মতামত

নির্বাচনের মূল ইস্যু: পাকিস্তান না বাংলাদেশ?

সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর বিএনপির সমাবেশ থেকে হামলা এটিই প্রমাণ করলো, নির্বাচনের মূল ইস্যু দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সরকারি নীতি নয়, মূল ইস্যু এ ভূখণ্ড কি বাংলাদেশ থাকবে না পাকিস্তান হবে? বিচারপতি মানিক দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা সরকারি নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত নন। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত ওবায়দুল কাদের বা ড. হাসান মাহমুদ প্রমুখ যাদের নাম প্রতিনিয়ত শুনি। তাদের ওপর  হামলা হয় না, চেষ্টা করা হয় না। কিন্তু বিচারপতি মানিকের ওপর হয়, শেখ হাসিনার ওপর হয়। কারণ কী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতা, উন্নয়নের প্রতীক।

Advertisement

বিচারপতি মানিক, পাকিস্তানায়নের জন্য যে সামরিক শাসন, জেনারেল জিয়ার যে অন্যায়, এসবের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে রায় দিয়েছেন। যেমন- খান এ সবুর, শাহ আজিজ- বিএনপি এদের নামে সড়ক স্থাপনা করেছিল কারণ এরা পাকিস্তান ‘ভাঙার’ বিরুদ্ধে ছিলেন, সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে ছিলেন। পাকিস্তানায়নের জন্য এ কাজটি করেছিল বিএনপি। সে জন্য তারা ক্ষিপ্ত। 

যেমন- শাহরিয়ার কবির, আওয়ামী লীগ করেন না, টাকা কড়ি নেই, পৈতৃকসূত্রে থাকার জায়গা পেয়েছেন কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িকতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেজন্য বিএনপি আমলে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। অর্থাৎ বিএনপির আক্রোশ সরকারি দলের প্রতি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, কিন্তু বিচারপতি মানিক বা শাহরিয়ারের প্রতি আক্রোশ তারা পাকিস্তানায়নের বিরুদ্ধে। বিএনপির প্রতিটি সমর্থক-একেকটি পাকিস্তানি ছিটমহল। এই ছিটমহল উৎখাত স্বাভাবিকভাবে বিএনপি চাইবে না। 

বিচারপতি মানিকের প্রতি হামলা হয় জেলহত্যা দিবসে (২ নভেম্বর বিকেল, সেদিন রাতে জেলহত্যা হয়েছিল ১২টার পর, সেজন্য ৩ তারিখ জেলহত্যা দিবস)। তখন মনে প্রশ্ন জাগে এদের কী অপরাধ ছিল? এরা একটি রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে জড়িত, কেউ দুর্নীতিবাজ ছিলেন না, সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ জায়গা বলে খ্যাত জেলে তাদের কেন হত্যা করল বিএনপির পৃষ্ঠসূরিরা? এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করা যাক। 

Advertisement

প্রাচীন ইতিহাস ঘাটব না। শুধু বলব, এ দেশের একটি খ্যাতি আছে, ঐতিহ্যই বলব, তাহলো ষড়যন্ত্র। এ দেশটি ষড়যন্ত্রকারীদের দেশ। প্রায় প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে, এ দেশে প্রায়ই ক্ষমতা দখল করা হয়েছে ষড়যন্ত্র  এবং ভায়োলেন্সের মাধ্যমে। ধরা যাক আওয়ামী লীগের কথা। এদেশে ১৯৪৯ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টি বাদে এ দলটিই প্রকাশ্যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করেছে। বাংলাদেশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই আওয়ামী লীগের ওপর ১৯৪৯ সাল থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি, বিহারি, পাকিস্তানিরা ছিল ক্ষিপ্ত। 

লিয়াকত আলী খান যাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল পূর্ববঙ্গ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘যো আওয়ামী লীগ করেগা উসকা শির কুচাল দেঙ্গা।’ কারণটা কী? কারণ, আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগের বিপরীতে বিকল্প একটি আদর্শের সৃষ্টি করেছিল, সে আদর্শ তরুণদের আকৃষ্ট করেছিল। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের কুশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্ট করে জিতেছিল। 

