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় কোনো সমিতি বা ক্লাব গঠিত হলে বা এ ধরনের ক্লাবের সদস্য হলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এছাড়াও ডিজিটাল পণ্য ও সেবা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ হস্তান্তরে কমিশন, ফি জাতীয় অর্থ পেতে হলে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এমনকি ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি ইত্যাদি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হলে বা সদস্য হতে চাইলে। বিবাহ নিবন্ধক বা কাজী হিসেবে লাইসেন্স পেতে, আমদানি-রপ্তানির সনদ, আমদানির এলসি খুলতেও আপনাকে আয়কর রিটার্নের কাগজ দেখাতে হবে।
কেএসকে/জিকেএস