আন্তর্জাতিক

ইমরান খানের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত, পাকিস্তানের নয়

কন্টেইনার ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে রাস্তার দু’পাশে উপস্থিত হাজারো জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন ইমরান খান। আচমকা বন্দুকের গুলি ছুটে আসে তার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়েন ইমরান ও তার পাশে থাকা সহযোগীরা। কিন্তু তার আগেই দুটি গুলি আঘাত করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পায়ে। আহত হন অন্যরাও।

Advertisement

গুলি ছোড়ার পরপরই বন্দুকধারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলে সমাবেশে উপস্থিত পিটিআই সমর্থকেরা। ইমরান খানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা এখন আশঙ্কামুক্ত, তবে পাকিস্তানের নয়। এই হত্যাচেষ্টা আগে থেকেই অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত দেশটিকে আরও গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। কিন্তু এরপর থেকে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ করে তুলেছেন তিনি। একের পর এক আক্রমণ শানানো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তখন থেকে ক্রমাগত আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন সাবেক ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এই নেতা।

পিটিআই’র সাম্প্রতিক লং মার্চের উদ্দেশ্য সরকারকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। তবে ক্ষমতাসীন জোট বলছে, সরকার আগামী বছর পর্যন্ত বাকি মেয়াদটুকু পূরণ করবে। তার ওপর ক্ষমতাশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, ইমরান খান মিথ্যা বলে তাদের সুনাম নষ্টের চেষ্টা করছেন।

Advertisement

তবে পিটিআই অভিযোগ করেছে, তাদের নেতাকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জড়িত। ফলে এই গুলির ঘটনা পাকিস্তানের রাজনীতিতে আরও উত্তাপ সৃষ্টি করবে নিশ্চিত।

পাকিস্তানে রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস বহু পুরোনো। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে ১৯৫১ সালে একটি জনসমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় নিহত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এ ঘটনার মাত্র দুই মাস আগেই করাচিতে একটি বোমা হামলা থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। ওই হামলায় নিহত হন অন্তত ১৮০ জন। ভুট্টো আট বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চালানো হয় সেই হামলা।

পাকিস্তানের বর্তমান সরকার ইমরান খানকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত হবে। তবে সরকারের এই আশ্বাসে পিটিআই সমর্থকেরা শান্ত হবেন বলে মনে হয় না। এ ধরনের ঘটনাগুলোর তদন্ত শেষ হওয়া বা শেষ হলেও সেই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়ার নজির খুবই কম।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশে অস্থিরতা বাড়িয়েছে ক্ষমতার জন্য ত্রিমুখী লড়াই। দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তো রয়েছেই, পর্দার আড়ালে থেকে সেনাবাহিনীই মূলত কলকাঠি নাড়ে বলে দাবি করা হয়।

Advertisement

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ইমরান খানকে দেশটির সামরিক বাহিনীকে অপদস্থ করা এবং এর বিরুদ্ধে জনসাধারণকে উসকে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। গত সপ্তাহে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সামরিক-গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ইমরানের অভিযোগের বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

ইমরান খানের লং মার্চের মূল গন্তব্য রাজধানী ইসলামাবাদ। তিনি রাজপথে ফিরবেন, তা নিশ্চিত। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে অভূতপূর্বভাবে আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতেই জয় পেয়েছে ইমরানের দল। হত্যাচেষ্টার ঘটনা জনগণের মধ্যে তার সমর্থন আরও জোরালো করতে পারে।

তবে এগুলোতেও সরকার পতনের সম্ভাবনা কম। পার্লামেন্টে ভেঙে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে শাহবাজ শরিফ তা করতে চাইবেন না। পরিবর্তে, তিনি আগামী বছর বাধ্যতামূলকভাবে নির্বাচন দেওয়ার আগপর্যন্ত গদি ধরে রাখতে চাইবেন। এর মধ্যে অর্থনীতি স্থিতিশীল করে কিছুটা জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা থাকবে তার।

সরকার ইমরান খানের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ায় সহিংসতার আভাস আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এখন দেশটিকে আরও খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/