মুসলিম লীগ সেই যে ধুয়ে মুছে গেল আর তারা মূল নামে ফিরে আসেনি। যুক্তফ্রন্টেও এক সময় বেশ কিছু দল আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করে। কিন্তু দু’বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। পূর্ববঙ্গের প্রবৃদ্ধি তখনই হয়েছিল। আগেও নয়, পরেও নয়। বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন এবং ৬ দফা দেন তখন আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা এর বিরোধিতা করেছিল। বঙ্গবন্ধু তখন আবার তরুণদের কাছে, কর্মীদের কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। ১৯৬৭ সাল থেকে জেলে ছিলেন, আগরতলা মামলার সম্মুখীন হয়েছেন। 

জনগণের উত্থান তাঁকে ফিরিয়ে এনে বঙ্গবন্ধু করেছে, পাকিস্তান সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। তিনি ৬ দফাকে প্রাণের দাবিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখনও বাংলাদেশ স্বপ্ন বা ৬ দফার বিরুদ্ধে অনেক মানুষ ভোট দিয়েছে। ১৯৭১ সালে, আমরা যে রাজকারের সংখ্যা অনুমান করি, রাজাকারের সংখ্যা তার থেকে ছিল বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রত্যয়ের বিরোধী সব সময় ছিল। কখনও তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

Advertisement

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হয়েছিল যাতে সম্প্রদায় হিসেবে এ এলাকায় (ও পশ্চিমে) মুসলমানদের আধিপত্য থাকে। এ আধিপত্য কার্যকর করার ভার পড়েছিল মুসলিম লীগের ওপর। মুসলিম লীগের ‘অবদান’ হলো ‘পাকিস্তানায়ন’। পাকিস্তানায়নের উপাদানের মধ্যে আছে রাজনীতি সমাজে ধর্মের ব্যবহার, ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তার যার প্রতিভূ হবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দল, আমলা শাসন যেখানে সামরিক আমলারা থাকবেন মুখ্য ভূমিকায়, রাজনীতিবিদরা হবেন অধস্তন, ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করবেন তারা পরিচিত হবেন খাঁটি মুসলমান হিসেবে, অন্যরা নামকাওয়াস্তে মুসলমান, এধরনের রাজনীতি যারা করবেন তারাই হবেন ক্ষমতার অধিকারী, বাকিরা দাস। সাম্প্রদায়িকতা হবে রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। ভারত মানে হিন্দু রাজ্য যদিও সেখানে মুসলমানের সংখ্যা ছিল পাকিস্তানের থেকে বেশি। 

মানুষ পাকিস্তানায়নে বিশ্বাস করেছেন। এই আদর্শ এমনভাবে প্রোথিত করা হয়েছিল শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে। যে পাকিস্তান গেছে কিন্তু এদেশের মানুষের মধ্যে ‘পাকিস্তানায়নের’ উপাদানগুলো রয়ে গেছে। এখানেই জিতে গেছে মুসলিম লীগ। এর বিকল্প আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের চিন্তা, শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি, শোষণহীন সমাজ, গণতান্ত্রিক শাসক যার প্রতিনিধি হবেন রাজনীতিবিদরা। কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া আওয়ামী লীগ ছিল এই বিকল্প আদর্শের ধারক। 

আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে, ডানপন্থিরা শাসন করেছে বেশি। তাদের কুশাসনে অস্থির হয়ে মানুষজন বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগে ভোট দেয়। দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকে প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের আশায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে তাদের সঙ্গে নেয় না, সঙ্গে থাকে যারা দেওয়ালে বসে ছিল বা বিরোধী, তাদের। 

