নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, আন্দোলন, সভা-সমাবেশ আয়োজনের মধ্যদিয়ে ততই নিজেদের সংগঠিত করছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলকে সুসংগঠিত করতে সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করছে তারা। একই সঙ্গে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সব শূন্যপদ পূরণ নিয়ে আলোচনা চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। শিগগির দলের শূন্যপদগুলোতে নতুন মুখ দেখা যাবে বলে জানায় দলীয় সূত্র।
Advertisement
তবে আপাতত শূন্যপদ পূরণের চেয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ আয়োজনের দিকে মনোযোগ বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। আগামী ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের পর ক্রমান্বয়ে দলের শূন্যপদ পূরণ করা হবে বলে জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৯ সালের মার্চে শেষ হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ। বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ১৯ পদের মধ্যে শূন্য পাঁচটি। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যানের ১১টি, উপদেষ্টা ১৩টি, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক ৮টি, পদোন্নতি ও পদত্যাগের কারণে ৯টিসহ মোট ৬৬টি পদ শূন্য।
দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে এতগুলো শূন্যপদ থাকলেও স্থায়ী কমিটির সম্ভাব্য নতুন মুখ নিয়ে সিনিয়র নেতাদের আগ্রহ বেশি। এছাড়া সদ্য সাবেক ছাত্রনেতাদের আগ্রহ বিএনপির ছাত্রবিষয়ক এবং সহ-ছাত্রবিষয়ক পদের প্রতি।
Advertisement
সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের শূন্যপদের এই আলোচনায় জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে- দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নাম।
আরও পড়ুন: ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদার কথায় দেশ চলবে: আমান
অন্যদিকে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ এবং সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টুর নাম শোনা যাচ্ছে সাবেক এবং বর্তমান ছাত্রনেতাদের মুখে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সহ-দপ্তর সম্পাদক জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু কাউন্সিল করার অনুকূল পরিবেশ নেই, তাই শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চলতি বছরের শেষ দিকে শূন্যপদগুলো পূরণ করা হতে পারে।
Advertisement
এর আগে সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। তারা হলেন তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
আরও পড়ুন: ‘১০ ডিসেম্বরের পর খালেদার কথায় দেশ চলবে’ / আমান সাহেব স্বপ্নে দেখে বলে ফেলেছেন: তথ্যমন্ত্রী
এছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানানো হয়নি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে দলে সক্রিয় নন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন। অসুস্থ আছেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে বৈঠকে নিয়মিত নন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। আর মামলা জটিলতার কারণে ভারতের শিলংয়ে রয়েছেন আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: ‘বিএনপি ১০ তারিখ ঢাকায় এসে আমাদের নাকি তাড়িয়ে দেবে’
দলের শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জাগো নিউজকে বলেন, দল এখন আন্দোলন কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে দলের আলোচনার মধ্যে রয়েছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, হলে জানানো হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক এটার এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তবে শূন্যপদগুলো পূরণে দলের মধ্যে আলোচনা আছে বলে জানান তিনি।
এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। ওইদিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। যেকোনো মূল্যে ওইদিন ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে চান তারা।
অন্যদিকে আমানউল্লাহ আমানের ওই বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও নানা ফোরামে তার এই বক্তব্য নিয়ে কথা বলছেন। পাশাপাশি পাল্টা সমাবেশেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
কেএইচ/ইএ/এএসএম