খেলাধুলা

কাতার বিশ্বকাপে আপন দুই ভাই খেলবেন দুই দেশের হয়ে

দুই ভাইয়ের বিশ্বকাপ ফুটবলে দুই দেশের হয়ে খেলার নজির এবারই প্রথম নয়। বোয়েটাং সহোদর (জেরোমে বোয়াটেং জার্মানির এবং কেভিন প্রিন্স বোয়ার্টে ঘানার হয়ে) একই বিশ্বকাপে খেলেছেন জার্মানি ও ঘানার হয়ে।

Advertisement

কাতার বিশ্বকাপেও দেখা যাবে দুই ভাইয়ের দুই দেশের জার্সিতে খেলতে। তাই উইলিয়ামস পরিবারের জন্য কাতার বিশ্বকাপটা হবে অন্যরকম। আপন দুই ভাইয়ের একজন ইনাকি উইলিয়ামস খেলবেন ঘানার জার্সিতে। তার ছোট ভাই নিকো উইলিয়ামস খেলবেন স্পেনের জার্সিতে।

ইনাকি ও নিকো দুই ভাইয়ের জন্মই স্পেনে। দুই ভাইয়ের বেড়ে ওঠা ও ফুটবলার হওয়ার গল্পটা রোমাঞ্চকর। তারা এখন ঘরোয়া ফুটবল খেলেন একই ক্লাবে। লা লিগার অ্যাথলেটিকো বিলবাও ক্লাবে দুই ভাইয়েরই আছে তারকাখ্যাতি। নিকো উইলিয়ামস খেলেনে আক্রমণভাগে এবং ইনাকি খেলেন রক্ষণে।

ইনাকি ২০১৩ সালে যখন অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ে যোগ দেন তখন নিকো উইলিয়ামসের বয়স ১১ বছর। তিনি তখন যোগ দিয়েছিলেন অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের যুব দলে। ক্লাবের যোগ দেওয়ার এক বছর পর বিলবাওয়ের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল ইনাকির।

Advertisement

এক বছর আগেও উইলিয়ামস পরিবার ভাবেনি তাদের কোনো ছেলে বিশ্বকাপ খেলবেন। যদিও তখন তাদের বড় ছেলে ইনাকি স্প্যানিশ লিগে ২০৩ ম্যাচ খেলে তারকা বনে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি জাতীয় দল হিসেবে নিজের দেশ ঘানাকেই বেছে নেন।

ছোট ভাই নিকো উইলিয়ামস কেবল শুরু করেছেন তার পেশাদার ক্যারিয়ার। গত বছর অভিষেক হয়েছে অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ে এবং এ বছর অভিষেক হয়েছে স্পেন জাতীয় দলে। এরই মধ্যে তিনি দুটি ম্যাচ খেলেও ফেলেন স্প্যানিশ জার্সিতে। দুই ভাই এখন দুই দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

উইলিয়ামস পরিবারের ঘানা থেকে স্পেন যাওয়ার গল্পটা সিনেমার মতো। তাদের বাবা ফেলেক্স ও মা মারিয়া উন্নত জীবনের সন্ধানে ঘানা থেকে স্পেন গিয়েছিলেন। সেই যাওয়ার কাহিনী ছিল অনেক কষ্টের। ঘানা থেকে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের স্পেনে রওনা হয়েছিলেন তারা। লম্বা এই পথের অনেকটা তারা ছিলের একটি ট্রাকের মধ্যে গাদাগাদি করে। বাকি পথ তারা গিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে।

৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি গরমের মধ্যে সাহারা মরুভূমি দিয়ে তারা হেটে পৌঁছেছিলেন স্পেনের মেলিলায়। তপ্ত বালুর মধ্যে হেঁটে হেঁটে ফেলেক্সের পায়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছিলো। সেটা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষততে রূপ নেয়। যার প্রভাবে এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটেন ফেলেক্স।

Advertisement

      View this post on Instagram      

A post shared by IÑAKI WILLIAMS ARTHUER (@williaaaams11)

ভয়ংকর পথ অতিক্রম করে স্পেনে পৌঁছানোর পর তারা গ্রেফতার হয়েছিলেন অবৈধ অভিবাসনের দায়ে। মুক্তি পাওয়ার পর তারা স্পেনে রাজনৈতিক আশ্রয় পান এবং পরে পান নাগরিকত্ব। বড় ভাই স্পেনের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে তার বাবার দেশ ঘানার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। ঘানার জার্সিতে দুটি ম্যাচও খেলেছেন তিনি। যার একটি ম্যাচ ছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে।

দুই ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য ৮ বছর। সংসার চালানোর উপার্জনের জন্য ইনাকি ও নিকোর বাবাকে প্রায়ই থাকতে হতো বাইরে। যে কারণে, ছোট ভাই নিকোর অভিভাবক ছিলেন ইনাকি। নিকোকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, তার টিফিন তৈরি করে দেওয়া এবং ফুটবল অনুশীলন মাঠে নিয়ে যাওয়া সবই করতেন ইনাকি।

বাবা-মায়ের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইনাকি বলেছেন, ‘আমরা বাবা-মায়ের জন্য গর্বিত। তারা আমাদের জন্য যে কষ্ট করেছেন তার প্রতিদান কখনোই দিতে পারবো না।’

আরআই/আইএইচএস/