ফলে এসব সুবিধাবাদীরা এসে আদর্শগত বিচ্যুতি ঘটায়, লুট-দুর্বৃত্তায়ন বিকাশ ঘটায়, দলের মধ্যে ডানপন্থার ঝোঁক বাড়ায়। এভাবে দেখি, প্রতিবারই আওয়ামী লীগ ও জোট বিজিতদের সংস্কৃতির কিছু উপাদান গ্রহণ করে এর মধ্যে আওয়ামী লীগও ধর্মজাত উপাদান প্রধান। এভাবে ডানপন্থা ধারাবাহিকভাবে ডান ও মধ্য-মধ্যবাম রাজনীতির মাধ্যমে পুষ্ট হচ্ছে। এর নিট ফল পাকিস্তানায়ন টিকে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালেও কমপক্ষে ২৫ শতাংশ লোক স্বাধীনতা চায়নি। বাকিরা ভেবেছে ৬ দফা পেলেও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। জয় বাংলার স্রোতে তীব্র হয়ে উঠলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি ও তাদের দোসররা যদি প্রবলভাবে গণহত্যা না চালাত তাহলে স্বাধীনতার স্বপ্ন দীর্ঘায়িত হতো। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তান ও তাদের দোসররা কী করেছিল তা বলে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। বঙ্গবন্ধু এসে পুরোনো ধারা ভেঙে নতুনভাবে চলা শুরু করলেন। পাকিস্তানায়নের দুটি উপাদান ধর্ম ও আমলাতন্ত্রের আধিপত্য খর্ব করেন। ধর্মের ওপর হাত দেননি কিন্তু রাজনীতিতে ধর্ম ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। ১৯৭৫ সালে কাকুল প্রশিক্ষিত বাঙালি সেনারা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। এভাবে বাংলাদেশ আদর্শের তারা নিপাত করতে চেয়েছে। 

জেনারেল জিয়া ছিলেন এই ভায়োলেন্সের পেছনে। না থাকলে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জন্য ইনডেমনিটি আইন করে সংবিধানে যুক্ত করতেন না, জেলহত্যায় যুক্ত থাকতেন না, হাজারখানেক সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে চাকরিচ্যুত বা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতেন না। রাজনীতিতে তিনি ভায়োলেন্সের প্রবর্তন করেন এবং এবার্তা দেন যারা খুনি তারা যদি বিএনপি আদর্শে বা পাকিস্তানি আদর্শে উজ্জীবিত হয় তাদের কিছু হবে। 

এভাবে বিএনপিতে ১৯৭১ সালে অখুশি মানুষজন ও নতুন যারা মনে মনে পাকিস্তান কামনা করে ও বাম বা মধ্য-বাম পন্থার ভেক ধরে ছিল তারা বিএনপিতে একাকার হয়ে যায়। অর্থ+পেশি+ভায়োলেন্স এ হয়ে যায় বিএনপির মূল আদর্শ যারা অন্য নাম পাকিস্তানায়ন। এসময় গণহত্যার সমর্থনকারী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। 

এরপর একই ধারা অব্যাহত থাকে। এরশাদ এ ধারা বিকশিত করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন। ঋণখেলাপি শুরু হয় বিএনপি আমলে, যা বিকশিত হয় এরশাদ আমলে। বস্তুত জিয়া, এরশাদ, খালেদা বাংলাদেশ আদর্শ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে পাকিস্তানকে প্রোথিত করতে চাইলেন। ২১ বছর তারা এ ধারাকে পুষ্ট করেছেন, দুটি প্রজন্মের তরুণদের মনে পাঠ্যবই বদলে পাকিস্তানায়ন ও সাম্প্রাদায়িকতাকে পুষ্ট করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় যেতে হয়েছিল। কিন্তু সমাজে ও রাজনীতিতে ২১ বছরে তারা যে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গ্রুপকে পুষ্ট করা হয়েছিল তারাই আবার খালেদা ও নিজামীকে যৌথভাবে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। গণহত্যাকারীদের ক্ষমতায় আনা এরকম অকল্পনীয় ব্যাপার কোথাও ঘটেনি যে কারণে, ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তারা সবাইকে দমিত রাখতে চেয়েছে। আজ সবাই ভুলে যান কিন্তু সে সময় ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, শাহরিয়ার কবির, ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরীসহ কতো সহস্র মানুষকে শুধু জেলে নয়, নিপীড়ন করেছে। 

২০১২ সালের আগে তারা অকল্পনীয় ভায়োলেন্সের সৃষ্টি করেছিল। ২০০১ সালের পর শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এরশাদ আমল থেকে এ পর্যন্ত ২১ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। আর কোনো রাজনীতিবিদের ওপর এ হামলা হয়নি, কেন? কারণ, সম্পূর্ণ পাকিস্তানায়নের পথে শেখ হাসিনা বড় বাধা। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করেন উল্লাসে, ভুট্টোর নিহত হওয়ার দিনে নয়। এর কারণ কী? ধর্মমতেও তিনি তা পারেন না। 

