বিয়ের পর ছেলে পক্ষ তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের নিয়ে সামর্থ অনুযায়ী আপ্যায়ন করাকে 'ওলিমা' বলে। বাংলায় প্রচলিত বউভাতই ওলিমা। বরের জন্য বিয়েতে ওলিমা বা বউভাত করা কি জরুরি?
Advertisement
বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য ওলিমা করা সুন্নত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে ওলিমা করেছেন এবং সাহাবিদের ওলিমা করতে বলেছেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জয়নব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করার পরদিনই ওলিমা করেছিলেন। (বুখারি ৫১৭০)
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করার পর যত বড় ওলিমা করেছিলেন, তত বড় ওলিমা তিনি তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর ক্ষেত্রে করেননি। সেই ওলিমা ছিল একটি ছাগল দিয়ে।’ (বুখারি ৫১৬৮)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেছেন, জয়নব বিনতে জাহাশের সঙ্গে বাসর উদযাপনের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওলিমা করলেন। লোকদের তিনি গোশ্ত-রুটি দিয়ে তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালেন।... (বুখারি ৪৭৯৪)
Advertisement
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত ছাফিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ের পর তিন দিন যাবৎ ওলিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা ৩৮৩৪)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত ছাফিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে মুক্ত করে বিয়ে করলেন এবং তাঁর মোহর নির্ধারণ করলেন তাঁর মুক্তিপণ। তিনি তাঁর বিয়ের ওলিমা করেছিলেন ‘হায়স’ নামক খাদ্য দিয়ে, যা খেজুর, পনির ও ঘি দ্বারা তৈরি (এক প্রকার সুস্বাদু হালুয়া) ছিল। (বুখারি ৫১৬৯)
হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে, ওলিমা একটি ইবাদত। এক দিন ওলিমা করা সুন্নত, দুই দিন ওলিমা করা মুস্তাহাব, তিন দিন ওলিমা করা জায়েজ। বিয়ের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে ওলিমা করা যায়। তবে তিন দিনের মধ্যে ওলিমা করা উত্তম।
ওলিমার নির্দেশ
Advertisement
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আবদুর রহমান ইবনে আওফের গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন নারীকে বিয়ে করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিয়েতে বরকত দান করুক। একটি ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওলিমা করো।’ (বুখারি ৫১৫৫, মুসলিম; মিশকাত ৩২১০)
ছেলের জন্য ওলিমা করা সুন্নত। আজকাল মেয়ের বাড়িতেও খাবারের বিশাল আয়োজন করা হয়। এটা শরিয়তসম্মত নয়। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মেয়ের বাড়িতে ভোজের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিয়েতে মেয়েপক্ষের কোনোরূপ খরচ করার কথা নয়। এরপরও যেটা করা হয়, সেটা সৌজন্যমূলক আপ্যায়নমাত্র। কেননা নবিজি বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।...’ (বুখারি ৬০১৮)
ওলিমার ক্ষেত্রে হাদিসের দিকনির্দেশনা হলো আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের সামর্থ অনুযায়ী আপ্যায়ন করা। বকরি দিয়ে ওলিমা করা। সেখানে বর্তমান সময়ে ওলিমার এই সুন্নত বর্জনের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ঠিক নয়।
বিশেষ করে মেয়ে পক্ষের ওপর আপ্যায়নের যে চাপ সৃষ্টি করা হয়, তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি শর্তারোপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সঙ্গে অধিক সংখ্যক লোক নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়িতে মেহমান হয়ে কনের পিতার ওপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কুপ্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। কেননা হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের এ শরিয়তে নাই; এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালো তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারি: ২৬৯৭)
মনে রাখতে হবে
কনেপক্ষের উপর অনিচ্ছাকৃত আপ্যায়নের চাপ ওলিমা নয়, বরং ছেলে পক্ষের সামর্থ অনুযায়ী আপ্যায়নই ওলিমা। আর এ ওলিমা সুন্নত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর ছেলে পক্ষকে সুন্নাত ওলিমা আয়োজনের তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম