দ্রব্যমূল্য বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না কিছুতেই।
Advertisement
তবে মানুষের কষ্ট যেন কিছুটা লাঘব হয় সেজন্য সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রে মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সুলভ মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল, বলছেন ভোক্তারা। এছাড়া ওএমএসের চাল-আটা পেতে ক্রেতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কখনোবা আগের দিন রাতেই এসে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কেউ কেউ চাল-আটা না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন। দিনাজপুর পৌরসভা এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বর্তমানে বাজারে মোটা চালের কেজি ৫২ টাকা। সে চাল খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে ৩০ টাকায় কেনা যায়। অন্যদিকে বাজারে আটার কেজি ৬৪ টাকা। ওএমএস থেকে কেনা যায় ১৮ টাকায়। কিন্তু দিনাজপুরে ওএমএসের চাল-আটা কিনতে ভোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিক্রয়কেন্দ্রের লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এমনকি রাতেও এসব কেন্দ্রের সামনে সাধারণ ক্রেতাদের অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে।
আগের দিন রাত ৯টায় এসে পরের দিন সকাল ৯টায় চাল-আটা দেওয়া শুরুর সময়ও লাইনে জায়গা না পেয়ে অনেকে খাতি হাতেই বাড়ি ফিরছেন। গত বৃহস্পতিবার চাল আটা দেওয়ার পর শুক্র ও শনিবার তা বন্ধ থাকে। ফলে রোববার ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে ক্রেতাদের ছিল উপচে পড়া ভিড়।
Advertisement
রাত তখন সোয়া ১১টা। দিনাজপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি করা হয় উপশহর ৫ নম্বর ব্লকের চকলেট ফ্যাক্টরির মোড়ে। সামনে তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ছোট ছোট জটলা করে জড়ো হয়েছেন। সবাই খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওএমএসের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমান।
ওএমএসের চাল ও আটা কিনতে গতকাল শনিবার রাতে চকলেট ফ্যাক্টরির মোড়ে মানুষের এ ভিড় চোখে পড়ে। দীর্ঘ লাইনে নিজের অবস্থান বোঝাতে চিহ্ন হিসেবে তারা সারি সারি করে বিছিয়ে রেখেছেন বাজারের ব্যাগ।
রোববার সকাল ৬টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায, দোকানের সামনে নারীদের লাইনটিই ছিল বেশি লম্বা। ওই লাইনে প্রায় ২০০ জন নারী ওএমএসের পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশেই অন্য একটি লাইনে পুরুষের সংখ্যা ছিল শতাধিক।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক নারী-পুরুষ জাগো নিউজকে জানান, তাদের কেউ কেউ শনিবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। নির্ধারিত ওই স্থানে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের একজন খাদ্য পরিদর্শক আসার পর রোববার সকাল ৯টায় শুরু হয় চাল-আটা বিক্রি।
Advertisement
সেখান থেকে চাল ও আটা কেনেন আখি বেগম। তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তিনি বলেন, শনিবার রাত ৯টায় লাইন দাঁড়িয়েছিলাম। আমার সামনে ১৩ জন ছিল।
রোববার বেলা ১১টার দিকে চাল ও আটা পাওয়ার পর আখি বেগম জানান, ওএমএস থেকে পাঁচ কেজি চাল ১৫০ টাকা আর ৫ কেজির প্যাকেট আটা ৯০ টাকায় নিয়েছেন। এতে তার খরচ হয় ২৪০ টাকা।
তিনি জানান, বাজার থেকে ৫ কেজি চাল ২৬০ টাকা, আর ৫ কেজি আটা ৩২০ টাকায় কিনতে হয়। এতে করে ৫৮০ টাকা লাগতো। ওএমএস থেকে থেকে কেনায় তার ৩৪০ টাকার মতো সাশ্রয় হয়েছে।
দিনাজপুরের বিভিন্ন বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং খোলা আটা প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৪ টাকা আর প্যাকেট আটা ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ওএমএস ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকে এখান থেকে চাল-আটা কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে নিম্নবিত্তের মানুষেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
শমসের আলী নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি ফজরের নামাজ আদায় করে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ডিলারের কাছে পৌঁছার আগেই চাল-আটা শেষ হয়ে গেছে। ফলে তাকে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, দিনাজপুর পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ১২ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের মাধ্যমে চাল-আটা সাশ্রয়মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার অনিয়ম করায় তার ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে চাল-আটা বিক্রি বন্ধ রয়েছে। নতুন ডিলার নিতে হয়েছে। খুব শিগগির নতুন ডিলারের মাধ্যমে চাল-আটা বিতরণ শুর হবে।
তিনি বলেন, সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রত্যেক ডিলারের জন্য এক টন আটা ও এক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এটা চাহিদার তুলনায় কম। আমরা দিনাজপুর শহরে ডিলার বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যও এ ব্যাপারে আন্তরিক। নতুন ডিলার নিয়োগ হলে সংকট কেটে যাবে।
২০০২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দিনাজপুর পৌরসভার জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৩ জন। ২০১১ সালের গণনায় এ সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৮৬ হাজার ৭১৭ জনে। তবে দিনাজপুরের জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, এবারের জনশুমারির পরিসংখ্যান এখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, দিনাজপুর পৌরসভার তিন লাখ জনসংখ্যার জন্য ১২টি ওয়ার্ডে সপ্তাহে পাঁচ দিন করে যে আটা-চাল সরবরাহ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
এমদাদুল হক মিলন/এমকেআর