ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না সেটি খুঁজে দেখতে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীন, তার ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা সরিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে আবারো প্রতিবেদন দাখিল করার জন্যে বলেছেন আদালত। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে ফের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এ সময় শেখ সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে কি না তা জানাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন।
Advertisement
বিএফআইইউ, পুলিশ ও দুদকের দাখিল করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আর রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম। বিএফআইইউ'র পক্ষে ছিলেন শামীম খালেদ আহমেদ।
শুনানিতে আদালত বিএফআইইউ'র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের প্রতিবেদনে দেখালেন, তারা অনেক টাকা উত্তোলন করেছেন, তাহলে সেই টাকা কোথায় গেলো? তার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা। ওই টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে তাতো সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। আপনাদের এ প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এ প্রতিবেদনে প্রকৃত চিত্র ওঠে আসেনি। এটা খাপ ছাড়া। এ সময় পুলিশের রিপোর্টের বিষয়ে আদালত বলেন, তাদের রিপোর্ট পরিষ্কার করে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। আর দুদকের রিপোর্টে তারা পাশ কাটিয়ে গেছে।
এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রতিবেদনে সব তথ্য সঠিকভাবে আসেনি, এজন্য পূর্ণাঙ্গ করে একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাচ্ছি। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এত টাকা লেনদেন হচ্ছে, এ টাকা কোথায় যাচ্ছে, কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে, এর ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে কিনা সেটা তো এনবিআরের দেখা উচিত।
Advertisement
তখন আদালত বলেন, এ সব লোকের কারণেই ঝামেলা হচ্ছে। দেশে কত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। দক্ষিণ বঙ্গে গিয়ে দেখেছি, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রাস্তাঘাটের কী উন্নয়ন হয়েছে। দেখলে মনে হবে না দেশের মধ্যে আছি। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের কারণে এখন সংকট তৈরি হচ্ছে।
আদেশের পরে আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম জানান, প্রতিবেদনে সোনিয়া মেহজাবিন, স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজসহ আরও যাদের নাম ওঠে এসেছে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, তাদের লেনদেন এবং তাদের সম্পত্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন করে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশপ্রধানকে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, তার থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে কিনা তা জানাতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন।
আদেশের বিষয়ে ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীনের ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ই-অরেঞ্জ নিয়ে দেওয়া প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করে আবারও প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। পাশাপাশি ই-অরেঞ্জের লেনদেনে এনবিআরকে রাজস্ব দিয়েছে কিনা তাও জানাতে বলা হয়েছে।
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত সোহেল রানাকে গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে তাকে আটক করেন। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে মো. আফজাল হোসেন, মো. আরাফাত আলী, মো. তরিকুল আলম, সাকিবুল ইসলাম, রানা খান ও মো. হাবিবুল্লাহ জাহিদ নামের ছয়জন গ্রাহক গত মার্চে হাইকোর্টে রিট করেন। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে দুদক ও বিএফআইইউ কাছে প্রতিবেদন চান। সে আদেশ অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এফএইচ/এমএইচআর/এমএএইচ/এমএস