ভ্রমণ

ভারত ভ্রমণে বিখ্যাত যেসব বাজারে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না!

সাইফুর রহমান তুহিন

Advertisement

ভারত ভ্রমণ সবার কাছেই স্বপ্নের। পার্শ্ববর্তী এই দেশে দেখার মতো অনেক স্থান আছে। আপনি যদি ভারতের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে খুঁজে বের করতে চান তাহলে সে দেশের সবচেয়ে পুরোনো বাজারগুলোতে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না। জেনে নিন ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত সব বাজার সম্পর্কে-

ইমা কেইথেল, মনিপুর

এই বাজারের জনপ্রিয় নাম হলো ‘দ্য মাদার’স মার্কেট’ অথবা মায়ের বাজার। এটি পরিচালনা করে শুধু নারীরাই। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আনুমানিক ৫ হাজার নারী এখানে দোকান সাজিয়ে বসেন। এই বাজারে বিচিত্র সব দ্রব্যাদি বিক্রি হয়।

Advertisement

এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে ইমা কেইথেল শুধু বিবাহিত নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এই বাজার। পুরোপুরি নারীদের দ্বারা পরিচালিত বিশ্বের অন্যতম বাজার এটি। আসলেই দেখার মতো এই বাজার।

চাঁদনী চক, নতুন দিল্লি

সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ও তার মেয়ে জাহানারা এই বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন। চাঁদনী চক এমন একটি বাজার যেখানে পাওয়া যায় প্রায় সবকিছুই যেমন- পারফিউম, জুয়েলারি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ঐতিহ্যবাহী কাপড়, মসলা, চামড়াজাত দ্রব্যাদি, অনেক পুরনো ধাতব দ্রব্যাদি, স্যুভেনিরসহ আরও অনেক কিছু। চাঁদনী চক মার্কেট হলো এশিয়ার সবচেয়ে বড় পাইকারি মসলা বাজার খারি বাওলির প্রাণকেন্দ্র।

চৌরঙ্গী লেন, কলকাতা

Advertisement

কলকাতার প্রধান রাস্তাগুলোর একটি হলো চৌরঙ্গী লেন। এটি শহরের বিখ্যাত রাস্তাগুলোর একটি। যদিও সুসজ্জিত অনেক ভবন রাস্তাটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে তারপরও এটির বিশেষ দিক হলো এর সংলগ্ন প্রাচীন বাজারটি যা একই নামে পরিচিত।

এই বাজার শুধু কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় বাজারগুলোর একটিই নয়, এর পাশাপাশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সেরা শপিং গন্তব্যগুলোর একটি।

জোহারি বাজার, জয়পুর

ভারতের সেরা বাজারগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত জোহারি বাজার হাওয়া মহলের কাছেই অবস্থিত। নিশ্চিতভাবেই এটি অনেক আকর্ষণীয়। বৈচিত্র্যপূর্ণ অলংকারাদির জন্য বাজারটির ব্যাপক পরিচিতি আছে। এছাড়া এখানে পাবেন বিভিন্ন দামের মূল্যবান পাথরসমূহ। সময়টা দারুণ কাটবে জোহারি বাজারে। এর পাশাপাশি বাজারটি মীনাকারি, কুন্দান ও পলকির মতো ঐতিহ্যবাহী গহনাসমূহ কেনার জন্য সেরা জায়গা।

জিউ স্ট্রিট, কোচি

এটি এমন একটি বাজার যেখানে বিক্রি হয় প্রাচীন ক্রোকারিজ, পিতল ও ব্রোঞ্জের তৈরি মূর্তি, কাঠের আসবাবপত্র, অলংকারসহ বিশেষ কিছু জিনিস। এগুলো এই জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও সহজে পাওয়া যাবে না।

বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, জিউ স্ট্রিটের অধিকাংশ দোকানদার এসেছেন ইহুদি পরিবার থেকে যারা অনেক আগে থেকেই এখানে বসবাস করতেন। এটি শুধু ভারতের প্রাচীনতম বাজারগুলোর একটিই নয়, এর পাশাপাশি এটি এমন এক জায়গা যেখানে আপনি প্রাচীন দ্রব্যসামগ্রী পাবেন।

মীনা বাজার, দিল্লি

মীনা বাজার ভারতের প্রাচীনতম বাজারগুলোর একটি। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও অনেক। জায়গাটির ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, এর শিকড় সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল যুগে।

বাজারটি ছিলো ভারতের প্রথম কভারে ঢাকা (উপর থেকে) বাজার। এটি স্থাপন করেছিলেন মুঘল সম্রাট শাহ। দিল্লি জামে মসজিদের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাজারটিতে গেলে কিনতে পারবেন দারুণ কিছু জিনিস।

আত্তার বাজার, কানৌজ

কানৌজের জনপ্রিয় নাম ‘দ্য পারফিউম সিটি’। বাজারে বিক্রির জন্য রাখা জিনিসের দিকে তাকালে এমন নামকরণকে স্বাভাবিকই মনে হবে। যারা সুগন্ধি দ্রব্যাদির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন ও এগুলো সংগ্রহ করতে আগ্রহী তাদের জন্য সেরা জায়গাগুলোর একটি হলো আত্তার বাজার।

এই বাজারে আছে এমন কিছু পুরোনো আতরের দোকান যারা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ায় আতর তৈরির জন্য সুপরিচিত। আর এ কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আতর ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন ও আতরজাতীয় দ্রব্যাদি কিনে নিয়ে যান।

জাভেরি বাজার, মুম্বাই

এই প্রাচীন বাজারে আছে ৭ হাজারের মতো দোকান। বেশিরভাগ দোকানই ২০০ বছরের বেশি পুরোনো। স্বর্ণ কেনার জন্য এটি একটি উপযুক্ত জায়গা। সেরা অনেক ডিজাইনই মিলবে জাভেরি বাজারে।

লেনদেনের পরিমাণ বিচারে এই বাজার ভারতের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম সোনার বাজারগুলোর একটি। সব ধরনের অলংকারই মিলবে এখানে। এই বাজারের প্রধান দিকটি হলো পুরোনো ধাঁচের অনুপম সৌন্দর্য ও এটি তুলে ধরে একটি গ্রাম্য ভাবকে যা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।

লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।

জেএমএস/এমএস