প্রায় এক দশক বিএনপি-জামায়াত থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগ তা প্রয়োগ করেছে। কিন্তু আবার একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের দোসর হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা করে ডান ধারাকে পুষ্টও করেছে। আওয়ামী লীগে এখনও ডানপন্থার ঝোঁক বেশি সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রশ্নে তারা অনড়। 

শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বা শাহরিয়ার কবির বা এরকম যারা বাংলাদেশ প্রত্যয়ের প্রতি অটল (আওয়ামী লীগের অনেক নেতা থেকে) তাদের ওপর হামলার শুরু বিচারপতি মানিককে দিয়ে। এতে অবাক হইনি। কারণ, ১৯৭৪ সালে এই বাঙালিদের মধ্যে খচ্চর শ্রেণির বাঙালি বা পাকিস্তানপন্থি বাঙালিরা জয়োল্লাসে ভুট্টোকে বরণ করেছিল, যিনি গণহত্যার একজন প্ররোচনাকারী। বঙ্গবন্ধুর গাড়িতে জুতো ছুড়ে মারা, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা এসবই করা হয়েছিল। পাকিস্তানায়নের সবচেয়ে বড় প্রমাণ জিয়া কর্তৃক ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইনে পরিণত করে সংবিধানে অন্তর্গত করা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা এবং সমাজে এ ধারণা প্রোথিত করা যে, জেমসবন্ডের মতো লাইসেন্স টু কিল। এরই ধারাবাহিকতায় এই হামলা।

বিএনপির কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে সহায়তা করেছে আওয়ামী সমর্থকরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে ও মিডিয়া। কীভাবে বিএনপি সফল হচ্ছে মিডিয়া তার বিবরণ দিচ্ছে। ফলে বিএনপির কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে ১০ ডিসেম্বর সরকার পতন হবে। তাতে বিএনপির লাভ কী? তারা তো ক্ষমতায় আসতে পারছে না। কিন্তু যেটি হবে তা’হলো, কর্মীদের একটি ধারণা জন্মাচ্ছে তারা ক্ষমতায় যাচ্ছে। সুতরাং, লাইসেন্স টু কিল ফর্মুলায় তারা এগোবে। তাদের ইতিহাস তাই বলে। এত খুনোখুনি আরও বাড়বে। পাকিস্তানে ভুট্টোকে ফাঁসি, বেনজিরকে গুলি করে হত্যা এবং ইমরানকে গুলি একথা প্রমাণ করে ভায়োলেন্সের বৃত্ত থেকে না বেরুলে তা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে।

বিচারপতি মানিকের ওপর হামলায় যারা ভাবছেন, তাঁর ওপর হামলা হয়েছে তো আমাদের কী? নির্বাচনের দিন যত এগোবে তত টার্গেট করে হামলা হবে, খুনোখুনি হবে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু সম্প্রতি এক বক্তৃতায় বলেন, তাঁর শ্বশুর জনাব আসাদুজ্জামান যখন মুজিবনগর সরকারে ছিলেন তখন ডালিম রশীদ ফারুক সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ১৫ আগস্টের পর ডালিমরা আসাদুজ্জামানের বাসায় আসেন। তাঁকে গ্রেফতার করতে। ডালিমকে কারণ জিজ্ঞেস করলে ডালিম বলেন, তিনি আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বলতে চাননি। তাই তাঁকে টার্গেট করে রেখেছি। সুযোগ পেয়ে এখন নিয়ে যাচ্ছি।

গত একদশক যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে সমর্থন করেছিলেন তিনি ছোটবড় যাই হোন না কেন তিনিই টার্গেট। তিনি রাজনীতিবিদ, আমলা, বুদ্ধিজীবী যেই হোন না কেন। বিএনপি যদি মুক্তবুদ্ধির মানুষ প্রতিহত না করে তা’হলে অবশ্যই তারা পাকিস্তানায়ন সম্পন্ন করার জন্য নিকেশের রাজনীতি করবে। আপনারা কি শোনেননি তারা বলেছে, পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল।

লেখক: বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। 

এইচআর/এএসএম