ধর্ম

যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কথা বলা যাবে কি?

যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তার পিছনে পড়ো না। আন্দাজে কথা বলো না। অর্থাৎ, কারো প্রতি কুধারণা করো না। কারো ছিদ্রান্বেষণ করো না। অনুরূপ যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তার উপর আমলও করো না। কোরআনুল কারিমে এমনই ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। আয়াতে এসেছে-

Advertisement

 وَ لَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَکَ بِهٖ عِلۡمٌ ؕ اِنَّ السَّمۡعَ وَ الۡبَصَرَ وَ الۡفُؤَادَ کُلُّ اُولٰٓئِکَ کَانَ عَنۡهُ مَسۡـُٔوۡلًا

‘আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩৬)

আয়াতে উল্লেখিত (وَلَا تَقْفُ) শব্দটির সঠিক অর্থ, পিছু নেওয়া, অনুসরণ করা। (ফাতহুল কাদির) সে অনুসারে আয়াতের অর্থ হবে- যে বিষয়ে তুমি জাননা সে বিষয়ের পিছু নিওনা। (ফাতহুল কাদির)

Advertisement

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, বলো না। অপর বর্ণনায় তিনি বলেছেন, যে বিষয় সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কাউকে অভিযুক্ত করো না।

হজরত কাতাদাহ বলেন, যা দেখনি তা বলো না। মুহাম্মদ ইবনুল হানফিয়া বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। (ইবন কাসির)

মোটকথা, যে বিষয় জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বলাকে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে-

قُلۡ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ مَا بَطَنَ وَ الۡاِثۡمَ وَ الۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ اَنۡ تُشۡرِکُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًا وَّ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

Advertisement

‘নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরিক করা; যার কোনো সনদ তিনি পাঠাননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।’ (সুরা আল আরাফ : আয়াত ৩৩)

এ কারণেই কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় ধারনা করে কথা বলা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ

‘তোমরা বিবিধ ধারনা করা থেকে বেঁচে থাক; কেননা কোন কোন ধারনা করা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে।’ (সুরা আল-হুজুরাত : আয়াত ১২)

হাদিসে পাকেও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ধারনা করা থেকে বেঁচে থাক; কেননা ধারনা করে কথা বলা মিথ্যা কথা বলা৷’ (বুখারি ৫১৪৩, মুসলিম ২৫৬৩)

আয়াতের দুটি অর্থ করা হয়ে থাকে

১. কেয়ামতের দিন কান, চোখ ও অন্তর সম্পর্কে তার মালিককে প্রশ্ন করা হবে। প্রশ্ন করা হবে- তুমি সারা জীবন কি কি শুনেছ? প্রশ্ন করা হবে- তুমি সারা জীবন কি কি দেখেছ? প্রশ্ন করা হবে- সারা জীবনে মনে কি কি কল্পনা করেছ এবং কি কি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছ? যদি শরিয়ত বিরোধী কাজ কর্ম করে থাকে, তবে এর জন্য সে ব্যক্তিকে আজাব ভোগ করতে হবে। (ফাতহুল কাদির)

২. কেয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এ ব্যাপারে স্বয়ং সাক্ষ্য দেবে। কারণ আল্লাহ সেগুলোকে প্রশ্ন করবেন। এটা হাশরের ময়দানে গুনাহগারদের জন্য অত্যন্ত লাঞ্ছনার কারণ হবে। সুরা ইয়াসিনে বলা হয়েছে- ‘আজ (কেয়ামতের দিন) আমি এদের (অপরাধীদের) মুখ মোহর করে দেব। ফলে, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পাসমূহ সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’ (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৬৫)

অনুরূপভাবে সুরা আন-নুরেও এসেছে, ‘যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৪)

সুতরাং যার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই বা জানাশোনা নেই, তার সে বিষয়ে কথা না বলাই উত্তম। কারণ এসব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের দিকনির্দেশনার ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস