ভ্রমণ

‘ডোলমা খাং’র শিখরে চার বাংলাদেশি

ডোলমা খাং পর্বতের শিখরে আরোহণ করেছেন চার বাংলাদেশি। ডোলমা খাং পর্বতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম অভিযান। ২০ হাজার ৭৭৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত পর্বতের চূড়াটি।

Advertisement

বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন দুবারের এভারেস্ট আরোহী এম এ মুহিত। আরও ছিলেন কাজী বাহালুল মজনু বিপ্লব, ইকরামুল হাসান শাকিল এবং রিয়াসাদ সানভী। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নেপালের দুই পর্বতারোহীও ছিলেন। তারা হলেন কিলু পেম্বা শেরপা এবং নিমা নুরু শেরপা।

বাংলাদেশ-নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার (২ নভেম্বর) নেপালের সময় সকাল ৯টায় ডোলমা খাং পর্বতের চূড়ায় ওঠে বাংলাদেশ দল।

ডোলমা খাং পর্বতটি নেপালের রোল ওয়ালিং উপত্যকার গৌরিশঙ্কর হিমালয় রেঞ্জে অবস্থিত।

Advertisement

অভিযানটি কীভাবে শেষ করলেন, কী কী প্রতিকূলতার মুখে পড়েছিলেন এসব বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দলের দলনেতা এম এ মুহিত।

তিনি বলেন, প্রথমে দোগারি হিমাল নামের একটি অবিজিত শিখরে অভিযানের উদ্দেশ্যে ৭ অক্টোবর কাঠমান্ডু যাই আমরা। ১২ অক্টোবর পশ্চিম নেপালের রুকুম জেলার কাংড়ির উদ্দেশ্য যাত্রা করি। কাংড়ি থেকে জিপে তাকসারা পৌঁছে শুরু হয় দোগারি হিমাল বেসক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং। যেহেতু এই দোগারি হিমাল পর্বতে আগে কখনো অভিযান হয়নি, তাই বেসক্যাম্পের পথ চেনার জন্য মাইকোট গ্রাম থেকে ভক্ত পুন মাগার নামে স্থানীয় একজনকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নেই। মাইকোট থেকে যাত্রা করে ডোলে ও ফেদী জায়গা পার হয়ে আমরা ১৫ হাজার ৯২ ফুট উঁচু নিমকুন্ড ফুলগাড়ি নামের একটি উপত্যকায় ক্যাম্প স্থাপন করি।

এম এ মুহিত আরও বলেন, সাধারণত এ ধরনের জায়গায় ঘাস থাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত নেপাল হিমালয়ে ভারি তুষারপাতের কারণে তিন থেকে চার ফুট উঁচু বরফ জমে ছিল। দুদিন সেখানে অবস্থান করে প্রতিদিনই আমরা বেসক্যাম্পের খোঁজে আরও ওপরে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পাঁচ হাজার মিটারের কাছাকাছি পৌঁছে সাত থেকে আট ফুট উঁচু বরফের কারণে আর সামনে এগোনো সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে আবার শুরু হয় তুষারপাত। সার্বিক বিষয় নিয়ে নেপাল দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপার সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়। এরপর আমরা দোগারি হিমাল অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৪ অক্টোবর কাঠমান্ডু ফিরে আসি।

সবশেষ অভিযান আয়োজনকারী সংস্থা ইমাজিন নেপালের কর্ণধার পর্বতারোহী মিংমা গ্যালজে শেরপার সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ। এরপর ডোলমা খাং শিখরে আরোহনের সিদ্ধান্ত হয়। এসময় বাংলাদেশের চারজন পর্বতারোহীর সঙ্গে নেপালের দুজন যোগ দেন। এরপর দলটি ২৮ অক্টোবর সিমিগাওয়ের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু ত্যাগ করে।

Advertisement

এম এ মুহিত জানান, সিমিগাও থেকে ট্র্যাকিং করে ৩০ অক্টোবর ১২ হাজার ২৭০ ফুট উচ্চতার বেদিং গ্রামে পৌঁছায় তার দল। যেটি ছিল এ অভিযানের বেসক্যাম্প। দুই রাত বেদিংয়ে থেকে ১ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১টায় ১৬ হাজার ৭৬ ফুট উচ্চতায় হাইক্যাম্পে পৌঁছান তারা। সেদিন রাত ১টায় হাইক্যাম্প থেকে শিখর জয়ের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করেন তারা।

বাংলাদেশ দলের দলনেতা বলেন, প্রথমে পাথরের বোল্ডার পেরিয়ে রাত ৩টার দিকে বরফে মোড়ানো প্রান্তরের কাছে পৌঁছাই। সেখান থেকে ক্র্যাম্পনসহ প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সরঞ্জাম পরে এক দড়িতে নিজেদের বেঁধে যাত্রা করি। ভোর ছয়টার কাছাকাছি সময়ে আমরা প্রায় ৭০-৯০ ডিগ্রি খাড়া কয়েকশ মিটার উচ্চতার এক দেওয়ালের নিচে আসি।

সেই কঠিন দেওয়ালে রোপ ফিক্স করেন নেপালি দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপা ও নিমা নুরু শেরপা। সেই দড়িতে শুরু হয় কষ্টকর জুমার ক্লাইম্বিং।

এম এ মুহিত বলেন, সেটি এতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে ওপরের জনের পায়ের চাপে বরফ ও পাথর খসে পরছিল, ফলে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারতো মারাত্মক দুর্ঘটনা। কষ্টকর সেই আরোহণ শেষে প্রায় ২৫ মিটারের ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ এক সরু রীজ লাইন পেরিয়ে আমরা ডোলমা খাংয়ের শীর্ষে পৌঁছাই। প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে অভিযান এবং আরোহনের সাফল্যে আনন্দিত আমরা।

অভিযানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাব ও ইমাজিন নেপাল। পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইস্পাহানী টি লিমিটেড, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিওরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

জেডএইচ/এমএস