ভ্রমণ

মাথায় নারকেল ভাঙার অদ্ভুত রীতি!

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের সংস্কৃতি পালিত হয়। কোনো দেশে কনেকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করাই রীতি, আবার কোনো দেশে বিয়ের পর পুরুষরা যায় শ্বশুরবাড়ি!

Advertisement

এমন অসংখ্য রীতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। ঠিক তেমনই ভারতের বিভিন্ন স্থানেও নানা ধরনের অদ্ভুত রীতি পালিত হয়। যা জানলে আপনি রীতিমতো অবাক বনে যাবেন!

কেউ সৌভাগ্যের আশায় গরুর পায়ের নিচে পিষ্ট হন, তো কেউ আবার উপর থেকে ছোট্ট শিশুকে ফেলে দেন তার ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত করতে।

এমন অনেক উদ্ভট কর্মকাণ্ডের প্রচলন আছে ওই দেশে। এমনই এক বিপজ্জনক রীতি, মাথায় নারকেল ভাঙার প্রথা পালিত হয় ভারতের তামিলনাড়ুতে।

Advertisement

তামিলনাড়ুতে প্রতি বর্ষায় প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পালিত হয় ‘আদি পেরুক্কু উৎসব’। এ উৎসবে প্রকৃতির উপাসনায় মগ্ন হন সেখানকার হাজারো মানুষ। এই উৎসবের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো, মাথায় নারকেল ভাঙার প্রথা।

যেখানে প্রতিটি তামিল পরিবার নিজেদের কল্যাণ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ঐশ্বরিক অনুগ্রহ লাভ করতে নানা কর্মকাণ্ড পালন করেন।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাথায় নারকেল ভাঙার অদ্ভুত প্রথা। এই কর্মকাণ্ড বেশ অস্বাভাবিক হলেও তা পালন করেন অনেক ভক্তরা।

মাথায় নারকেল ভাঙার মাধ্যমে তারা দেবতার কাছে নিজেদের সমর্পণ করেন। তাদের ধারণা, এতে করে অতীতের সব পাপকর্ম থেকে নিস্তার দেন দেবতা।

Advertisement

এই রীতি পালন করেন শুধু তারাই, যারা উৎসুক ও আগ্রহী। কাউকে জোরপূর্বক এই রীতি পালতে বাধ্য করা হয় না।

তামিলনাড়ুর করুরের মহালক্ষ্মী মন্দিরের বাইরে হাজারো মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ গ্রহণ করতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেন।

এই আচার চলাকালীন একজন পুরোহিত ভক্তদের মাথা ধরে রাখেন ও অন্য পুরোহিত ওই ব্যক্তির মাথার খুলিতে আঘাত করে নিমিষেই নারকেল ভাঙেন।

অবশ্য এই আচার পালনকালে অনেক মানুষই মাথায় আঘাত পান। পরে দ্রুত তাদেরকে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। কারও কারও মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাইও পড়ে।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দেবতা যাতে তাদের প্রতি রাগান্বিত না হন এজন্য অনেক ধর্মভীড়ুরা মাথায় আঘাত পেলেও চিকিৎসকের কাছে যান না।

আচার পালনের সময় আঘাতপ্রাপ্তদের চিকিৎসায় হলুদের গুঁড়া বা বিভূতি নামক পবিত্র ছাই লাগানোর জন্যও মন্দির চত্বরে সাহায্যকারী মোতায়েন করা হয়।

যদিও এ ধরনের প্রথা অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন সেখানকার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের মতো বেশ কয়েকটি সংস্থা। তারপরও ভক্তদের চাপে রাজ্য কর্তৃপক্ষ এখনো এই উৎসব ও রীতি অনুশীলনের অনুমতি দেয়।

করুর মন্দিরকে ঘিরে যে গল্প প্রচলিত আছে তা হলো, একবার ভক্তরা ভগবান শিবের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করছিলেন। তবে ত্রিশূলধারী এই দেবতা তাদের দেখা দিচ্ছিলেন না।

ভগবান শিবের মতো নারকেলের তিনটি চোখ আছে, এ ধারণাকে কেন্দ্র করে দেবতাকে খুশি করতে নিজেদের মাথায় নারকেল ভাঙতে শুরু করেন ভক্তরা।

অবশেষে শিব তার ভক্তদের সামনে হাজির হয়ে তাদের ইচ্ছা পূরণ করেন। এরপর থেকেই এ ধরনের অদ্ভুত কর্মকাণ্ড প্রথা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।

এই মন্দিরের ভেতরে একটি বিশেষ জাদুঘর আছে। সেখানে বেশ কয়েকটি নারকেল আকৃতির পাথর প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

মহালক্ষ্মী মন্দির করুর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে মহাদানাপুরমে অবস্থিত। এটি একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। মন্দিরটি ৮০০ বছরের পুরোনো, যেখানে মাত্র কয়েকটি যানবাহন চলে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

জেএমএস/জেআইএম