সাইফুর রহমান তুহিন
Advertisement
ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার বেশিরভাগই থাকে পর্যটকদের চোখের আড়ালে। তবে অনেকেই আছেন যারা ভিন্ন স্বাদের অনুভূতি নিতে চান ও নিজেদেরকে খুঁজে পান অচেনা কোনো গ্রামকে আবিষ্কারের মাঝেই। ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিস্ময়কর সব অফবিট প্লেস।
এসব জায়গায় ভ্রমণ দারুণ উপভোগ্য ও স্মরণীয়। যারা প্রাণভরে প্রকৃতিকে আবিষ্কার করতে চান তাদের জন্য সেরা হতে পারে উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি স্থান। জেনে নিন তেমনই ৮ স্থান সম্পর্কে-
হাফলং, আসাম
Advertisement
আসামের একমাত্র হিল স্টেশন হাফলং হলো ডিমা হাসাও জেলার সদর দফতর। আপনি নিশ্চয়ই জাতিঙ্গা এলাকার পাখিদের বিখ্যাত আত্মহত্যার কাহিনি কোথাও না কোথাও পড়েছেন। সেখান থেকে হাফলং মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে। পাখিদের আত্মহত্যার রহস্যের এই কল্পকাহিনি এখনো বর্তমান।
বরাইল রেঞ্জ ও জাতিঙ্গা রেঞ্জের নীল পর্বতমালা হাফলংকে বছরজুড়ে আকর্ষণীয় করে রাখে। গভীর বনে ঢাকা হাফলংয়ে সবুজের সমারোহ পাবেন বছরজুড়ে। ঘন কুয়াশা এখানে সবসময়ই থাকে। নজরকাড়া বরাক নদীর উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য হাফলং শহরে যেতেই হবে আপনাকে।
আনিনি, অরুণাচল প্রদেশ
দিবাং ভ্যালি জেলার সদর দফতর হলো আনিনি। বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে জায়গাটি কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এ কারণে অরুণাচল প্রদেশের সবচেয়ে কম ভ্রমণ করা জায়গাগুলোর মধ্যে এটি একটি। অরুণাচল প্রদেশে যারা বেড়াতে যান তারা মূলত তাওয়াং, ইটানগর, জিরো প্রভৃতি স্থান ও ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক ঘুরে দেখতে পছন্দ করেন।
Advertisement
পুরোনো ধাঁচের দৃষ্টিনন্দন শহর আনিনিতে পর্যটকের আনাগোনা একটু কম। ইদু মিশমি উপজাতির বাসভূমি আনিনির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে পুরোপুরি চমকে দেবে। এর পাশাপাশি পাবেন দিবাং, দ্রি ও মিথুন নদী। এগুলো ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী আপনাকে উপহার দেবে মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা।
তুরা, মেঘালয়
মেঘালয় বলতেই লোকজন বুঝেন শিলং, চেরাপুঞ্জি, মাউলিনং প্রভৃতি জায়গাকে এবং এগুলোর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় তুরা। এটি রাজ্যের অন্যতম প্রধান শহর যার অবস্থান ওয়েস্ট গারো হিলস জেলায়।
আবহাওয়াগত দিক বিবেচনায় নিলে তুরা চেরাপুঞ্জি কিংবা শিলংয়ের তুলনায় কম শীতল। আর এ কারণে এখানে আছে চমৎকার জীববৈচিত্র্য। তুরায় অবস্থিত নকরেক বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হচ্ছে সারা ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় ন্যাচার রিজার্ভগুলোর একটি।
আন্দ্রো, মনিপুর
আন্দ্রো কোনো অখ্যাত গ্রাম নয়, তারপরও অজানা কারণে এটি অনেকের চোখ এড়িয়ে যায়। একটু পুরোনো ধাঁচের এই দৃষ্টিনন্দন গ্রামটি হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে নারী মৃৎশিল্পীদের দেখবেন চীনামাটির তৈরি দ্রব্যাদি বানাতে। তবে কাজটি করেন শুধু বিবাহিতা নারীরাই।
মুতুয়া জাদুঘর (আরেক নাম পুতুল জাদুঘর) এমন এক জায়গা যেখানে আপনি পাবেন মনিপুরী উপজাতিদের তৈরি ঐতিহ্যবাহী পুতুলসমূহ। এটি একটি চমকপ্রদ গন্তব্য যেখানে আপনি আবিষ্কার করতে পারবেন স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায় ও তাদের সংস্কৃতিকে।
চাম্ফাই, মিজোরাম
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত চাম্ফাই ছোট্ট কিন্তু ছবির মতো সুন্দর এক শহর। উঁচু-নিচু পাহাড় আর বিস্তীর্ণ জমি চাম্ফাইয়ে আপনাকে স্বাগত জানাবে। পাহাড়ি ও সমতল ভূমির মিশ্রণে চাম্ফাই শীতল আবহাওয়া আর উর্বর ভূমির এক দারুণ সমন্বয়।
টুওফেমা, নাগাল্যান্ড
বেড়ানো কিংবা থাকার জায়গাই হোক না কেন টুওফেমা ট্যুরিস্ট ভিলেজে গেলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। যদি হর্নবিল ফেস্টিভ্যালের সময় সেখানে যান তাহলে টুওফেমা ট্যুরিস্ট ভিলেজের ঐতিহ্যের সঙ্গে আরও ভালোভাবে পরিচিত হতে পারবেন।
আজকালকার দিনে যেখানে আধুনিকতার ছায়ায় ঐতিহ্য ঢাকা পড়ে যায় সেখানে টুওফেমা সযত্নে ধরে রেখেছে সমৃদ্ধ নাগা এতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। একরাত কোনো মোরুংয়ে (এতিহ্যবাহী নাগা কুঁড়েঘর অথবা ডরমিটরি) অবস্থান করলেই টের পাবেন স্থানীয়রা কীভাবে তাদের গৃহনির্মাণ ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
ইউকসোম, সিকিম
পশ্চিম সিকিম জেলার গেইজিং মহকুমায় অবস্থিত ইউকসোম একটি গ্রাম্য ধাঁচের শহর। ঐতিহাসিক এই শহরটিতে অনেক বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে। এটি বাদ দিলে ইউকসোম একটি অনাবিষ্কৃত জায়গা।
সিকিমের প্রথম সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলো ইউকসোম। আরেকটি তথ্য হলো ইউকসোম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ও এটি প্রতিষ্ঠা করেন সিকিমের প্রথম ধর্মরাজা ফুন্টসং নামগিয়াল।
জাম্পুই হিলস, ত্রিপুরা
উত্তর ত্রিপুরা জেলার মিজো হিলস রেঞ্জে অবস্থান জাম্পুই হিলসের। এখানে পাবেন একবারে নির্মল ও বিশুদ্ধ প্রকৃতি। জাম্পুই হিলসের তরতাজা বনভূমি ও পাহাড়ি এলাকা প্রতিনিধিত্ব করে স্থানীয় আদিবাসী উপজাতীয় সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির।
এখানকার মিজোদের বিখ্যাত বাঁশনৃত্য এক নিমেষে আপনার কর্মব্যস্ত জীবনের সব একঘেয়েমি দূর করে দেবে। মন হয়ে উঠবে সতেজ ও প্রাণচঞ্চল।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক।
জেএমএস/জিকেএস