আন্তর্জাতিক

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পথের কাঁটা কারা?

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়েই মূলত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আর সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে অপেক্ষায় রয়েছেন বেশ কিছু রাজনীতিবিদ।

Advertisement

রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের ক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেই সুযোগ আবারও পেতে পারেন।

কিন্তু এ সপ্তাহের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল ট্রাম্পের জন্য খুব একটা সুখকর হয়নি। কারণ, তার সমর্থিত বেশ কয়েকজন প্রার্থী হেরে গেছেন। এটি রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও সাবেক প্রেসিডেন্টের ফের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

পরবর্তী নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের বয়স হবে ৭৮ বছর। সম্ভবত তিনি দলের মধ্যেই মনোনয়নপ্রত্যাশী একটি অংশের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। আর এই মনোয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এমন নেতারাও রয়েছেন, যারা একসময় তার অনুসারী ছিলেন।

Advertisement

রন ডিসান্টিসফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস নিজেকে ট্রাম্পের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি ১৫ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

৪৪ বছর বয়সী ডিসান্টিস হার্ভার্ড ও ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তিনি এখনো তুলনামূলক নতুন।

একসময় নৌবাহিনীতে কাজ করেছেন ডিসান্টিস। ইরাকেও গিয়েছিলেন। ২০১৩-১৮ সালের দিকে তিনি প্রতিনিধি পরিষদের স্বল্প পরিচিত সদস্য ছিলেন। তবে ২০১৯ সালে গভর্নর হওয়ার পর থেকে ক্রমশ তারকা হয়ে ওঠেন এ নেতা। বিশেষ করে, তার রক্ষণশীল অবস্থানের কারণে।

আরও পড়ুন>> মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস দখলের পথে ট্রাম্পের দল

Advertisement

তার সময়েই প্রথমবারের মতো রাজ্যে রিপাবলিকান ভোটার ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে তিনি মাস্ক ও ভ্যাকসিন বিষয়ক বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছেন। দাঙ্গাবিরোধী আইন করেছেন এবং স্কুলে সমকামী শিক্ষা সীমিত করতে আইনে সমর্থন জুগিয়েছেন।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিসান্টিসের দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছেন। এমনকি, ২০২৪ সালে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলে তার তথ্য ফাঁস করার হুমকিও দিয়েছেন।

মাইক পেন্সগত বছরের শুরুতে মার্কিন পার্লামেন্টে দাঙ্গার আগপর্যন্ত ট্রাম্পের খুবই অনুগত ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাইক পেন্স।

তার পিতা ছিলেন কোরিয়া যুদ্ধের একজন নায়ক। তবে পেন্সের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো রেডিও উপস্থাপক হিসেবে।

কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী ১৩ বছর তিনি নিজেকে একজন আদর্শ রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং টি পার্টি মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী চার বছর ছিলেন ইন্ডিয়ানার গভর্নর। সে সময় রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর ছাড় দিয়েছিলেন এবং গর্ভপাত সীমিত করতে ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা বিলে সই করেছিলেন তিনি।

৬৩ বছর বয়সী এ নেতা তার ধর্মবিশ্বাসের কারণে আলাদা সুবিধা পাবেন। কারণ খ্রিস্টানদের মধ্যে তিনি যে অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার আলাদা একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল।

আরও পড়ুন>> ১৫ নভেম্বর ‘বড় ঘোষণা’ দেবেন ট্রাম্প

শান্ত ও স্থির প্রকৃতির পেন্সকে দেখা হয় উচ্চকণ্ঠের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকর প্রতিনিধি হিসেবে। যদিও গত নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে রাজি না হওয়ায় পেন্সের সাহসের অভাবকেই দায়ী করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পপন্থিরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল এবং পেন্সের ফাঁসি দাবি করেছিল। একপর্যায়ে তারা তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্টের ৪০ ফুটের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল।

এরপর থেকেই ট্রাম্প ও পেন্সের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তাছাড়া, পেন্স এবারের নির্বাচনে এমন কয়েকজন প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন, যার বিরোধীকে সমর্থন দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে পেন্স কখনো তার সাবেক বসের সরাসরি সমালোচনা করেননি।

লিজ চেনিসাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা লিজ চেনিকে একসময় রিপাবলিকান পার্টির উঠতি তারকা মনে করা হতো। ২০১৭ সালে পিতার আসনে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করায় দলের ভেতর সমর্থন হারান লিজ।

কংগ্রেস ভবনে হামলার পর ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষেও ভোট দিয়েছিলেন তিনি। তবে এই ভূমিকার জন্যেও মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। উওমিং প্রাইমারিতে লিজ ট্রাম্প-সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে ৪০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন: বাইডেন-ট্রাম্পের ভিন্ন পরীক্ষা

ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় কংগ্রেস যে তদন্ত করছে, সেখানে রিপাবলিকান দলের দুজন সদস্যের মধ্যে লিজ একজন। কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

তবে লিজ চেনি এখনো নিজেকে রিপাবলিকান ভাবেন ও দলের পুনরুজ্জীবনের জন্য যা দরকার তাই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

মাইক পম্পেওকানসাস থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য মাইক পম্পেও ২০১৬ সালেই সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্প কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন এবং সংবিধানকে উপেক্ষা করবেন।

মর্যাদাপূর্ণ ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। হার্ভাডে পড়ালেখা করা এই আইনজীবী সিআইএ পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো নীতি থেকে সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছেন পম্পেও। তবে তাকে ঘিরে বিতর্ক রয়েছে। তিক্ততায় জড়িয়েছেন সংবাদকর্মীদের সঙ্গেও।

গ্লেন ইয়াংকিনগত বছর ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে জিতে রিপাবলিকানদের রীতিমতো বিস্মিত করেছিলেন গ্লেন। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের এক প্রভাবশালী প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন তিনি। তার রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাটদের ভোট বাড়ছিল।

বিভাজনের রাজনীতিকে ‘খুবই তিক্ত’ বলে সমালোচনা করেছেন গ্লেন। তবে ৫৫ বছর বয়সী এই নেতা আলোচনায় আসেন দায়িত্ব গ্রহণের দিনই কোভিড বিধিনিষেধ তুলে ফেলা ও স্কুলে ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি শেখানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর।

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবেশ তৈরির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে তিনি কাজ করেছেন। তবে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হামলার বিষয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হয়ে পরে ক্ষমা চেয়েছেন গ্লেন।

নিক্কি হ্যালিএকসময় তাকে রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা মনে করা হতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিক্কির অবস্থা কিছুটা মলিন হয়েছে।

সাউথ ক্যারোলাইনায় পাঞ্জাবি শিখ অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া নিক্কি ২০০৯ সালে সর্বকনিষ্ঠ গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিজেকে ট্রাম্পের ভক্ত নন বললেও ট্রাম্প প্রশাসনের তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধির বক্তব্যের সময় তিনি বিতর্কিতভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

অনেক সমালোচনাও কুড়িয়েছেন ৫০ বছর বয়সী এই নেতা। ট্রাম্প গত বছর নিক্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বলে খবর ছড়িয়েছিল।

রিক স্কটফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা রিক স্কট। এবার সিনেটে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। দেশজুড়ে প্রার্থীদের তহবিল সংগ্রহে কাজ করেছেন।

এর বাইরে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে টেক্সাসের সিনেটর ট্রেড ক্রুজ, ম্যারিল্যান্ডের সাবেক গভর্নর ল্যারি হোগান, টেক্সাসের সাবেক গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ও সাউথ ডাকোটার প্রথম নারী গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েমের নামও শোনা যাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/