চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত কৃষি উদ্যোক্তা ওমর শরীফের বাগান থেকে এ বছর প্রায় ৫ হাজার কেজি মাল্টা বাজারজাত হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে তার বাগানে মাল্টা উৎপাদিত হলেও এ বছর সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে বলে জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা। তার বাগানের মাল্টায় কোনো ধরনের কেমিক্যাল ও ফরমালিন না থাকায় স্থানীয়দের মাঝে বেশ চাহিদা আছে।
Advertisement
সরেজমিনে জানা যায়, সবুজ পাহাড়ে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শরীফের হরেক রকমের বাগানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে মাল্টা। প্রতিটি গাছের মধ্যে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে সবুজ মাল্টা। কোনো কোনো গাছ ফলের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছে। গাছ ও ফলের পরিচর্যায় ব্যস্ত আছেন কর্মচারীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়ের মাটি উর্বর। মধ্যম থেকে দোঁআশ। এখানকার আবহাওয়া শুষ্ক ও উষ্ণ হওয়ায় সাইট্রাস (লেবু) জাতীয় ফল চাষের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এ মাল্টার রং সবুজ হলেও স্বাদ-গন্ধে অতুলনীয়। এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। কেমিক্যাল দিলে বাজারে থাকা বিদেশি মাল্টার মতো রং আনা যায়। কিন্তু সেটি না করে সবুজ রঙের মাল্টা দিয়েই মানুষের মন আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তবে পরিপূর্ণ মাল্টায় কিছুটা হালকা কাঁচা হলুদের রং আসে। এসব মাল্টার বেশ চাহিদাও আছে।
জানা যায়, প্রায় ১০ একর পাহাড়জুড়ে মাল্টা চাষ করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা মো. ওমর শরীফ। ওই জায়গায় ৪ হাজার ৫০০ মাল্টা গাছ আছে। উঁচু-নিচু পাহাড় ও পাহাড়ের ঢালুতে গাছের মধ্যে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো মাল্টা। ২০২০ সাল থেকে বাজারে মাল্টা বিক্রি করছেন তিনি। কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই তার বাগানের মাল্টা বাজারজাত করা হয়।
Advertisement
উদ্যোক্তা ওমর শরীফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে লিজ নিয়ে পাহাড়ে সমন্বিত বাগান করেছি। বেশি জায়গায় মাল্টা ও আম চাষ করেছি। এতদিন শুধু পুঁজি দিয়েছি, এখন ধীরে ধীরে মাল্টা, আম বাজারজাত করছি। এ বছর প্রায় ৫ হাজার কেজি মাল্টা বিক্রি করেছি। আরও প্রায় ২ হাজার কেজি মাল্টা ঝরে গেছে। অনেক মাল্টা আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দিয়েছি। বাজারের তুলনায় আমার বাগানের মাল্টা পাইকারিভাবে অনেক কম দামে বিক্রি করেছি। ৬০ টাকা করে প্রায় ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তিন জাতের মাল্টা বাগান করেছি। এখানে আছে বেরিকেডেট, পাকিস্তানি ও বারি-১ মাল্টা। মাল্টা ছাড়াও বাগানে আছে মিয়াজাকি (সূর্যডিম) কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, ইন্দোনেশিয়ান ব্রুনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, আলফেনসো, আলফানচুন, থাই ব্যানানা আম, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, অ্যাভাকাডো, পুলসান, রাম্বুটান, আপেল, তেঁতুল, থাই সফেদা, চেনাক ফ্রুট, থাই বেরিকেডেট মাল্টা, বারোমাসি মাল্টা, চাইনিজ কমলা, দার্জিলিং কমলা, চায়না-৩ লিচু, লটকন, ভিয়েতনাম নারিকেল। এ ছাড়া জোহরা এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নার্সারিতে অ্যাভাকাডো, রাম্বুটান, পুলসান, ডুরিয়া, ম্যাগোইস্টান, কাজু বাদামের চারা বিক্রি করছি।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাহাড়ে ওমর শরীফের মাল্টা বাগানের কথা শুনেছি। তবে পাহাড়ের অনেক ভেতরে হওয়ায় এখনো যাওয়া হয়নি। একবার পরিদর্শন করে আসবো। মিরসরাইয়ের মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই সহায়ক। বিশেষ করে পাহাড়ের মাটিতে মাল্টা ভালো চাষ হয়। প্রতি বছর মাল্টা চাষ বাড়ছে। মাল্টা গাছের রোগবালাই কম। ফলে কম পুঁজিতে মাল্টা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।’
এম মাঈন উদ্দিন/এসইউ/এমএস
Advertisement