জাতীয়

দুদক থেকে অপসারিত শরীফকে ২ লাখ টাকা বেতনে চাকরির অফার

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরি হারানো মো. শরীফ উদ্দিনকে মাসে দুই লাখ টাকা বেতনে চাকরির অফার (প্রস্তাব) দিয়েছে একটি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। ওই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে তাকে নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু এ এয়ারলাইন্স কোম্পানি নয়, ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান তাকে এখন চাকরি দিতে চায়। তাদের মধ্যে অনেকে চাকরির নিয়োগপত্রও (জয়েনিং লেটার) দিয়েছেন শরীফকে।

Advertisement

বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে শরীফ উদ্দিন জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি ৩০টিরও বেশি কোম্পানিতে চাকরির অফার পেয়েছি। এর মধ্যে এয়ারলাইন্স কোম্পানি, বিদেশি নিরাপত্তা কোম্পানি, হোটেল ট্যুরিজম কোম্পানিও রয়েছে। এয়ারলাইন্স কোম্পানি মাসে দুই লাখ টাকা বেতনে তাদের প্রতিষ্ঠানের সিইও পদে নিয়োগের জন্য আমাকে জয়েনিং লেটারও দিয়েছে।’

শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘বিদেশি একটি ডিফেন্স কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্যও আগ্রহ দেখিয়েছে। আমি যাচাই-বাছাই করে যেকোনো একটিতে যোগদান করবো।’

Advertisement

তবে তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম জানাতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন: দুদকের আলোচিত কর্মকর্তা শরীফ এখন দোকানি

চাকরি হারানোর পর আর্থিক অনটনে পড়েন শরীফ উদ্দিন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে তিনি ভাইয়ের কনফেকশনারিতে কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে গত ৬ নভেম্বর জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব আসতে শুরু করে শরীফের কাছে।

আরও পড়ুন: যে কোনো সময় গুম হয়ে যেতে পারি: চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা

Advertisement

জানা গেছে, দুদকের বড় বড় অভিযোগের ফাইল অনুসন্ধানে নিয়োজিত ছিলেন সংস্থার উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। এরমধ্যে অন্যতম কক্সবাজারে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণ কাজে দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পখ্যাত কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্পে অনিয়ম উদঘাটন, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির উৎস অনুসন্ধান, কর্ণফুলী গ্যাসের বড় বড় রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মামলার সুপারিশ করেছিলেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দিয়েছিলেন শরীফ।

কক্সবাজারের জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ২২ জন আমলা, তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি কাল হয়ে দাঁড়ায় শরীফ উদ্দিনের। ২০২১ সালের ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। পরবর্তীসময়ে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪-এর ২ ধারায় কমিশনের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

আরও পড়ুন: দুদকে রিভিউ আবেদন করবেন চাকরিচ্যুত শরীফ

দুদকের চাকরি বিধিমালা ৫৪(২) ধারায় বলা আছে, ‘এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে ৯০ দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দুদকের মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা বলেন, শরীফের দেওয়া অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উল্টো কোনো আইন না মেনে ওইসব মামলা তদন্তে পুনরায় কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। পুনরায় তদন্ত করে বড় বড় আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির চেষ্টা চলছে।

ইকবাল হোসেন/এএএইচ/এএসএম