চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর পর যে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল দেশটি সেই খেরসন আবার তাদের দখলে। তাই বাঁধভাঙা উল্লাস যেন থামছে না। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ইউক্রেনের সেনাদের স্বাগত জানালো আঞ্চলিক রাজধানী খেরসনের বাসিন্দারা।
Advertisement
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, খেরসনের বাসিন্দারা পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে উল্লাস করছেন ও স্লোগান দিচ্ছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন, আমরা দেশের দক্ষিণাঞ্চল ফিরে পাচ্ছি, আমরা খেরসন ফিরে পাচ্ছি’। তিনি আরও জানান, এরইমধ্যে ইউক্রেনের সেনারা শহরে প্রবেশ করেছে।
খেরসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘খেরসন এখন মুক্ত। এটি একটি ভিন্ন সকাল। প্রত্যেকে এই সকালের জন্য কেঁদেছে’। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনীয় সেনাদের সবাই আলিঙ্গন করতে চায় এই আনন্দঘন মূহুর্তে।
Advertisement
হোয়াইট হাউজের তরফে বলা হচ্ছে, ‘এটি একটি অসাধারণ বিজয়’।
এদিকে, রাশিয়া জানিয়েছে, খেরসন থেকে ৩০ হাজার সেনা সরিয়ে নিয়েছে মস্কো। তবে কোনও সেনা নিহত হয়নি দেশটির। যদিও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ ভিন্ন কথা বলছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের অভিযোগ, খেরসনে লুটপাট চালাচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে বলেন, ‘যুদ্ধ চলছে’। তিনি আরও বলেন, আমরা বুঝতে পারছি যে সবাই এই যুদ্ধের দ্রুত অবসান চায়। এটা অবশ্যই আমাদেরও চাওয়া’।
Advertisement
গত অক্টোবরে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা জোরদার করলে পাল্টা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে ইউক্রেন। সম্প্রতি কিয়েভ জানায়, খেরসনের কাছের অন্তত ৪১টি স্থান পুনর্দখল করেছে ইউক্রেনের সেনারা।
সম্প্রতি ইউক্রেনের অধিকৃত চারটি অঞ্চলের মধ্যে খেরসন একটি যেখানে গণভোটের আয়োজন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় রাশিয়ার পুতিন সরকার। এটি ক্রিমিয়া উপদ্বীপের একমাত্র স্থল রুট যা রাশিয়া ২০১৪ সালে দখল করে এবং দিনিপ্রোর মুখ। দিনিপ্রো ২২০০ কিলোমিটার-দীর্ঘ (১৩৬৭-মাইল) নদী যা ইউক্রেনকে দ্বিখণ্ডিত করে। তবে রাশিয়ার এই গণভোট প্রত্যাখ্যান করে কিয়েভ। পশ্চিমারাও তীব্র নিন্দা জানায় গণভোটের। এমনকি জাতিসংঘ প্রধানও তীব্র নিন্দা জানান এই কথিত গণভোটের। শুধু তাই নয় খেরসন রক্ষায় প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জেলেনস্কির সরকার।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের খেরসন থেকে লোকজন সরাচ্ছে রাশিয়া
অবশেষে গত বুধবার খেরসন থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয় মস্কো। তবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন না।
খেরসন থেকে রুশ সেনারা চলে যাওয়ার পর খেরসন এখন ইউক্রেনের সেনাদের দখলে। সেখানকার মানুষদের আনন্দ-উল্লাস যেন থামছেই না। খেরসনের স্থানীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলো আবারও কিয়েভের খবর সম্প্রচার করা শুরু করেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে কয়েক মাস ধরে। ইউক্রেনের প্রধান কয়েকটি অঞ্চল দখলে নিয়েছে রাশিয়া। তবুও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় মরিয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার সেনারা। খেরসন পুনরুদ্ধার ইউক্রেনের জন্য একটি বড় সাফল্য, বলছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা
এসএনআর/এমএস