ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, শস্যখেত, মাছের ঘের, গাছপালা, রাস্তাঘাট ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক তালিকায় এ ক্ষতির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। তবে বরাবরের মতোই জেলার সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান নদীর প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, স্থায়ী রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা না হলে ঝুঁকি এড়ানো অসম্ভব।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব নদীর দুপাড়ের কিছু স্থানে বেড়িবাঁধ থাকলেও এখনো সবখানে রক্ষাবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিম্নচাপ হলেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় নদীতীরবর্তী এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সিত্রাংয়ে জেলায় যে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে এরমধ্যে বেড়িবাঁধে ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
বিষখালী নদীতীরবর্তী সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সুরু মিয়া, কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন নদীরভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী রক্ষাবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বিষখালী নদীর গর্ভে বছরের পর বছর ভাঙনের ফলে শত শত বিঘা জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতভিটা, বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মূল্যবান সম্পদ বিলীন হয়ে গেছে। যেসব এলাকায় তীব্র ভাঙন রয়েছে, সেখানে স্থায়ী সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পেতো।
Advertisement
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঝালকাঠি জেলায় প্রধানতম সুগন্ধা ও বিষখালী নদী। এ নদী দুটির ডান ও বাম তীরে রয়েছে ঝালকাঠি ও নলছিটি উপজেলা, বিষখালী তীরে রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা। নদীতীরবর্তী বেশ কিছু এলাকায় ভাঙনপ্রবণ এলাকা রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে নলছিটি শহর, তৎসংলগ্ন ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট, বহরমপুর, কাঠিপাড়া এবং মগড়। এ এলাকাগুলো বর্তমানে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। গত এপ্রিলে যাচাই-বাছাই সভায় কিছু সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। এর আলোকে পুনরায় একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পটি আশা করি খুব শিগগির অনুমোদন হবে। অনুমোদন পেলে এ প্রকল্পের আওতায় ঝালকাঠি উপজেলা এবং নলছিটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার রক্ষাবাঁধ বাস্তবায়ন করতে পারবো। এতে গাবখান চ্যানেল এবং বিষখালী নদীর আংশিক ও সুগন্ধা নদীর উভয় তীরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো রক্ষা পাবে।
তিনি আরও বলেন, সুগন্ধা-বিষখালী নদী দুটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ এবং ভাঙন কবলিত। এ নদীর অনেকাংশেই বেড়িবাঁধ রয়েছে। লঘুচাপ, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের প্রভাবে অনেক স্থান ক্ষতিগ্রস্ত। এ অংশগুলো শনাক্ত করে সংস্কারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু অংশের কাজ চলমান।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মগড়, দক্ষিণ মগড়, ভৈরবপাশা ইউনিয়নের উত্তমাবাদ এবং গাবখান চ্যানেলের তীরবর্তী গাবখান-শেখেরহাট রাস্তা ও অন্য পাশের সারেংগল এরিয়া, সাচিলাপুরের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ, বাদুরতলা লঞ্চঘাট স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এরই মধ্যে বাদুরতলা অংশে জিও ব্যাগ ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মগড় ও উত্তমাবাদের অংশে জিও ব্যাগ ভরাটের কাজ চলছে।
Advertisement
এমকেআর/জেআইএম