পুরো অগ্রহায়ণ মাস মূলত আমন ধান কাটার মৌসুম। তবে এর আগেই গাইবান্ধায় আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠের সোনালি ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
Advertisement
কৃষকরা বলছেন, এ মৌসুমে ভালো ফলন পেয়ে খুশি তারা। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে বর্তমান বাজার দরে কৃষকের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আমন ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে বুধবার (৯ নভেম্বর) গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়ি ও সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষক ধান কেটে আঁটি বেঁধে কেউ মাথায় করে, আবার কেউ কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। সীমিত পরিসরে বাড়ির উঠানে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। এসব ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা, তেমনি আনন্দও লক্ষ্য করা গেছে।
Advertisement
কথা হয় সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। আজ ২০ শতক জমির ধান কেটেছি।
তিনি বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। তবে আগাম জাতের বিভিন্ন ধান কার্তিকের শেষের দিকে কিছু জায়গায় কাটা শুরু হয়েছে।
রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া এলাকার কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, বীজ থেকে চারা উৎপাদন, চাষ, চারা রোপণ, আইল প্রস্তুতকরণ, নিড়ানি দেওয়া, সার, বালাই দমন, সেচ, কাটা ও মাড়াই মিলিয়ে এবার আমনে বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। তবে দামের ওপর নির্ভর করবে লাভ-লোকসান। ভালো দাম না পেলে আমাদের মরণ দশা হবে।
পলাশবাড়ি উপজেলার বেতকাঁপা ইউনিয়নের মাটেরহাট এলাকার কৃষক ফরিদ আরমান জাগো নিউজকে বলেন, এবার বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ধান মিলবে ১৫ থেকে ১৮ মণ। যদি ধানের দাম কম হয় তাহলে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।
Advertisement
বেতকাঁপা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুশফিকুর রহমান বলেন, এ বছর আমনে প্রতি বিঘায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজার দরের সামঞ্জস্য না থাকলে পাইকার-ফড়িয়াদের খপ্পরে পড়ে তারা পুঁজি হারাতে পারেন।
চলতি বছর আমন চাষে জেলার কৃষকদের বড় কোনো প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হয়নি দাবি করে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১০৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
বর্তমান বাজার দরে কৃষকের লোকসান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এমআরআর/এএসএম