রাজশাহী অঞ্চলে ধান ও গমের বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। শুধু কৃষকের মুখেই হাসি নয়, ধান ও গমের ভালো ফলন সমৃদ্ধ করেছে এই অঞ্চলের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাকে। কৃষকের কষ্টে ফলানো এসব ফসল এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলায়। কৃষি বিভাগ বলছে, রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে গত অর্থবছর চাহিদার দ্বিগুণ ধান ও গম উৎপাদন হয়েছে। সময় মতো প্রণোদনার সার-বীজ পাওয়া ও কম সময়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদের কারণে চাহিদার দ্বিগুণ ধান-গম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা।
Advertisement
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল। এই অঞ্চলে ধান ও গমের চাহিদা ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। কিন্তু গত অর্থবছর ধান উৎপাদন হয়েছে ২৯ লাখ ২১ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন। গম উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন ধান ও গম উদ্বৃত্ত থাকছে।
জানা যায়, রাজশাহী জেলায় গত বছর আউস ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন, আমন উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৯ মেট্রিক টন, বোরো ২ লাখ ৭১ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন। গম উৎপাদন হয়েছে ৯৪ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন।
নওগাঁয় গত বছর আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন, আমন ৬ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৭ মেট্রিক টন, বোরো ৭ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ মেট্রিক টন, গম উৎপাদন হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন।
Advertisement
নাটোর জেলায় গত বছর আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন, আমন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন, বোরো ২ লাখ ৮৪ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন, গম উৎপাদন হয়েছে ৯৫ হাজার ৩৯২ মেট্রিক টন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছর আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৫ মেট্রিক টন, আমন ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন, বোরো ১ লাখ ১১ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন, গম উৎপাদন হয়েছে ৯৯ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। এসব উৎপাদনের মধ্য থেকেই বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। বীজের পরিমাণ ছাড়াই নিট উৎপাদন এই পরিমাণে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত দুই বছরেই এই অঞ্চলের চার জেলার ৭৬ হাজার কৃষক এক বিঘা জমিতে ধান চাষের জন্য প্রণোদনার আওতায় ৫ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানবীজ এবং ২০ কেজি করে সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৩ হাজার ২০০ জন কৃষক আউশ, ১ হাজার ৪০০ জন রোপা-আমন হাইব্রিড বীজ এবং ১১ হাজার ৬০০ জন উফশি রোপা-আমন বীজ ও সার পেয়েছেন। ওই বছরই চাষাবাদের জন্য আরও ৬৪৩ জন কৃষককে প্রণোদনার সার-বীজ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ ও ধানের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে উন্নতজাতের ধান চাষ বাড়াচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর। রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে মূলত এখন ব্রি ধান-৭১, ৭৪, ৮৪ ও বোরো মৌসুমে অধিক ফলনশীল ব্রি-৮১, ৮৮ ও ব্রি-৮৯ আবাদ করা হচ্ছে।
Advertisement
রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার কৃষিক আব্দুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আগে ধান করে পয়সাই পেতাম না। এখন উন্নত জাতের ধান চাষ করি। উৎপাদন বেশি হচ্ছে। এছাড়া খড়ের দামও ভালো পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় কম সময়ের ধান লাগিয়ে সেই জমিতে আবার টমেটো ও আলু চাষ করতে পারি। এজন্য এসব ধানের চাহিদা বাড়ছে।
রাজশাহীর পবা এলাকার চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ধান চাষে এখন আমাদের আগ্রহ বাড়ছে। বিঘাপ্রতি ২০-২২ মন ধান হয়- এমন ধানও এসেছে। খড় বিক্রি করেই খরচ উঠে যাচ্ছে। সে কারণে আবারও ধান চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। মনিরুল জানান, গত বছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করলেও এবার ৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করবেন।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি, সেচ সুবিধা ও উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ধান ও গমের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। রাজশাহী জেলায় ধানের জমি কমলেও ধান ও গমের উৎপাদন বেড়েছে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদ। এ বিষয়ে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি বলেন, কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী তিন বছরে নিম্ন ফলনশীল জাতের চাষ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছি। কারণ দেশে মানুষ বাড়ছে, কিন্তু জমির পরিমাণ তো আর বাড়ছে না। এছাড়া কৃষকরাও সচেতন হচ্ছেন। তারাও ফসলের যত্ন নিচ্ছেন। এর ফলেই উৎপাদন বাড়ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষের ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই অঞ্চলে যে ধান ও গম উৎপাদন হয় তার অর্ধেক এখানকার মানুষের চাহিদা পূরণ করে। অবশিষ্ট থেকে বীজ সংরক্ষণ করে বেশিরভাগ ধান-গমই চলে যায় বিভিন্ন জেলায়। এই অঞ্চলের ধান-গম অন্য জেলার চাহিদা মেটাতে কাজে লাগছে।
ইএ/এসএইচএস/এমএস